নাশপাতি গাছ (Pear Fruit Farming) একটি সম্ভাবনাময় বিদেশি ও শীত অঞ্চলের ফল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে নাশপাতি ফল চাষ করা হয়। আমাদের দেশে পাহাড়ি ঢালু স্থানে এবং বসতবাড়ির ঢালু স্থানে নাশপাতির চাষ করা যায়।
নিম্নে নাশপাতির চাষ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
নাশপাতি চাষ পদ্ধতি (Pear fruit cultivation method) -
নাশপাতি চাষের জন্য উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। আমাদের দেশে পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চলে অতি সীমিত আকারে নাশপাতির চাষ করা হচ্ছে। কুঁড়ি সংযোজনের দ্বারা নাশপাতির বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়া গুটি কলমের মাধ্যেম নাশপাতি বংশ বিস্তার করা যায়।
নাশপতির চারা রোপণ -
নাশপাতির কলম বাঁধার সঠিক সময় এপ্রিল-মে মাস। এরপর কলম কেটে জুলাই-আগষ্ট মাস রোপণ করার জন্য উপযোগী। নাশপাতি চাষের জন্য ৪-৬ মিটার দূরত্বে গাছ রোপণ করতে হবে।
সার দেওয়ার পদ্ধতি -
জৈব সার নাশপাতি গাছের জন্য উত্তম। এছাড়াও অন্য যেসব সার দিতে হবে নিম্নে উল্লেখ করা হল:
গোবর-১৫ কেজি, খৈল-১ কেজি, টিএসপি-৫০০-৬০০ গ্রাম, এমপি-১৫০-২০০ গ্রাম - এই উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি গর্ত করে পচাতে হবে। তাই গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার দিতে হবে। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী গাছে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। বয়স্ক ও ফলন্ত গাছে বর্ষা মৌসুমের আগে এবং পরে মধ্য জৈষ্ঠ্য এবং আশ্বিনের শেষে পচা গোবর ৩০ কেজি, খৈল ২ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, এবং টিএসপি ৪০০ গ্রাম দিলে ভাল হবে।
নাশপতি চাষে সেচ ও নিষ্কাশন -
চারা রোপনের পর ঝরনা দিয়ে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত সেচ দিতে হবে, সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে জল জমতে না পারে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডাল ছাটাইকরণ -
গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সে.মি. হলে ডগা ভেঙে দিতে হবে। পরের বছর পার্শ্ব শাখা ২০-২৫ সে.মি. রেখে কেটে দিতে হবে। গাছ্র গোড়ার দিকে পোষক শাখা বের হলে কেটে ফেলতে হবে। গাছ বড় হলে ডালগুলো ভূমির দিকে বাঁকা করে দিলে বেশী ফলন পাওয়া যায়।
ডাল নুইয়ে দেওয়া -
নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা ও ফল কম হয়। এ জন্য খাড়া ডাল ওজন অথবা টানার সাহায্যে নুইয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন -
নাশপাতিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা গেলে উপযুক্ত কীটনাশক/ ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Bottle Gourd Farming - বাড়ির ছাদে কীভাবে লাউ চাষ করে অর্থ উপার্জন করবেন, দেখে নিন সহজ পদ্ধতি
নাশপতি সংগ্রহ -
কলমের গাছ রোপনের ২ থেকে ৩ বছর পর থেকেই ফল দেয়। মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে এবং জুলাই আগস্ট মাসে ফল পরিপক্ব হয়। বয়স্ক গাছে বার্ষিক গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টির মতো ফল ধরে।
পাইরাস কমুনিস প্রজাতির চাষাবাদকৃত নাশপাতি গ্রীষ্মকাল এবং শরৎকালীন ফল। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে পাকার পূর্বেই সবুজ অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়। ফ্রান্সে দীর্ঘস্থায়ী সুগন্ধযুক্ত নাশপাতি সংগ্রহের জন্যে তিনটি পৃথক সময়কে প্রাচীনকাল থেকেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। ফল পাকার পনের দিন বা তারও পূর্বে প্রথমবার,এরপর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং পূর্ণাঙ্গভাবে পাকার সময় শেষবার সংগৃহীত হয়।
আরও পড়ুন - Sugarcane Farming – এই মরসুমে আধুনিক পদ্ধতিতে আখের চাষ করে আয় করুন দ্বিগুণ মুনাফা