টেন্ডু বা কেন্দু গাছ (ডায়োস্পাইরোস মেলানোক্সন রক্সব) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, Ebenaceae, যা ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয়। স্থানীয়ভাবে এটি তেম্বুরিনী নামে পরিচিত। এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ফল যা গ্রীষ্মকালীন মধ্য প্রদেশের, ছত্তিসগড়,ঝাড়খণ্ড এবং উড়িষ্যা রাজ্যে পাওয়া যায় | ফলগুলি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ফাইবার সমৃদ্ধ |
এই অঞ্চলের উপজাতিরা লু বা গরম থেকে রক্ষা পেতে এই ফলটি খেয়ে থাকে | এই ফলে প্রচুর পরিমানে শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বি-ক্যারোটিন, টের্পেনয়েডস,স্যাপোনিন এবং ট্যানিন থাকে |কেন্দুল পাতা থেকে বিড়ি তৈরী হয় | গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই পাতা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে | এই পাতা বিক্রি করে কৃষকরা অর্থ উপার্জন করে থাকে |তাই কেন্দু ফল চাষে কৃষকদের আর্থিক উন্নতি হয়ে থাকে |
মাটি ও জলবায়ু(Soil and climate):
ল্যাটেরাইট এবং কালো মেটি এই গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযোগী | এছাড়াও, বনাঞ্চলের মাটি এই গাছের জন্য ফলদায়ক | বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য, ভাল জল ধারণ ক্ষমতা এবং হিউমাস সহ মাটি প্রয়োজন | কোয়ার্টজাইট, শেল এবং বেলেপাথর সহ পাথুরে মাটিতেও এটি বেড়ে ওঠে ভালোভাবে |
শীতল এবং আর্দ্র জলবায়ুতে এটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠে | কেন্দু হলো উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল যেখানে ০-৯০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় এই গাছ জন্মায় | বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০০-১৫০০ মিমি এবং তাপমাত্রা ০-৪৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এই গাছের বৃদ্ধির জন্য উত্তম | উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা ফল পরিপক্ক হওয়ার জন্য প্রয়োজন |
বীজ শোধন(Seed):
ঠান্ডা জলে প্রায় 12 ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম হয়। স্টাম্প পদ্ধতিতে বীজ রোপণ করলে এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় | গ্রাফটিং পদ্ধতি দ্বারা উদ্ভিদের বৃদ্ধি সম্ভব | ৫:৩:২ অনুপাতের FYM, মাটি এবং বালির মিশ্রণ পলিথিন ব্যাগে দিয়ে বীজের অঙ্কুরোদগম করা হয় | জানুয়ারি-মার্চ মাসে গ্রাফটিং করা যেতে পারে |
আরও পড়ুন -Baukul cultivation: দেখে নিন বাংলাদেশে বাউকুল চাষ করে অধিক উপার্জন করার সুযোগ
রোপন পদ্ধতি(Plantation process):
কেন্দু হলো একটি মাঝারি আকারের গাছ বা গাছের গুল্ম যা প্রাকৃতিক অবস্থায় বনভূমিতে বা অবনমিত জমিতে পাওয়া যায় | ভাল ধরণের মাটিতে যেমন বেলে দোআঁশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি হয় ভালোভাবে | মাটি ও জলবায়ুর ধরণ অনুসারে উদ্ভিদের মধ্যে ব্যাবধান ঠিক করা হয় | দেশের পূর্বাঞ্চলে যেখানে পাথুরে মাটি বা ল্যাটেরাইট মাটি রয়েছে সেখানে গাছগুলি ৬ মিটার দূরত্বে রোপন করতে হবে |গাঙ্গেয় সমভূমিতে গাছের ব্যাবধান থাকবে ৮-১০ মিটার দূরত্বে | জুলাই-আগস্ট মাসে এই গাছ রোপণ করা হয়। যেহেতু, কেন্দু ধীর গতির উদ্ভিদ তাই ১ বছরের বেশি পুরানো উদ্ভিদ যার বৃদ্ধি রয়েছে এবং গাছটি সতেজ সবল সেরকম গাছের কয়েকটি পাতা রোপন করা উচিত | বর্গাকার পদ্ধতিতে রোপন করা উত্তম |
ছাঁটাই(Pruning):
চারাগুলি সাধারণত 2 মি x 2 মিটারে রোপণ করা হয় | বেশি পরিমানে ছাঁটাই করা প্রয়োজন | তবে গাছগুলির বৃদ্ধি ঘটবে | অতিরিক্ত ডাল-পালা গ্রহের বৃদ্ধি ব্যাহত করে | এবং অতিরিক্ত আগাছাও ছেঁটে ফেলতে হবে | গাছগুলি সাধারণত ৬০-৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় কাটা হয়, যাতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে পারে | কিছু অবাঞ্ছিত গাছও ফসলের বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকে | আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঙ্গল চালিয়ে জমি পরিষ্কার রাখতে হবে |
মালচিং(Mulching):
এটি আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাটির আর্দ্রতাকে গাছের বৃদ্ধির জন্য বজায় রাখে | মালচিং করার সামগ্রী হলো, ধানের খড়, করাত ধুলো, শুকনো কলা পাতা, পলিথিন ইত্যাদি | কালো পলিথিন আগাছা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে উপযুক্ত। জৈব মালচিং মাটির গুণমান উন্নত করার পাশাপাশি আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং মাটির জৈবিক ক্রিয়াকলাপ উন্নত করে |
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
গাছের পুরোনো পাতা বেশি রোগাসক্ত হয়ে থাকে | প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক বা মানকোজেব দ্বারা এই রোগ নিরাময় সম্ভব | এছাড়াও, জৈব পদ্ধতিতে নিমতেল ব্যবহার করে এই গাছের রোগ নিরাময় করা যায় | অনেক ধরণের পোকা-মাকড়, মাছির আক্রমণও দেখা যায় এই গাছে |
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়