করোনাকে প্রতিহত করতে লকডাউন পিরিয়ডকে সফল করতে বদ্ধপরিকর সরকার থেকে আম আদমি৷ চলতি লকডাউনেই বদলে গিয়েছে সকলের জীবনযাত্রা৷ জীবিকা থেকে খাওয়াদাওয়া সবেতেই এসেছে পরিবর্তন৷ এই পরিস্থিতির মধ্যে মন ভালো এবং শরীর সুস্থ রাখার চেষ্টায় সকলেই৷ আর এই দুটো বিষয় ঠিক রাখতে অনেকে অনেক পদ্ধতিও অবলম্বন করছেন৷ যার মধ্যে অন্যতম বাড়িতে সবজি চাষ৷
হ্যাঁ, যাদের গার্ডেনিং-এর শখ রয়েছে, তাদের তালিকাতে যেমন এই বিষয়টি রয়েছে, তেমনই অন্যরাও এই কাজটি চেষ্টা করতে পারেন৷ মন ভালো থাকার সাথে সাথে প্রয়োজন হলে সবজিগুলি নিজের বাড়ি থেকেই পেয়ে যাবেন, লকডাউন অমান্য করে বাইরে যেতে হবে না৷ খুব সহজে বাড়িতেই ফলানো যাবে এমন কয়েকটি সবজির হদিশ রইল এখানে-
টমেটো- বাড়িতে টবে সহজেই ফলাতে পারবেন টমেটো৷ এর নিয়মিত জল এবং পর্যাপ্ত আলো প্রয়োজন৷ গাছে নিয়মিত জল দিতে হবে। টমেটোর বীজ এক ইঞ্চি লম্বা হলে তা টবে দিন। তবে একটি টবে একটি গাছই করবেন৷ এর জন্য সাধারণত গোবর সার, সবজির খোসা, ডিমের খোসা এসব দেওয়া হয়, কেউ কেউ ইউরিয়াও ব্যবহার করেন৷
শসা- মূলত গ্রীষ্মকালের ফসল৷ সারাবছরই আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এটি৷ দোআঁশ মাটি শসা চাষের জন্য ভালো৷ বীজ থেকে চারা তৈরির সময় প্রথমে বীজগুলোকে ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পাশাপাশি একটি বীজতলা তৈরি করতে হবে। সম্ভব হলে ৬:৪ অনুপাতে দোআঁশ এবং শুকনো গোবর ও একটু ছাই মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করুন। ভেজানো বীজ এতে বসিয়ে সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। রোজ একটু একটু করে জল ছিটিয়ে দেবেন তার ওপর৷ কয়েকদিনের মধ্যেই চারা বের হবে৷
ক্যাপসিকাম- সমগ্র বিশ্বে ক্যাপসিকাম খুবই জনপ্রিয়। এটি বাড়ির ছাদে টবের মধ্যেই চাষ করা সম্ভব৷ ক্যাপসিকাম প্রায় সব ধরণের মাটিতেই হয় এবং এটি চাষে ঝামেলা কম হওয়ায় অনেকেই এটি বাড়িতে ফলান৷ মনে রাখতে হবে এই চাষে প্রচুর পরিমাণ রোদ-আলো প্রয়োজন তাই কোনওভাবে এটি ছায়াতে রাখা যাবে না। রোজ নিয়ম করে জল দিতে হবে যেন টবের মাটি শুকিয়ে না যায়৷ গাছ যাতে ক্যাপসিকামের ভারে পড়ে না যায় তাই প্রয়োজনে খুঁটি দিন৷ মনে রাখবেন, চারা রোপনের ২০ দিন পর পর এক চামচ করে ইউরিয়া সার এতে দিতে হবে৷
পেঁয়াজ- রান্নায় হোক বা কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে হোক পেঁয়াজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ওতোপ্রোতভাবে৷ তাই আপনি চাইলে এটি বাড়িতেও চাষ করতে পারেন৷ বাড়িতে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রয়োজন একটি মাঝারি আকারের টব। টবে বেলে ও দোআঁশ মাটি মিশিয়ে ভরতি করে নিন। পেঁয়াজের মুখ ও পিছনের অংশ সামান্য কেটে তা বসিয়ে দিন টবে৷ তবে শিকড় বেরোনো পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তা করতে হবে না। এবার টবে মাটির মধ্যে ওই পেঁয়াজ ঢুকিয়ে দিন। এরপর একটু একটু করে জল ছিটিয়ে দিন এবং টবটি সূর্যের আলো পাবে এমন স্থানে রেখে দিন৷ মোটামুটি এক সপ্তাহ পরে দেখবেন ওই টব থেকে পেঁয়াজ থেকে পাতা বেরিয়েছে।
লেবু- বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিটামিন সি বেশি করে খেতে বলা হচ্ছে৷ আর সকলেই জানেন লেবুর ঔষধি গুণ সম্পর্কে, সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ, ওজন নিয়ন্ত্রণেও লেবুর রসের জুড়ি মেলা ভার৷ আর লেবু কিন্তু বাড়িতে সহজেই ফলানো সম্ভব৷ বছরের যে কোনও সময়েই লেবু চাষ করা যায়, তবে সবথেকে ভালো সময় হল বৈশাখ থেকে আশ্বিন৷ যদি ভালো মানের লেবু গাছের চারা থাকে, তা দিয়ে একটা গাছ থেকেই অনেক বেশি পরিমাণ লেবু পেতে পারেন আপনি৷ মনে রাখবেন, লেবু চাষে বেশি জল প্রয়োজন হয় না, তাই গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে৷
সবজি সংগ্রহ- মনে রাখবেন শুধু চাষই নয়, সময় মতো সবজি সংগ্রহ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নরম থাকতেই থাকতেই তুলে খাওয়া ভালো। তবে সবজি গাছ থেকে ছিঁড়ে নেবেন না, তা আস্তে করে কেটে নিতে হবে। এতে গাছে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে৷
টবে সবজি চাষের সুবিধা- টবে সবজি চাষ করার কিছু সুবিধা রয়েছে৷ যেমন ঝড়-জলের হাত থেকে সবজিকে রক্ষা করতে পারবেন৷ বাড়ির সরঞ্জাম দিয়ে চাষাবাদে খরচ কম হয়৷ ইচ্ছে মতো সবজি পরিবর্তন করে চাষ করা যায়৷ সংক্রমণের হাত থেকে সহজেই সবজিগুলি রক্ষা করা সম্ভবপর হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে এটি বাড়ির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে প্রয়োজনে আর বাজারে যেতে হয় না, বাড়ি থেকেই কিছুটা সবজি নিয়ে নিতে পারেন৷