শসা একটি মরশুমি চাষ। সাধারণত প্রায় সারা বছরই শসা চাষ করা যায় | মাচায় ঝোলা শসার বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। লাউ প্রজাতির এই ফসলটি খুবই উপকারী। এখন সারা বছরই বাজারে শসা পাওয়া যায়। বেশিরভাগ কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি শসা চাষের (cucumber cultivation) দিকেও ঝুঁকছেন | এই শসা চাষে কৃষকদের আর্থিক লাভের পরিমানও অনেক বেশি |
মাটি ও জলবায়ু (Soil and climate):
শসা চাষের জন্য উর্বর দো-আঁশ মাটি উপযোগী। এছাড়া অম্লক্ষারত্ব ৫.৫-৬.৮ হওয়া ভালো। শসা সারা বছর হলেও ২৫-৩০ সেঃ গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভালো জন্মায়। অধিক তাপমাত্রা, দীর্ঘ প্রখর রোদে বেশি পুরুষ ফুল উৎপন্ন হয়। বিপরীত অবস্থায় স্ত্রী ফুল আগাম আসে ও বাশি স্ত্রী ফুল ফোটে।
জাত:
বাজারে বিভিন্ন জাতের শসার বীজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কান্দি এলাকায় মূলত দু’টি জাতের চাষ বেশি হয়। মাচা শসা ও জমির শসা। আর হাইব্রিড প্রজাতির শসাও এখন কান্দি ব্লকে চাষ হচ্ছে। তবে তা খুবই কম।
বীজ বোনার সময়:
শসা মূলত গ্রীষ্মকালের ফসল। ধান চাষের পরেই সেই জমিতেই শসার চাষ করা হয়। সাধারণত, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ধান তুলে নেওয়ার পরেই শসার বীজ ছড়িয়ে দিয়ে থান তৈরি করে এই চাষ করা হয়। বীজ থেকে চারা বের হওয়ার পর মূলত মাটি আলগা করা এবং ঘাস পরিষ্কার করা হয় । ছোট ছোট বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে মাচা এই চাষের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বীজের হার:
শসার বীজ বপনের জন্য হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বা শতক প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজ লাগে।
চারা উৎপাদন:
বীজ তলায় শসার চারা তৈরী করে জমিতে লাগানো যায়। শসার বীজ জমিতে বেড তৈরি করে বা পলিথিনের ছোট প্যাকেটে বপন করা যায়। যেভাবেই চারা উৎপাদন করা হোক না কেন আগে মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে। ভালো জাতের বীজ বপনের আগে ১৫-২০ ঘণ্টা পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখলে বীজের খোসা নরম হয় ও ভালো গজায়। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ পুঁতে দিতে হবে। তবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে নেওয়াই ভালো। পলিব্যাগে চারা তৈরির ক্ষেত্রে অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক মাটি ৬x৮ ইঞ্চি সাইজের পলিব্যাগে ভরতে হবে। এরপর উক্ত মাটি দ্বারা পলিব্যাগ ভরতে হবে। পলিব্যাগের মাটি ভরাট করে উপরে ছাউনি দিয়ে রেখে দিতে হবে যাতে রোদ, বৃষ্টি না লাগে। মাঝে মাঝে পলিব্যাগের মধ্যে ঝাঁঝরি দিয়ে জল সেচ দিয়ে পলিব্যাগের মাটি ভিজিয়ে জো আনতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। চারা বের হওয়ার পর গাছে ৩-৪ টি পাতা হলে প্রতি পলিব্যাগে একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
শসা চাষের জন্য মূলত তেমন খুব একটা সারের কোনও প্রয়োজন হয় না। ধান চাষের পর জমিতে যে রাসায়নিক ও জৈবিক সার পড়ে থাকে মূলত ওই সার দিয়েই শসার ফলন সম্ভব। এছাড়া, একান্ত প্রয়োজনে কম-বেশি জৈবিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ছড়ানো বীজ থেকে শসার চারা জন্মানোর ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কিছু জৈবিক সার দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, কিছু সার মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়। মাটিতে অনুখাদ্য ৩ থেকে ৪ টি ফসলের জন্য ১ বার প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট। প্রয়োজনে ১.৫ মাসের মাথায় কিছুটা রাসায়নিক সার দেওয়া যেতে পারে।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
ডাউনি মিলডিউ শসার সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ। এ রোগ হলে পাতার নিচে প্রথমে জলবসা গোল গোল দাগ পড়ে। পরে দাগগুলো শুকিয়ে বাদামি হয় ও ওপরে উঠে আসে। শেষে পুরো পাতাই শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। ফলের মাছি কচি শসা নষ্ট করে। ফলের মাছি পোকা নিয়ন্ত্রনের জন্য জমিতে বিষ টোপ বা ফেরোমোন ফাঁদ পাততে হবে। কৃমিজনিত শিকড়ে গিঁট শসার একটি ক্ষতিকর রোগ। এ রোগ হলে শসা গাছ কম বাড়ে, শিকড়ে গিঁট হয়। প্রতি মাদায় ২ চা চামচ ফুরাডান ৫ জি কীটনাশক দিয়ে এই রোগ কমানো যায়।
Kharif Crop - আগত খারিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার করবেন কীভাবে?
ফসল সংগ্রহ:
হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ২০ টন অর্থাৎ শতক প্রতি ৪০ থেকে ৮০ কেজি শসা তোলা যায়। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের শসা তুলতে হবে | শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বাড়ির টবে সহজ পদ্ধতিতে করুন রসুন চাষ