আমাদের দেশে প্রায় সব এলাকাতেই ঝিঙ্গা চাষ (Ridge Gourd) করা হয়। একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। পদ্ধতি মেনে চাষ করলে ভালো লাভ ঘরে তুলতে পারবেন চাষীরা ঝিঙ্গা চাষের মাধ্যমে। বীজ বপনের সময় মাঘ-ফাল্গুন মাস এবং বর্ষাকালীন সময় বৈশাখ, জৈষ্ঠ মাস।
জেনে নেওয়া যাক ঝিঙ্গার চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে (Cultivation Method) -
জাত পরিচিতি (Variety) :
আমাদের দেশে বর্তমানে দুই ধরণের ঝিঙ্গা চাষ করা হয়। ১। দেশি ঝিঙা, ২। হাইব্রিড জাত। দেশী জাতের ঝিঙ্গা আকারে ছোট, দ্রুত আশ হয়ে যায়, স্বাদে কিছুটা তিক্ত এবং ফলন কম। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের ঝিঙ্গা আকারে বড় লম্বা, সুস্বাদু এবং বীজ নরম ও রসালো। ঝিঙার কয়েকটি দেশী জাত যেমন; করোপাতা, সুন্দরী, উলুবেড়িয়া ইত্যাদি। হাইব্রিড জাত - সুরেখা, লতিকা, রোহিনী, সুদর্শন, ঝিঙা চাষে বিঘা প্রতি ৬০০-৭৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন।
বর্তমানে আমাদের দেশের চাষিরা হাইব্রিড জাতের ঝিঙ্গা চাষ করার প্রতি বেশি আগ্রহী। বাজারে এখন হাইব্রিড জাতের অনেক ঝিঙ্গা পাওয়া যায়, তাঁর মধ্যে রয়েছে- গ্রিন স্টার, বসন্তী, সামিহা, ডায়েট, অনামিকা, মাওতি, লুফা ৩৫, রিজ লং, দোদুল, হিরো, হারকুলাস, টেস্টি, সাথী, ঈসা খাঁ, মূসা খাঁ, বলেশ্বর ইত্যাদি অন্যতম।
জমি নির্বাচন এবং তৈরি :
ঝিঙ্গা চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরুপে তৈরি করতে হয়। এ জন্য জমিকে প্রথমে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।
ঝিঙা লাগানোর পর চারাপাতা হলেই মাচা করে দিতে হবে ও নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। উপযুক্ত দোঁয়াশ মাটিতে ঝিঙার চাষ ভালো হয়, এবং মাটিতে জৈব কার্বনের মাত্রা উচ্চ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সারি থেকে সারির সাধারণ দূরত্ব ১০০ সেন্টিমিটার হবে ও গোবর সার, খোল, সিঙ্গ সুপার ফসফেট প্রভৃতি প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক প্রয়োজনে খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
ঝিঙ্গায় বাদামী রঙের ছাতা রোগের আক্রমন দেখা যায়, পাতায় হলুদ ছোপ পড়ে ও পাতার নীচের দিক বাদামী হয়ে যায়, তাই ছত্রাকনাশক রাসায়নিক স্প্রে করা প্রয়োজন। ঝিঙা একটি অতি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফসল, তাই ঝিঙার চাহিদাও বেশী। এই চাষ চাষীদের লাভবান করবে এই বর্ষায়।
সার প্রয়োগ :
প্রতি মাদায় গোবর সার - ৫ থেকে ১০ কেজি, ইউরিয়া- ৫০০ গ্রাম, টিএসপি- ৪০০ গ্রাম, এমওপি- ৩০০ গ্রাম, বোরণ- ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Chital Fish Farming - চিতল পোনা উৎপাদন ও চাষের লাভজনক পদ্ধতি
রোগ-বালাই :
ঝিঙ্গা গাছের প্রধান শত্রু হচ্ছে বিটল পোকা। এছাড়াও গান্ধি পোকা পাতার রস চুষে খায় এবং পাতাকে রস শূণ্য করে। মাছিতে ফল নষ্ট করতে থাকে। তাই এসব ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় হতে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
গাছ লাগানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ঝিঙ্গা সংগ্রহ করা যায়। ঝিঙ্গা চাষ করে যেমন পরিবারের চাহিদা মেটানো যায় তেমনি বাজারে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা যায়।ভালো জাত উর্বর মাটিতে উত্তম রূপে চাষ করতে পারলে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন (শতাংশ প্রতি ৪০-৬০ কেজি ) ফলন পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন - Ginger Farming – জেনে নিন স্থায়ী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আদার চাষ পদ্ধতি