ভূত মরিচ যা ভুত জোলোকিয়া নামেও পরিচিত (যার আক্ষরিক অর্থ অসমিয়াতে ভুটানিজ মরিচ), উত্তর-পূর্ব ভারতে চাষ করা একটি স্বতন্ত্র হাইব্রিড মরিচ। এটি ক্যাপসিকাম চিনেসেন্স এবং ক্যাপসিকাম ফ্রুটসেনগুলির একটি সংকর এবং নাগা মরিচের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।২০০৭-এ, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে বলা হয়েছিল যে ভূত মরিচ ছিল বিশ্বের উষ্ণতম মরিচ, তাবাসকো সসের চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি ঝাল। এই মরিচকে এক মিলিয়নেরও বেশি স্কোভিল হিট ইউনিট (এসএইচইউ) রেট দেওয়া হয়। তবে, সবচেয়ে উত্তপ্ত মরিচ গজানোর দৌড়ে ভূত মরিচটি ত্রিনিদাদ বৃশ্চিক বাচ টি মরিচকে ২০১১ সালে এবং ২০১৩ সালে ক্যারোলিনা রিপারকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
ভুত লঙ্কা, নাগা জালোকিয়া নামেও অনেকে চেনেন। অত্যন্ত ঝাল এই লঙ্কার ছাল অনেক পাতলা হয়। একটি বীজ জিভে রাখলে মোটামুটি ৩০ মিনিট জ্বালা সহ্য করতে হয়। আসাম এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, জোরহাট ও আই সি এ আর –এর যৌথ উদ্যোগে এই লঙ্কার উপর গবেষণা চলে। এই ভুত লঙ্কার ক্যাপসাইসিন ক্রমশ নানা ধরণের ওষুধ তৈরিতে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বিশেষ করে আরথ্রিতিস- এর যন্ত্রণা উপশম করতে ও নানা ধরণের চর্মরোগের নিরাময় করতে এবং আরশলা,পিপড়ে ইত্যাদি পোকামাকড়ের রিপিলেন্ট হিসেবে। যেখানে সাধারণ লঙ্কায় ক্যাপসাইসিন ১% থাকে সেখানে এই ভুত লঙ্কায় থাকে ৩-৫%। তাই বিদেশী বাজারে এই লঙ্কার ক্যাপসাইসিন ও অলেরেসিন এর চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আসাম থেকে বর্তমানে এই ঝাল ও লাল লঙ্কা ইউরোপ ও আমেরিকার বহু জায়গায় রপ্তানি শুরু হয়েছে।
লঙ্কা চাষে বীজ ব্যবস্থাপনা -
-
উন্নত মানের বীজ ব্যবহারে ২০% অধিক ফলন পাওয়া যায়।
-
সেইজন্য গুণগত মানের বীজ বিশ্বস্ত ডিলার এর নিকট থেকে নেওয়া ভালো।
-
সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের বীজ নিজেই উৎপাদন করা যায়।
-
শংসিত বীজের প্যাকেটে নীল রঙের শংসাপত্র বা ট্যাগ লাগানো থাকে যেখানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখ থাকবে -
১) শংসাপত্র প্রদানকারী সংস্থার নাম ও ঠিকানা;
২) বীজের প্রকার ও জাত;
৩) বীজের নূন্যতম অঙ্কুরোদগমের হার (৭৫%) ও বাহ্যিক শুদ্ধতা (৯৮%)
৪) লট নং এবং অন্যান্য তথ্য;
৫) শংসিত বীজ উৎপাদনকারীর নাম ও ঠিকানা;
৬) শংসাপত্র প্রদানের তারিখ ও বৈধতা;
৭) শংসাপত্র প্রদানকারীর স্বাক্ষর।
এছাড়া কোন সময় অবধি বীজ বোনা যাবে তারও উল্লেখ থাকবে।
বীজের হার -
উন্নত জাত: ৫০০-৭০০ গ্রাম/একর।
সংকর জাত: ১০০-১৫০ গ্রাম/একর।
বীজের শোধন -
বীজ বপন করার আগে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৫ গ্রাম /কেজি বীজ বা সিউডোমোনাস ফ্লুওরেসেন্স ১০ গ্রাম /কেজি বীজ মিশিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে বা
কার্বেনডাজিম ৫০ % ডবলু. পি @ ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।
বপনের সময় -
লঙ্কা বীজ বৈশাখ -জৈষ্ঠ, ভাদ্র -আশ্বিন এবং পৌষ -মাঘ মাসে বীজতলাতে রোপন করা হয়।
৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে চারা গাছ মূল জমিতে রোপনের উপযুক্ত হয়।
পার্বত্য অঞ্চলে মাঘ -ফাল্গুন মাসে লঙ্কার চারা রোপন করা হয়।
রোপনের গভীরতা-
এক থেকে দেড় সেমি গভীরে বোনা হয়।
আরও পড়ুন - জানুন উন্নত পদ্ধতিতে মাসকলাই এর চাষ কৌশল
রোপনের দুরত্ব-
সারি থেকে সারির দুরত্ব এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব
উন্নত জাত: ৪৫ সেমি X ৪৫ সেমি।
সংকর জাত: ৬০ সেমি X ৬০ সেমি।
গাছের সংখ্যা-
উচ্চ ফলনশীল জাত: ১৪০০০ - ১৫০০০ গাছ / একর
সংকর জাত: ৮৫০০ - ৯০০০ গাছ / একর।
আরও পড়ুন - বাড়িতে টবে ডুমুর চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