'রাক্ষুসে মাছ'-বিপদ কোথায়? 'MFOI, VVIF কিষাণ ভারত যাত্রা' গুজরাটের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে কৃষকদের সম্মানিত করেছে কাঁচা আম খেলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ হবে এবং এই সমস্যাগুলো দূর হবে!
Updated on: 2 April, 2020 10:34 PM IST

পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের ভুট্টার চাষ হয়, যেমন- পপকর্ন, সুইটকর্ন, বেবীকর্ন, হাইব্রিড ভুট্টা প্রভৃতি। এদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। পুড়িয়ে খাওয়ার ভুট্টা, আটা হিসাবে ব্যবহারের ভুট্টা বা পশু ও পোলট্রি খাদ্য হিসাবে ব্যবহার্য ভুট্টার জাত যেমন নির্দিষ্ট, তেমনি বেবীকর্ন বা মিষ্টি ভুট্টা তরকারীতে বা স্যুপ হিসাবে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট। আবার কর্ন অয়েল, গো-খাদ্য প্রভৃতির জন্য আলাদা আলাদা ভুট্টার জাত আছে। বর্তমানে বেবীকর্ন জাতীয় ভুট্টা খাদ্য হিসাবে বাঙালীর হেঁসেলে নিঃশব্দে জায়গা করে নিয়েছে। এ রাজ্যের বড় বড় শহরের বাজারগুলিতে বেবীকর্নের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বেবীকর্নের যোগান অপ্রতুল। বেবীকর্ন চাষে যথেষ্ট লাভের সম্ভবনা আছে, যা এ রাজ্যের দরিদ্র চাষীদের অর্থকরী উন্নতির পথ দেখাতে পারে

বেবীকর্ন চাষ –

ঋতু – বেবীকর্ন স্বল্পমেয়াদী ফসল, যে কোন ঋতুতে চাষের উপযোগী। বেবীকর্ন বর্ষায় উঁচু জমিতে চাষ করা বিধেয়। কৃষক বিভিন্ন ফসলের চাষের পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, যে কোন ঋতুতে জল দাঁড়ায় না এমন জমিতে বেবীকর্ন চাষ করতে পারেন

জমি নির্বাচন – বেলে থেকে এঁটেল সকল ধরণের মাটিতেই বেবীকর্ন চাষ করা যেতে পারে। উর্বর দোঁয়াশ মাটি বেবীকর্ন চাষের পক্ষে আদর্শ। বেবীকর্ন চাষের জমিতে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।

জমি তৈরী – বেশ কয়েকবার গভীর চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে মাটি তৈরী করতে হবে। জমি তৈরীর সময় বিঘে প্রতি ১০০০-১৫০০ কেজি ভালোভাবে পচানো জৈব সার প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাবে। উইপোকা বা সাদা পিঁপড়ের উপদ্রব থাকলে শেষ চাষের সময়ে বিঘে প্রতি মিথাইল প্যারাথিয়ন বা ৪ কেজি হারে ক্লোরোপাইরিফস মিশিয়ে দিতে হবে।

জাত নির্বাচন – যে কোন ফসল চাষে ভালো ফলন পেতে হলে জাত নির্বাচন ও উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেবীকর্ন চাষে বিভিন্ন উন্নত জাত পাওয়া যায়। যেমন – পুষা আরলি হাইব্রিড মেজ ৩, পুষা আরলি হাইব্রিড মেজ ৪, পুষা আরলি হাইব্রিড মেজ ৫, প্রকাশ, বিবেক হাইব্রিড ৯, এইচ এম ৪ প্রভৃতি। এই জাতগুলি থেকে কৃষক ৩-৪ বার ফসল তুলতে পারবেন। এখানে বর্ণিত জাতগুলিতে প্রাক খরিফ ও খরিফ খন্দে ৪০-৫০ দিনে ও রবি খন্দে ৭৫-৮০ দিনে স্ত্রী ফুলে রেশম দেখা যায়। প্রতিটি জাতই মাঝারি উচ্চতার হলেও জোরে হাওয়ায় পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম। এই জাতগুলির পাতা খাড়া এবং ফসল কাটার সময়ও গাছের রঙ সবুজ থাকে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য বেবীকর্ন তুলে নেওয়ার পর গাছগুলি গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়

বেবীকর্নের জাতের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য –

১) সিঙ্গল ক্রস হাইব্রিড উচ্চফলনশীল স্বল্পমেয়াদী জাতী (রেশম আসতে খরিফে ৪০-৫০ দিন ও রবিতে ৭৫-৮০ দিন) হতে হবে

