চলছে খরিফ মরসুম। আর এই মরসুমে প্রধান শস্যের পাশাপাশি ফল চাষেও মন দিয়েছেন কৃষকরা। ফলবাগান হল কৃষি অর্থনীতির লাভজনক পথের দিশারী। সারাবছর ধরে পেয়ারা, কলা, পেঁপে, নারকেল, লেবু আর মরশুমে ফলের রাজা আম, রসনাতৃপ্ত করা লিচু, আনারস, জাম, জামরুল, সবেদা ইত্যাদি নানা ফলের পুষ্টিকর আবার লাভজনক ফসল সম্ভার পশ্চিমবঙ্গের কৃষি বৈচিত্র্যে উপস্থিত।
উদ্যানপালন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে এখন বিদেশি আপেলকুল, টিসুকালচার কলা ও মোম জামরুল ইত্যাদি বেশ চড়া লাভের আকর্ষণীয় ও অসময়ের ফল ও বাগিচা ফসলের মানচিত্রে নতুন দিগন্ত খুলেছে।
ফলচাষে বর্তমানে চাষিদের আগ্রহের একটি প্রধান কারণ হল প্রথাগত ফসল ও সবজির তুলনায় মরশুম ভিত্তিক পরিচর্যা। আর ফলস্বরূপ অন্যান্য ফসলের সমসাময়িক দেখভালের সময় বাঁচে আর শ্রম খরচেও সাশ্রয় হয়। তবে তেমন সুবিধা থাকা সত্তেও পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ ফলচাষির বাগান থেকে আশানুরূপ ফলন ওঠে না। এরজন্য অনেকগুলি কারণ দায়ী হলেও, অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হল –
-
প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষ ও বড় আকারের গাছের বাগান (বিশেষত আম ও লিচু)।
-
রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণের বেঠিক ও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
আম, লিচু, নারকেলের ব্যবসায়িক ফলবাগানে সার তো নিয়মমতো পড়ে তবে বড় গাছে আর যাই হোক রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঠিকমতো স্প্রে চাষিরা করে উঠতে পারেন না। খোলা মাঠের সবজি, ধান বা ডালশস্যের সাধারণ স্প্রে যন্ত্র যেমন ন্যাপসাক স্প্রেয়ার বা হ্যান্ড কম্প্রেশন স্প্রেয়ারে কাজ হয়, যা আবার বড় ফল গাছে (আম, লিচু, নারকেল, কাঁঠাল) বা বড় বেড়ের (ডালপালা পরিধি যুক্ত) পেয়ারা, সবেদা, কুল, লেবু গাছে একেবারেই অনুপযুক্ত। চাষিরা কিন্তু একই স্প্রেয়ার ব্যবহার করেন। আর তার ফলে কীট বা রোগনাশক বা পরিচর্যার হর্মোন ইত্যাদি ব্যবহার হলেও তার কোন কাজও হয় না। রোগপোকা তো নিয়ন্ত্রণ হয়ই না, শুধু শুধুই চাষের খরচ বাড়ে।
ফলবাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহারের জন্য আমাদের চাষিভাইদের উপযোগি প্রযুক্তির আলোচনা করলাম। ফলবাগানে স্প্রে যন্ত্র ব্যবহারের আগে চাষিভাই বোনেদের বেশ কিছু বিষয় চিন্তাভাবনা করে স্প্রেয়ার কেনা দরকার। মনে রাখবেন, আপনার ফলবাগান হল দীর্ঘস্থায়ী লাভের বিনিয়োগ। অনেকটা ফিক্সড ডিপোজিট বা মান্থলি ইনকাম যোজনার মতো। আপনার কেনা মেশিনটিও কিন্তু সুষ্ঠুভাবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য।
ফলবাগানে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্প্রেয়ার কিনতে যাওয়ার সময় দেখার বিষয় :
-
লম্বা ও বড় গাছে স্প্রে দেবার সুবিধা।
-
বাগানের আয়তন, গড় ফলন ও বছরে উৎপাদন। ভালোভাবে ওষুধ স্প্রে করার কার্যকারিতা।
-
সার্ভিসের সুবিধা ও আপনার নিকটবর্তী শহরে স্পেয়ার পার্টসের উপলব্ধতা ব্যবসায়িক ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে।
এসব বিষয়গুলি চিন্তাভাবনা আগে থেকে করলে ফলচাষি বা ফলবাগান লিজ নেওয়া ব্যবসায়িদের পক্ষে বাগানের ফল ফসলের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের যথোপযুক্ত কৃষিযন্ত্র কেনা সম্ভব।
আরও পড়ুন -Paddy Disease Management - ধানের রোগবালাই সনাক্তকরণ ও তার ব্যবস্থাপনা
মাঠের ফসলের ক্ষেত্রে হ্যান্ড ন্যাপসাক স্প্রে আর এরই উন্নত সংস্করণ হাইটেক স্প্রেয়ারই বেশি চলে। এগুলির কার্যপ্রণালী হাতের মাধ্যমে হওয়ায় চারা তৈরি করে স্প্রে নির্গমনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এধরণের স্প্রেয়ারগুলি ব্যটারি ইলেক্ট্রিক বা জ্বালানি দেওয়া মোটরের মাধ্যমে চালানোর মত যন্ত্র ব্যবস্থাও আছে যাতে অল্প সময়ে বেশি জায়গায় সূক্ষতার সঙ্গে দ্রবণ ছড়ানো সম্ভব।
তবে যে সমস্ত চাষিভাই বোনেরা এধরণের স্প্রেয়ারগুলি দিয়ে ফলগাছ স্প্রে দেবেন, তারা আশানুরূপ ফল পাবেন না। ছোট ফলগাছ যেমন আনারস, কলা, পেঁপে গাছে একধরণের স্প্রেয়ারগুলি দিয়ে শস্যসুরক্ষা সম্ভব হলেও আম, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, নারকেল ইত্যাদি অধিকাংশ ফলগাছে বা বাগানে এগুলি অনুপযুক্ত। ফলে আমাদের উঁচু ফলগাছের চারিদিকে সমানভাবে শস্যসুরক্ষার স্প্রে দিতে হলে অন্য ধরণের স্প্রেয়ার বেছে নিতে হবে।
তথ্যসূত্র - ড: শুভদীপ নাথ
আরও পড়ুন - Cardamom Farming - কম খরচে এলাচ চাষ করে আয় করুন অধিক অর্থ