গোলাপ ফুলের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরের একটি বাজার রয়েছে কারণ এটি বিবাহ, পার্টি, জানাজা ইত্যাদি যে কোনও অনুষ্ঠানে এবং মুক্ত ফুল রূপেও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। গোলাপ- গোলাপ জল, গুলকন্দ, তেল এবং সুগন্ধী তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। প্রধান গোলাপ চাষের রাজ্য হ'ল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক।
এবার জেনে নিন বাড়ির টবে কীভাবে গোলাপ চাষ করবেন -
মাটি তৈরি (Soil Preparation) –
১ ভাগ দোঁয়াশ মাটি, ৩ ভাগ গোবর সার বা ভার্মিকম্পোস্ট সার, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১/২ ভাগ বালি, ১ চামচ ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও হাড় গুঁড়ো মিশিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করুন। হাড় গুঁড়ো শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি গাছকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।ড়ির বাগানে অল্পবিস্তর তরতাজা গোলাপগুলি ফুটে থাকলে বগানের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। শীতের মরশুমে শহরে বা গ্রামে সকলেই চান বাড়ির বাগানে, ছাদে বা ব্যালকনিতে নানান রঙের গোলাপ ফুল বাগানের শোভা বৃদ্ধি করুক। তাই টবে গোলাপ গাছ করতে নিচের ব্যবস্থাপনাগুলি নিন।
টবের আকার –
গোলাপের জাতের উপর নির্ভর করে ৮ ইঞ্চি বা ১২ ইঞ্চি টব ব্যবহার করতে হবে। প্রথমবার যে টবে গাছ লাগানো হবে পরের বছর তার থেকে একটু বড় টবে স্থানান্তর করলে বেশি ফুল পাওয়া যায়।
চারা রোপন (Planting seedlings) –
টবের নিচে ছোট নুড়ি ও হাড়ি ভাঙা টুকরো দিতে হবে। এরপর মোটা বালির একটি পাতলা স্তর দিয়ে সারমাটির মিশ্রণ টবে ভরতে হবে। চারা রোপনের সময় শিকড় মাটি দিয়ে ভালো করে চাপা দিতে হবে। টবের মাথা থেকে ২ ইঞ্চি ফাঁকা রাখা ভালো এতে গাছে জল দেওয়া ও পরিচর্যায় সুবিধা হবে।
সার প্রয়োগ –
জৈবসার যেমন গোবর সার, পাতা পচা সার, হাড়গুঁড়ো, সরষে খৈল, মহুয়া খৈল, কেঁচো সার ইত্যাদি সারের মধ্যে ভিটামিন, উৎসেচক ও অ্যান্টিবায়োটিক থাকে যা গোলাপের ফলন বৃদ্ধি করে। প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য বানিজ্যিক সার যেমন রোজমিক্স, রোজ স্পেশাল, টোপাজ প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পরিচর্যা –
টবের গোলাপে প্রতিদিনই অল্প জল দিতে হবে। যদি উপরের মাটি দীর্ঘদিন ভেজা থাকে, গাছের পাতা হাল্কা হলুদ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে টবের নিচে জল জমে থাকতে পারে। তখন পাতলা শিক দিয়ে টবের নীচের ফুটোটি পরিষ্কার করে দিতে হবে।
-
ফুল হয়ে যাওয়া, রুগ্ন বা মৃত শাখাগুলি ছেঁটে দিতে হবে।
-
গরমকালে গোলাপ গাছে কোন জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে নেই।
-
গাছে ফুল ফোটার সময় কোন সার প্রয়োগ করা যাবে না।
-
ফুল ফোটার এক মাস পরে গোবর সার ও কেঁচোসার প্রয়োগ করা উচিত।
আরও পড়ুন - বাড়ির বাগানেই করুন লাভজনকভাবে ভুট্টা চাষ (Maize Cultivation)
গোলাপের রোগ পোকা –
(১) সাদা গুঁড়ো :
কচি পাতা ও শাখাতে সাদা পাউডারের মতো গুঁড়ো দেখা যায়, ফুল হয় না কুঁড়ি ঝরে পড়ে।
প্রতিকার :
ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
(২) ডাইব্যাক :
ডাল ছাঁটাইয়ের পর শাখাগুলিতে ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ হয়। শাখগুলি শুকাতে শুরু করে এমনকি গোটা গাছটিও মরে যেতে পারে।
প্রতিকার :
ডাল ছাঁটাইয়ের পর শাখাগুলিতে কপার অক্সিক্লোরাইডের পেস্ট লাগিয়ে দিন। অথবা, ডাইফেনকোনাজল ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
(৩) লাল আঁশ পোকা –
শাখাগুলির উপর বাদামী রঙের আবরণ তৈরী হয়, যার নীচে পোকাগুলি থাকে। পোকাগুলি গাছের রস শুষে খাওয়ায় গাছ শুকিয়ে যায়, মরেও যেতে পারে।
প্রতিকার :
অ্যাসিটেমাপ্রিড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
(৪) লাল মাকড় –
পাতার নীচে মাকড়শার জাল তৈরী হয়, পাতা বিবর্ণ হয়ে কুঁকড়ে যায় ও শেষে শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার :
স্পাইরোমেসিফেন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
(৫) জাব ও চসী পোকা –
এটি পাতা ও কুঁড়ির রস শুষে খায়। আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায়। কুঁড়ি থেকে ফুল হয় না।
প্রতিকার :
জাব ও চসী পোকার ক্ষেত্রে লাল আঁশ পোকার প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন - উপযুক্ত জমি প্রস্তুত এর মাধ্যমে পুঁই শাক চাষের পদ্ধতি (Malabar Spinach Farming)