কুমড়ো (Sweet pumkin) এর বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata ।দেশের কম বেশি প্রায় অনেক এলাকাতেই মিষ্টি কুমড়ো চাষ হয়ে থাকে। আমরা যে সমস্ত শাক সবজি ব্যবহার করি তার মধ্যে মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে অন্যতম। এটি সারাবছরই বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির উপর নির্ভর করে। মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে এক ধরণের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এর পাতা ও কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। মিষ্টি কুমড়া তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
জমি তৈরি-
১. ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
২. মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
৩. শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
বীজ বপন ও চারা রোপণ -
১. মিষ্টি কুমড়ার বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়।
২. চারা রোপণের মাস খানেক আগে জমিতে ১.৫ ফুট X ১.৫ ফুট মাপের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
৩. সারি তৈরি করে তাতে গর্ত খুঁড়লে তা চাষের জন্য ভালো। এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব ৬ ফুট রাখতে হবে।
৪. এক গর্ত থেকে অপর গর্তের দূরত্ব ৬ ফুট রাখতে হবে।
৫. চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ:
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে মিষ্টি কুমড়া চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুয়ায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ ও নিষ্কাশন:
১. সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
২. শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
৩. মিষ্টি কুমড়া চাষের সময় জমিতে জল বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।
রোগবালাই -
মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে মাছির আক্রমণ হয়ে থাকে।
প্রতিকার:
মাছির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য বিষটোপ অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া ফসলে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পরিচর্যা:
১. চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে।
২. গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে।
৩. জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে।
৪. কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে।
৫. গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই গাছের গোড়ার দিকে ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডালপালা ধারালো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন - জানুন বিভিন্ন জাতের কলার বৈশিষ্ট্য ও আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষের কৌশল
ফসল সংগ্রহ:
মিষ্টি কুমড়া পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ মাস পর গাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া তোলার উপযোগী হয়। ফল হলুদ বা হলদে বাদামী রঙ ধারণ করে। ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে এবং গাছ মরতে শুরু করে। পাকা কুমড়া সংগ্রহ করে ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থান রেখে দিতে হবে।প্রতি বিঘা জমি থেকে এক মৌসুমে প্রায় ২৫০ টি মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - সজিনার সংগ্রহ এবং কীটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