ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ নিয়ে মোটামুটি সবাই বর্তমানে ওয়াকিবহাল। বীরুৎ-জাতীয় এই উদ্ভিদের ভেষজ গুণ প্রচুর পরিমানে থাকায় বর্তমানে আমাদের রাজ্যে কালমেঘ চাষ প্রচুর পরিমানে হচ্ছে।শারীরিক সমস্যা দূর করতে কালমেঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য।কালমেঘ পাতার রস রক্ত আমাশা দূর করা ছাড়াও, কৃমির সমস্যা রোধ করতেও ভীষণ কার্যকরী।মূলত বীজ থেকে এই কালমেঘের চাষ হয়।জন্ডিস, কৃমি, ম্যালেরিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, যকৃতের সমস্যার জন্য কালমেঘ খুবই উপকারী।সর্দি-কাশি ও চামড়ার রোগ দূর করতেও কালমেঘের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।জুন-জুলাই মাসে মূলত এই ফসলের চাষ হয় এবং মার্চ-ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এর বীজ সংগ্রহ করা হয়।
কালমেঘ চাষ পদ্ধতি
জল নির্গমনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে-দোঁআশ মাটিতে জৈবসার প্রয়োগ করে চাষ করলে গাছের ভালো বৃদ্ধি হয়। তবে যে কোন জায়গায় যে কোন প্রকার জমিতে চাষ করা যেতে পারে। জমিতে সরাসরি বীজ ছড়িয়ে কিংবা বীজতলায় চারাগাছ জন্মিয়ে পরে তা জমিতে রোপণ করে চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। জুন-জুলাই মাস গাছ রোপণের প্রকৃষ্ট সময়। আগাছা পরিস্কার করে জমিতে জলসেচনের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।
আরও পড়ুনঃ Green Chiretta Farming: ওষধি উদ্ভিদ কালমেঘ চাষে ব্যাপক আয়
কিছু কিছু শুঁটি পেকে গেছে এমন অবস্থায় কালমেঘের কান্ড বা ডালপালা কেটে নিয়ে পাতলা কালমেঘের পাকা শুঁটির উপর পাতলা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের শুঁটিগুলি শব্দ করে ফাটতে থাকে। ঢাকা না দিলে বেশীর ভাগ বীজ বাইরে চলে যাবে। এইভাবে কয়েকদিন রেখে দেওয়ার পর ফেটে যাওয়া শুঁটি ও ডালপালা সরিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিশিন্দা বা বেগনা পাতার গুঁড়ো সহ পরিষ্কার শুকনো কাচের বা প্লাস্টিকের জারে রেখে প্রায় এক বছর পর্যান্ত সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ একসময় ৪০ হাজার প্রজাতির ধানের চাষ,বর্তমানে বিলুপ্ত,ফিরিয়ে আনতে মরিয়া সরকার
মে-জুন মাসে নার্সারিতে চারা তৈরির জন্য একভাগ ভাল মাটি, এক ভাগ বালি, একভাগ গোবর সার এবং কিছু পরিমাণ মিথাইল প্যারাথিয়ন ২ শতাংশ পাউডার মিঔয়ে বীজতলা তৈরী করা যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে বীজতলায় যেন জল না জমে। এরপর পাতলা করে বীজ ছড়িয়ে মাটি দিয়ে হালকা করে বীজ ঢেকে খড় চাপা দিয়ে দিতে হবে এবং নিয়ম করে জল দিতে হবে। ৮-১০ দিন পরেই বীজের অঙ্কুর বেরোতে শুরু করে এবং ৪৫ থেকে ৫০ দিন পরে জমিতে লাগানোর উপযুক্ত চারা তৈরী হয়ে যায়। বীজের অঙ্কুর হতে দেখা গেলে সাবধানে বীজতলা থেকে খড় তুলে নিতে হবে। এই পদ্ধতিতে চারা তৈরির খরচ পড়ে হাজার প্রতি আনুমানিক ১৫০০ টাকা। তবে নার্সারিতে ১০ সেমি. × ১৫ সেমি, পলিপটে চারা তৈরির খরচ পড়ে হাজার প্রতি ৩৫০০ টাকা।
সার প্রয়োগ ও সেচ (Fertilizer and Irrigation)
প্রথমে মাটি, বালি, জৈব সার মিশিয়ে বীজের জন্য মাটি প্রস্তুত করে নেওয়া উচিত। বীজ থেকে চারা বেরোলে তা চাষের জমিতে পোঁতা হয়। কালমেঘের ভালো ফসলের জন্য জমিতে গোবর সার ব্যবহার করেন অনেকে। মূলত বর্ষাকালে এটি চাষ করা হয় তাই সেচ কার্যের তেমন প্রয়োজনীয়তা পড়ে না৷ তবে প্রথম প্রথম তিন-চার দিন পর পর প্রয়োজনাসুরে জল দিতে হয়। এরপর আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সপ্তাহে সপ্তাহে জলসেচ দেওয়া যেতে পারে৷