২) মোচা তোলার সময় খরিফে ১০-১২ দিন ও রবিতে ২০ দিনের মধ্যে হতে হবে

৩) অবশ্যই জাতগুলির পাতা খাড়া, উচ্চতা মাঝারি ও শক্ত কাণ্ডযুক্ত হতে হবে

৪) গাছে মোচার সংখ্যা দুই-এর অধিক হবে

৫) খোসা ছাড়ানো বেবীকর্নগুলির মাপ কখনই লম্বায় ১০ সেমি. ও পরিধিতে ১-.৫ সেমি.- এর বেশী হবে না

বীজের হার – সাধারণত বেবীকর্ন চাষে বিঘে প্রতি ২.৬০০-৩ কেজি হারে বীজ লাগে। বীজের আকারের তার‍তম্যে বীজের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে

বীজ শোধন – দুর্বল গাছ ভালো ফলনের প্রধান অন্তরায়। তাই চাষের শুরুতে বীজ শোধন করা বাঞ্ছনীয়। প্রতি কেজি বীজের জন্য ব্যভিষ্টিন ও ক্যাপটান ১:১ অনুপাতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে বা ৪ গ্রাম থাইরাম দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। অথবা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি বা ট্রাইকোডার্মা হার্জিয়ানাম ৫ গ্রাম ও সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে এক সঙ্গে মিশিয়ে সেই জলে বীজ এক ঘণ্টা ভিজিয়ে, ছায়ায় শুকিয়ে শোধন করতে হবে। অন্যথায় ঐ দুই বীজের সাথে ছত্রাকনাশক ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে বীজ বপন করতে হবে।

চাষের পদ্ধতি – বোনা বা চারাতলায় চারা তৈরী করে উপযুক্ত সময়ে রোয়া করা যেতে পারে। খুব ঠাণ্ডায় রবি খন্দে চারাতলায় চারা তৈরী করে রোয়া আদর্শ।

দূরত্ব – একটি গাছ থেকে অপর গাছ ১৫-২০ সেমি. এবং এক সারি থেকে অপর সারি ৬০ সেমি. দূরত্বে রোপণ করা আদর্শ। দুটি সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৬০ সেমি. –এর কম হলে পুরুষ ফুল বা ঝুড়ি তোলা, বেবীকর্ন তোলা, ফসলের পরিচর্যা ইত্যাদি কার্যে সমস্যা হবে। তবে জাত বিশেষে ১৫*৪৫ সেমি. দূরত্ব রাখা যেতে পারে

সার প্রয়োগ – জমি তৈরীর সময় অবশ্যই বিঘে প্রতি ১০০০-১৫০০ কেজি জৈব সার দিতে হবে। রাসায়নিক সার হিসাবে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাশ ও জিঙ্ক সালফেট, ১৬:::৩ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে

বিঘে প্রতি মূল সার প্রয়োগে নাইট্রোজেন ১.৬ কেজি (ইউরিয়া ৩.২৮ কেজি), ফসফেট ৮ কেজি (সিঙ্গল সুপার ফসফেট ৫৮ কেজি), পটাশ ৮ কেজি (মিউরেট অফ পটাশ ৫৮ কেজি), জিঙ্ক সালফেট ৩ কেজি (জিঙ্ক সালফেট ৩.২৮ কেজি) ব্যবহার করা হয়

আগাছা পরিষ্কার – বীজ বোনার আগে বিঘে প্রতি ২০০ গ্রাম অ্যাট্রাজিন ৭০-৮০ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তীকালে প্রয়োজনে আলাদাভাবে লোক নিয়োগ করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। যদি কোন আগাছার ওষুধ প্রয়োগ না করা হয়ে থাকে, তাহলে বীজ বোনার ২৫ দিনের মাথায় এবং তৃতীয় ও শেষবারে আগাছা পরিষ্কার বীজ বোনার ৮০-৮৫ দিনের মাথায় পুরুষ ফুল বা ঝুড়ি তোলার সময়ে করা বাঞ্ছনীয়

গাছের উচ্চতা হাঁটু সমান হলে গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। এতে সেচ ও জল নিকাশের সুবিধা হয়, গাছ হেলে পড়ে না এবং মাটি আঁকড়ে ধরে থাকে

