লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ হওয়া সবজি, এর জন্ম আফ্রিকায়। লাউ একটি ধ্বনি পরিবর্তিত শব্দ, যার মূল শব্দ 'অলাবু'। লাউকে কোন কোন স্থানে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু লাউ নয়, লাউয়ের বাকল, লতা, এমনকি পাতাও খাওয়া যায়।
উপকারিতা (Benefits) -
লাউয়ে প্রচুর জল থাকে, যা দেহের জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া জনিত জলশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে।
প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য এটি আদর্শ সবজি।
এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দেহের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।
ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। ডায়েটিং কালেও লাউ ভালো ফল দেয়।
চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে লাউয়ের রয়েছে সহায়ক গুণাবলি।
কাটুই পোকা দমনের পদ্ধতি:
কাটুই পোকা চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। এটি দমন করার জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি বজ্র ২.৫ ইসি মিশিয়ে বিকাল বেলা গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
রেড পাম্পকিন বিটল দমনের পদ্ধতি:
রেড পাম্পকিন বিটল লাউয়ের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে থাকে। এটি দমনের জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সাইরাক্স বা ১ মিলি বজ্র মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ছত্রাক জনিত সাদা দাগ প্রতিরোধ:
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় । এটি ছত্রাকজনিত কারনে হয়ে থাকে।ইহার জন্যে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা মনোভিট ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
পাতা সুড়ঙ্গকারী ছোট পোকামাকড় এর আক্রমণ রোধ:
ছোট কীড়া পাতার সবুজ অংশ সুড়ঙ্গ করে খেয়ে সুতার মতো আঁকা বাঁকা রেখা দাগ করে ফেলে। বেশি হলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এটির জন্যে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা উচিত। আঠালো হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমনঃ কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
অন্যান্য সমস্যাঃ
১.এক ধরনের বিশেষ পোকা আছে যা পাতা, ফুল ও কচি ফলের রস চুষে খায়, পাতা কুঁকড়ে যায় ।তাছাড়া এই পোকা হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
এটির জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিলি ইমিক্সস্ট্রীম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
২.গ্যামোসিস ছত্রাকজনিত রোগে লাউ গাছের কান্ড থেকে গাম বা আঠা বাহির হয়।। এটির জন্যে আক্রান্ত স্থান চাকু দিয়ে চেচে কুপ্রোফিক্স এর পেষ্ট লাগিয়ে দিতে হবে এবং সেই সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম কুপ্রোফিক্স এবং ১ গ্রাম ইউনিজুম মিশিয়ে ৭ -১০ দিন পরপর নিয়মিত ভাবে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - ফলের মাছি - সমস্যা ও প্রতিকার, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীট দমন
সতর্কতাঃ সকল কীটনাশকই বিষ। তাই কীটনাশক ব্যবহারের পূর্বে এবং সংরক্ষণের সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন। কীটনাশক ছিটানোর সময় ধূমপান বা পানাহার থেকে বিরত থাকুন। কখনোই বাতাসের বিপরীতে স্প্রে করবেন না।কীটনাশক শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
আরও পড়ুন - রায়থু বন্ধু প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন ৫৯.২৬ লক্ষ কৃষক; আপনিও আবেদন করুন এই পদ্ধতিতে