ডাটা (Amaranth) চাষ রবি (শীতকালে) ও খরিফ (গ্রীষ্মকালে) উভয় মৌসুমে শাক-সবজি হিসেবে করা যায়। ডাটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ, বি, সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম ও লৌহ বিদ্যমান। ডাটার কাণ্ডের চেয়ে পাতা বেশি পুষ্টিকর। খুব কম সবজিতে এত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।
ডাটার জাত পরিচিতি (Amaranth Species) -
বারি ডাঁটা -১
(বপনের ৪০-৪৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়। চৈত্র-আষাঢ় মাসে বীজ বপন করতে হয়।)১২৫-১৫০ মণ কান্ড খাড়া, হালকা বেগুনী, নরম ও কম আঁশযুক্ত। দ্রুত বর্ধনশীল জাত। বীজ ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল কালো বর্ণের। খরিফ মৌসুমে সারাদেশ চাষ করা যায়।
বারি ডাঁটা -২
(বপন থেকে ২৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়। চৈত্র-আষাঢ় মাসে বীজ বপন করতে হয়।)১০০-১১০ মণ কান্ড খাড়া, নীচের দুই-তৃতীয়াংশ হালকা বেগুনী এবং উপরের অংশ গাঢ় সবুজ বর্ণের। কান্ড নরম ও কম আঁশযুক্ত। দ্রুত বর্ধনশীল জাত। বীজ ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল কালো বর্ণের। খরিফ মৌসুমে সারাদেশ চাষ করা যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির আরো অনেক জাত আছে যেগুলো সারা বছর চাষ করা যায়। যেমন-পান্না, রেড টাওয়ার, গ্রীন টাওযার, রেড আর্মি, ভুটান সফট ইত্যাদি
বপন সময়ঃ খরিফ মৌসুম (মার্চ-এপ্রিল) ও রবি মৌসুম (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর)।
বীজ হারঃ বিঘা প্রতি ১৯৮-৩৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন অথবা, শতাংশ প্রতি ৬-১০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন।
জমি তৈরিঃ
প্রায় সোয়া দুই হাত (২.১৮ হাত) প্রশ্বস্ত এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ লম্বা করে বেড তৈরি করতে হবে।দুবেডের মাঝে এক ফুট (৩০ সেমি.) নালা থাকবে।
বীজ বপনঃ
বীজ সরাসরি ছিটিয়ে অথবা লাইন করে বপন করা যায়। লাইনের ক্ষেত্রে বেডের উভয় পাশে ১০ সেমি.বাদ রেখে লম্বালম্বি ২০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বপন করতে হবে। বপনের পর কাঠি বা হাতদিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের সময় সম পরিমাণ ছাই বা বালি মিশিয়ে বপন করলে সমভাবেপড়বে। জমিতে রস না থাকলে ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।
ভালো স্বাদ পাওয়ার জন্য পাতা নরম বা মোলায়েম অবস্থায় শাক সংগ্রহ করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকলে ৫-৭ দিন পর শাক সংগ্রহ করতে হবে।
ডাঁটা চাষে সার ব্যবস্থাপনা (Fertilizer Application) -
সারের নাম শতকের জন্যঃ
পচা গোবর/কম্পোস্ট ৪০কেজি
ইউরিয়া ২৬৪গ্রাম
টিএসপি ৮০০গ্রাম
এমওপি ৬০০গ্রাম
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সমুদয় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার শেষ চাষের সময় সমানভাবে ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের ১৫ দিন পর অবশিষ্ট পটাশ এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
গাছ পাতলাকরণ ও আগাছা দমনঃ
বীজ বপনের এক সপ্তাহ পর গাছ পাতলা করণ ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। সারিতে ৫সেমি. পর পর চারা রেখে পাতলা করে দিতে হবে। জমির উপর চটা লেগে গেলে ভেঙ্গেদিতে হবে। এতে করে দ্রুত গাছ বৃদ্ধি পাবে এবং গোড়া পচা রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
আরও পড়ুন - জানুন লাল শাক চাষের পদ্ধতি (Red Spinach Cutivation)
জল সেচঃ
শুষ্ক মৌসুমে এক সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে। নতুবা শাক খসখসে হয়ে যাবে।
ডাটা সংগ্রহ ও পরবর্তী করণীয়ঃ
ভালো স্বাদ পাওয়ার জন্য পাতা নরম বা মোলায়েম অবস্থায় শাক সংগ্রহ করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকলে ৫-৭ দিন পর শাক সংগ্রহ করতে হবে।
ফলনঃ
বিঘা প্রতি ৩৩-৪০ মণ
-
বীজ উৎপাদন ও সরক্ষণঃ
-
দুটি জাতের মধ্যে ৫০০ মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
-
বীজ উৎপাদনের জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করতে হবে।
-
বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব উভয়ই এক ফুটহতে হবে।
-
রোগ-পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
-
বীজ কালো রং ধারন করলে সংগ্রহ করা যাবে। সাধারনত বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনেরমধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়।
বীজের ফলনঃ
বিঘা প্রতি ডাটা শাকঃ ৬৬-৮২.৫ কেজি।