সেচ – বেবীকর্ন স্বল্পমেয়াদী ফসল, তাই সেচ ২-৩ বারের বেশী প্রয়োজন হয় না। চারা অবস্থায়, গাছের হাঁটু সমান উচ্চতায় এবং ফুল আসার সময়ে মাটি আদ্র না থাকলে ফসল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে

সাথী ফসল – বেবীকর্নের সাথে সাথী ফসল হিসাবে প্রায় ২০ ধরণের ফসল চাষ করা যায়। এর মধ্যে আলু, কড়াইশুঁটি, পালং, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস, গাজর, বীন, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি বেবীকর্নের সাথে সাথী ফসল হিসাবে চাষ লাভজনক

ঝুড়ি তোলা – ঝুড়ি তোলা বেবীকর্ন চাষের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জাত বিশেষে পুরুষ ফুল বা ঝুড়ি তুলে ফেলতে হবে। উচ্চ মানের বেবীকর্নের মোচা পেতে হলে সময়ে ঝুড়ি তোলা প্রয়োজন। গাছ থেকে তোলা ঝুড়ি গরু, ছাগল প্রভৃতি প্রাণীকে খাওয়ানো যেতে পারে

বেবীকর্নের মোচা তোলা – বেবীকর্নের মোচা থেকে রেশম বেরিয়ে আসার তিন দিনের মধ্যে গাছ থেকে তুলে ফেলতে হবে।সাধারণত বীজ বোনার ৫০-৫৫ দিনে মোচার রেশম বেরনোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে মোচা তুলে ফেলা বাঞ্ছনীয়। রেশমের দৈর্ঘ্য ২ সেমি.-এর বেশী হলে বেবীকর্নের মান খারাপ হবে। খরিফ খন্দে রোজ এবং রবি খন্দে এক দিন অন্তর মোচা তুলতে হবে। মোচা তোলার আদর্শ সময় হল সকালে হালকা ঠাণ্ডার সময়। উন্নত মানের হাইব্রিড জাতের প্রতিটি গাছ থেকে ৪-৫ বার করে মোচা তোলা যায়। প্রতিটি বেবীকর্ন ৮-১০ সেমি. লম্বা, -.৫ সেমি. পরিধি যুক্ত এবং ৭-৮ গ্রাম ওজনের হার থাকে

বেবীকর্নের উৎকর্ষতা – ফসল তোলার পর উৎকৃষ্ট বেবীকর্ন বাছাই করার সময়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে

১) বেবীকর্নের মাপ, আকার ও রঙ যেন একই প্রকারের হয়

২) বেবীকর্নের রঙ ঘিয়ে থেকে হালকা হলুদ হওয়া বাঞ্ছনীয়

৩) বেবীকর্নের গায়ে যেন কোন আঘাতের চিহ্ন না থাকে এবং খোসা পরিষ্কারভাবে মুক্ত করা থাকে

৪) বেবীকর্নগুলি অবশ্যই তাজা, পচন মুক্ত, উপযুক্ত আদ্রতা বিশিষ্ট হতে হবে এবং সঠিক সময়ে যেন তোলা হয়ে থাকে

৫) ডিম্বকের সজ্জা সারি অবশ্যই সোজা হতে হবে

গো-খাদ্যবেবীকর্ন চাষে পুরুষ ফুলের ঝুড়ি, মোচা তোলার পর সবুজ গাছ, মোচার ছাড়ানো খোসা প্রভৃতি গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার বা বিক্রি করা যেতে পারে

ফলন – এই চাষ থেকে বিঘে প্রতি ২০০-২৫০ কেজি বেবীকর্ন পাওয়া যায়। এছাড়া অবশিষ্ট হিসাবে ২৬০০-৫৫০০ কেজি সবুজ গাছ গো-খাদ্য রূপে পাওয়া যাবে

বেবীকর্ন চাষের একরে লাভ খরচ –

চাষের খরচ – ১৩,০০০/-

বেবীকর্ন উৎপাদন (কেজি) – ,০০০

উৎপন্ন বেবীকর্নের মূল্য -  ২০,০০০/-

উৎপন্ন গো-খাদ্য (কেজি) – ১৪,০০০

উৎপন্ন গো-খাদ্যের মূল্য,২০০/-

বেবীকর্ন চাষে লাভ – ১১,২০০/-

স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)

প্রবন্ধ লেখক - ইকবাল দরগাই

English Summary: Earn more by cultivating Baby corn in scientific method
Published on: 02 April 2020, 10:34 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)