এবার AI এর সাহায্যে ছাগলের গর্ভধারণ করা হবে, জেনে নিন কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি শীতকালে মাছ চাষ: জল ব্যবস্থাপনা এবং মাছের সঠিক যত্ন নেওয়া শিখুন! বাগমাল গুর্জরের সাফল্যের গল্প
Updated on: 4 April, 2020 6:01 PM IST

শহর কলকাতা থেকে কমবেশী ৬০ মিমি. দূরত্বে অবস্থিত হাওড়া জেলার বাগনান থানার হাল্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন হাল্যান গ্রামে বর্তমানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এবং পরিচালনায় এক অনন্য আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই মনোরম শ্যামলীলায় চারদিক ভরপুর এক অপূর্ব পরিবেশে ২০০২ সালের ১০ ই জুন এই বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। হাল্যান গ্রামের ভূমিপুত্র বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী আলহাজ ড. শেখ আব্দুল মুজিদ সাহেবের যোগ্য নেতৃত্ব এবং পরিচালনায় একদল কর্মঠ সমাজসেবী এলাকার মানুষ একজোট হয়ে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের বালকদের সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রেখে পড়াশোনার সুব্যবস্থায় এই মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি গড়ে তোলেন। ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মওলানা আবুল কালাম আজাদ-এর নামাঙ্কিত এই বিদ্যালয় ক্রমান্বয়ে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়ে পাঠরত বালকদের রেজাল্টও নজরকাড়া।

গত ১২ বছর ধরে এই মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি সংখ্যালঘু মুসলিম বালকদের আধুনিক শিক্ষার সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থাপনায় এক অন্যতম দিশারী হিসাবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে। শুধু শিক্ষা নিয়েই এই মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি পড়ে নেই। এখানে মুসলিম শিক্ষকদের পাশাপাশি বহু হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষকও আছেন, যাঁরা অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে এখানে শিক্ষকতা করছেন। হিন্দু- মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের শিক্ষকরা এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে শিক্ষাদানের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে এক অভিনব সুন্দর এবং অভূতপূর্ব সম্প্রীতির মহাবাতাবরণ – যা এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পরিচালিত আবাসিক মিশন বিদ্যালয়ে নেই। শুধু হিন্দু শিক্ষক নয়, এই অ্যাকাডেমির চতুর্থ শ্রেণীর বহু কর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের। যাঁরা এখানে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, অত্যন্ত মর্যাদা এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ নিজ কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করে অ্যাকাডেমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে চলেছেন। শুধু সংখ্যালঘু পিছিয়ে পড়া বালকদের উপযুক্ত আধুনিক শিক্ষা নয়, নয় শুধু সম্প্রীতির মহাবাতাবরণ - এই মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি এসবের পাশাপাশি অত্যন্ত আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দিক থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ স্ব-বিদ্যালয় সংলগ্ন এক টুকরো জমিতে নানা ধরণের ফল-ফুলের গাছ লাগিয়ে তার সুষ্ঠ লালন-পালনের মাধ্যমে অনুপম সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে যত্নবান হয়েছে।

মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর (পরিকাঠামো) মোজাম্মেল হোসেন তাঁর অভিনব চিন্তাভাবনা, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্কতা, নতুন কৃষি উদ্যান, প্রযুক্তির সুব্যবহারে এই ফল-ফুলের বাগান দীর্ঘদিনের নিরলস আন্তরিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন। ফলের মধ্যে আছে আম (ল্যাংড়া, ফজলি প্রভৃতি), হাইব্রিড পেয়ারা, আপেল, সবেদা, জামরুল, পাতিলেবু, বাতাবি লেবু, কমলা লেবু, মোসাম্বি লেবূ, কাগজি লেবু, হাইব্রিড নানা জাতের পেঁপে, বোম্বাই কুল, আপেল কুল ইত্যাদি। আর ফুলের মধ্যে আছে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, পমপম, স্নো-বল, পিটুনিয়া, গ্রামত্রাস, ক্যালেন্ডুলা ইত্যাদি। অর্কিডের মধ্যে রয়েছে ইউএসএ, এছাড়া রয়েছে, থাইল্যান্ডের জাত গোলাপ, রজনীগন্ধা, অ্যান্টিলা, গ্ল্যাডিলাস ইত্যাদি। রয়েছে পামের বিভিন্ন জাতও। প্রায় ৬-৭ প্রজাতির পাম বাগানের সৌন্দর্যবৃদ্ধি করছে।  আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, টবে চাষ করা একই গাছে শসা এবং চিচিঙ্গা (হোফা)। এই অভিনব প্রদর্শনী বহু অভিভাবক, অতিথি ও শিক্ষকদের নজর কেড়েছে। এছাড়া আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাতাবাহার। টবে রয়েছে বেগুন, মোসাম্বি, আম প্রভৃতি গাছ। এগুলি ছাড়া আমলকী, হরিতকি ইত্যাদি ঔষধি উদ্ভিদও রয়েছে। বাগানের দেখাশোনার ভারপ্রাপ্ত শেখ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “বাণিজ্যিক ভাবনা নিয়ে আমরা কিন্তু এই বাগান করিনি। হাজারেরও ওপর বালক এখানে পড়াশোনা করে, ৮০ জনের বেশী শিক্ষকমণ্ডলী, বিদ্যালয় পরিচালকমণ্ডলী প্রায় ৩০ জন। এছাড়া প্রায় সময়ই আসছেন মন্ত্রী থেকে সরকারী অফিসার- কর্মী, ডাক্তার, আইনজীবি থেকে বহিরাগত শিক্ষক প্রমুখ ব্যক্তি। নানা কাগজের সাংবাদিকদের জন্য এই বাগান, এই সৌন্দার্যায়নের সুব্যবস্থা করেছি। টবের মাটি আমি নিজেই তৈরি করি, মাঝে মধ্যে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। হাড় গুড়ো, খোল বিশেষ করে সরষে খোল প্রয়োগ করি গাছে। এর পাশাপাশি কুঁড়ো, গরুর শিং গুঁড়ো, রাসায়নিক সার ব্যবহার করি, মাটির নোনাভাব দূর করতে ব্যবহার করি চুন। এছাড়া মাছের পোঁটা, আঁশ, বাড়তি ফেলে দেওয়া তরিতরকারির খোলা ইত্যাদি এক স্থানে জমিয়ে জৈব সার তৈরি করে গাছের মাটিতে প্রয়োগ করি। যা কিছু খরচ খরচা সব অ্যাকাডেমি বহন করে। পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে এবং পাশাপাশি সৌন্দার্যায়ন বজায় রাখতে আমি এই কাজ করি”।

মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা বিদ্যালয়ের মহাপরিচালক আলহাজ ড. শেখ আব্দুল মুজিদ সাহেব জানালেন, “ অ্যাকাডেমিতে প্রত্যহ বহু সাধারণ এবং গুণী মানুষজন আসেন নানা কাজে। তাঁদের চোখে অ্যাকাডেমির সৌন্দার্যায়নের মহান লক্ষ্যে এই বাগান। একদিকে সৌন্দার্যায়ন, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ থেকে অ্যাকাডেমি তথা ছাত্র – শিক্ষক – শিক্ষাকর্মীদের রক্ষা করতে আমাদের এই উদ্যোগ। প্রতি রবিবার আবাসিক ছাত্রদের সঙ্গে বহু অভিভাবক-অভিভাবিকা দেখা করতে আসেন। এছাড়া আসেন বহু অতিথিও। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের এই বাগান দেখে প্রশংসা করে যান। বর্তমান রাজ্য সরকারও তো পরিবেশ দূষণ রোধে নানা জায়গায় সৌন্দার্যায়নের সুব্যবস্থা করে চলেছে। সরকারের এই সদিচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা আগ্রহী। পরিবেশ সুন্দর এবং দূষণ মুক্ত হলে সব ভালো থাকে – সব ভালো লাগে। আগামীতে আমারা এই বাগানকে আরও বড় এবং আরও সুন্দর করে তুলতে চাই। আমরা সংখ্যালঘু সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের সার্বিক আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের এই প্রিয় মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমির প্রাঙ্গণকে সর্বদা পরিষ্কার –পরিচ্ছন্ন এবং দূষণ মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে সদা সর্বদা আগ্রহী। আমাদের বাগানের ফুল অ্যাকাডেমির নানা উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। গাছের নানা জাতের ফল অতিথি অভ্যাগতদের পরিবেশন করা হয়। আর যে সকল ঔষধি উদ্ভিদগুলি আছে, সেগুলি ছাত্রদের পরিচিতি ঘটাতে কাজে লাগে”।

স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)

তথ্য সূত্র – ইকবাল দরগাই, ড. আলহাজ আব্দুল মুজিদ (চেয়ারম্যান), মোজাম্মেল হোসেন (ডিরেক্টর) মওলানা আজাদ অ্যাকাডেমি।

English Summary: In addition to education, Maulana Azad Academy has responded to the areas of harmony, environment and beauty
Published on: 04 April 2020, 06:01 IST