তিল এর বৈজ্ঞানিক নাম Sesamum indicum। খাবার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের তুলনায় তিল তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন।
বসন্তে জমি ফেলে না রেখে অল্প দিনে বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম ও খরা সহনশীল ফসল তিল চাষ করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনই ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব কার্বন সংরক্ষিত থাকায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।
-
উন্নত জাত তিলোত্তমা—৭০-৭৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪০%, কালচে বাদািম।
-
রমা— ৮৫-৯০ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪৫%, বাদামি রঙের বীজ।
-
কৃষ্ণা— ৭৫-৮৫ দিনের, লের পরিমাণ ৪২%, কালচে বীজ।
মাটি -
ভারী মাটি বাদ দিলে, জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত এই রাজ্যের প্রায় সব ধরনের মাটিতে তিল চাষ করা যায়। তবে বেলে-দোঁয়াশ ও পলি-দোঁয়াশ মাটি বিশেষ উপযোগী।
বপন সময় –
উপযুক্ত সময় হল ফাল্গুন মাস। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়।
বীজ -
ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ৩ কেজি আর লাইনে বুনলে ২.৫ কেজি। বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কারবেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% বা ৩ গ্রাম থাইরাম ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
বপন -
তিল বীজ ছোট হওয়ায় মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত জৈব সারের সঙ্গে একর প্রতি ২ কেজি ট্রাইকোডারমা ভিরিডি জৈব ছত্রাকনাশক জীবাণু সার প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে।
সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজ ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে তিল বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। দেখতে হবে, নিড়ান দেওয়ার পর প্রতি বর্গমিটারে গড়ে যেন ৪০-৪৫টি গাছ থাকে।
আরও পড়ুন - নারকেল গাছে ফলন বৃদ্ধিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও কীট পরিচালনা (Management Of Coconut Tree)
সার প্রয়োগ -
আলু চাষের পর তিল চাষ করলে সার না দিলেও চলে। মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকলে সেচ সেবিত জমিতে সারের হিসাব এই রকম :-
মূল সার -
এন.পি.কে ১০:২৬:২৬ – ৪৬ কেজি বা (শেষ চাষের আগে) এস.এস.পি ৭৫ কেজি + এম.ও.পি ২০ কেজি + ইউরিয়া ২৬ কেজি একর প্রতি।
চাপান সার -
একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া ফুলের কুঁড়ি আসার আগে (বোনার ২৮-৩০ দিনে)।
অসেচ সেবিত জমিতে ইউরিয়া চাপান না দিলেও চলে। একর প্রতি ২.৫ কেজি বোরন (১৪.৬%) অনুখাদ্য প্রয়োগে বাড়তি সুফল পাওয়া যায়। ৩০ দিনের মাথায় ১% হারে ১৮:১৮:১৮ স্প্রে করলে ফসল পায় পরিপূরক পুষ্টি।
সেচ -
তিল কম জলে চাষের ফসল। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দানা বাঁধার সময় দিতে হবে।
সুসংহত শস্য রক্ষা -
গোড়া পচা, ডাঁটা পচা ও সাদা গুঁড়ো রোগ আক্রান্ত ফসলে কারবেন্ডাজিম ৫০% ১ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫% ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফাইলোডি আক্রান্ত গাছের উপরভাগ চ্যাপ্টা হয়ে যায়, ফুলগুলো পাতার মতো হয়। ফুল-ফল হয় না। এটা শ্যামা পোকা বাহিত মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ। এই রোগ ও পাতা মোড়া রোগ দমনে প্রথমে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। পরে জমিতে বাহক পোকা দমনের জন্য ডাইমিথোরেট ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকা, লেদা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ৩৩% গাছ আক্রান্ত হলে তবেই অ্যাসিফেট ৭৫% (০.৭৫ গ্রাম) বা প্রফেনোফস ৫০%(১.৫ মিলি) প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল কাটা -
গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে কিনা দেখে নিন।এর পর ফসল কেটে কয়েকদিন জাঁক দিয়ে এবং ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। ভাল পরিচর্যা করলে একর প্রতি ৪.৫–৫.৫ কুইন্টাল ফলন মিলতে পারে।
আরও পড়ুন - জানুন বরবটির বিভিন্ন জাত ও চাষের পদ্ধতি (Cultivation Methods Of Cow Peas)