কমলালেবু টক-মিষ্টি স্বাদযুক্ত এক ফল | এই ফলে ভিটামিন সি-র পরিমান বেশি থাকায় অনেকেই এই ফল খেতে খুব ভালোবাসে | কমলালেবু চাষ (Mandarin Cultivation)করে কৃষকবন্ধুদের লাভের পরিমান থাকে ব্যাপক | এই নিবন্ধে কিভাবে কমলালেবু চাষ করা হয়, কিভাবে পরিচর্যা করতে হয় বা কিভাবে চারা উৎপাদন করতে হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
মাটি ও জলবায়ু(Soil & climate):
যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় এমন আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে কমলালেবু চাষ ভালো হয়। উঁচু, উর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। প্রখর সূর্যকিরণ ও উচ্চ তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বছরে ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা এবং আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান এর জন্য উপযোগী। মাটির অম্ল-ক্ষারত্বের মান ৫.৫ থেকে ৬.০।
চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
যৌন ও অযৌন পদ্ধতিতে কমলার (Orange crop) বংশ বিস্তার করা যায়। কমলার বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। কমলার একটি বীজ থেকে একাধিক চারা পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে সতেজ ও মোটা চারাসমূহ অযৌন চারা বা নিউসসেলার চারা হিসেবে পরিচিত। গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড়া কলমের মাধ্যমে অযৌন চারা উৎপাদন করা যায়। কমলা উৎপাদনের জন্য অযৌন চারা উত্তম।
আরও পড়ুন -Strawberry Farming: জেনে নিন সুস্বাদু স্ট্রবেরি চাষের দুর্দান্ত কৌশল
জমি তৈরী:
প্রথমে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমি তৈরির পর ৩*৩ মি দূরত্বে ৬০*৬০*৬০ সেমি আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিতে হবে। বর্ষার আগে গর্তে মাটি দিয়ে ভর্তি করে রাখতে হবে। কমলা চাষের নির্বাচিত জমি পাহাড়ি হলে সেখানে ৩০-৩৫ মিটার দূরত্বে ২-৪টি বড় গাছ রাখা যেতে পারে। তবে বড় গাছ কাটলে শেকড়সহ তুলে ফেলতে হবে।
চারা রোপন পদ্ধতি:
চারা লাগানোর ১২-১৫ দিন আগে প্রতি গর্তে নির্ধারিত হারে সার মাটির সাথে কোদাল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে রাখতে হবে। প্রধানত মধ্য-বৈশাখ থেকে মধ্য-ভাদ্র (মে থেকে আগস্ট) মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হবে। চারা মাটির বলসহ গর্তে লাগাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন চারাটি গর্তের মাঝে থাকে। কলমের চারার জোড়া স্থানটি মাটি থেকে ১৫ সেমি উপরে রাখতে হবে। চারার গোড়ার মাটি যেন সামান্য উঁচু থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
ভালো ফলন পেতে হলে কমলা গাছে সার প্রয়োগ করা দরকার। মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-চৈত্র (ফেব্রুয়ারি-মার্চ), বর্ষার আগে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল থেকে মে) এবং বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র-মধ্য কার্তিক মাসে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা রোপণের ৩-৪ মাস পর গাছপ্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে | চারা রোপনের আগে গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম এবং ৫০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।
সেচ:
গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে জল দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে বৃষ্টির জল না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রয়োজনে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
পাতা ছিদ্রকারী পোকা:
সাদা পোকা কচি পাতার নিম্নতলে আঁকা-বাঁকা দাগের সৃষ্টি করে। এর আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিকার:
১০ মিলি মেটাসিস্টক্স ১০ লিটার জলে অথবা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি ১০ লিটার জলে ৪ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে।
কমলা গান্ধী:
ফলের গায়ে ছিদ্র করে রস চুষে খায়। মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক মাসে যখন ফল পুরো রসালো হয় তখন এ পোকার উপদ্রব শুরু হয়। এতে ছিদ্রস্থান কয়েকদিন পর হলদে হয়ে ফল ঝরে যায়।
প্রতিকার:
ম্যালাথিয়ন ০.০৪% অথবা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ১০ লিটার জলে ৫ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করলে এ পোকা দমন হয়।
ফসল সংগ্রহ:
এক একটি গাছে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরে। একটি পূর্ণ বয়স্ক কমলা গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০টি কমলা পাওয়া যায়। বেশি বয়স্ক কমলা গাছ বছরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। একটি কমলা গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -SBI Recruitment 2021: SBI তে ৬ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ চলছে, দেখুন আবেদন পদ্ধতি