কাঁকরোলের (Spiny Gourd) বৈজ্ঞানিক নাম হল মোমর্ডিকা ডাইয়োইকা।আমদের দেশে কাঁকরোল একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় সবজি। কাঁকরোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, আমিষ, শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ।কাঁচা কাঁকরোল তরকারি, ভাজি ও ভর্তা ইত্যাদি হিসেবে খাওয়া যায়।কাঁকরোল গাছ লতানো প্রকৃতির। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয়না । তাই বাগানে দুই ধরনের গাছ না-থাকলে, পরাগ মিলন না-হলে, ফল হবেনা।
চাষের সময় (Cultivation Process) -
কাঁকরোল বপণ করার উপযুক্ত সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত।
মাটি:
আমাদের দেশে প্রায় সকল প্রকার মাটিতে কাঁকরোলের চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ, এঁটেল-দো-আঁশ মাটি কাঁকরোল চাষের জন্য উত্তম। কাঁকরোল চাষের জন্য এমন স্থান হতে হবে যেখানে পানি জমে থাকে না, উঁচু বা মাঝারি উঁচু।
কাঁকরোলের জাত:
আমাদের দেশে কাঁকরোলের বিভিন্ন প্রকারের জাত আছে। এসব জাতের মধ্যে আসামি, মণিপুরি, মুকুন্দপুরি ও মধুপুরি অন্যতম। এ সকল জাতের ফলগুলো খেতে বেশ সুস্বাদু এবং ফলনও বেশি হয়।
জমি তৈরি:
কাঁকরোল চাষের জন্য জমিতে ৪-৫ চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর চাষের জমিতে প্রয়োজনীয় মাপের মাদা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক মাদায় ৪-৫ টি বীজ বপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ:
কাঁকরোল চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টন পচা গোবর, ১২৫ থেকে ১৫০ কেজি ইউরিয়া ১০০ থেকে ১২৫ কেজি টিএসপি, ১০০ থেকে ১২৫ কেজি এমওপি, ৮০ থেকে ১০০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি এবং অন্যান্য সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমান দুই কিস্তি করে গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে ১ বার এবং ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে।
কাঁকরোলের পরিচর্যা:
বীজ হতে চারা গজানোর পর কাঁকরোল গাছের জমি নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমির মাটি ও গাছের অবস্থা বুঝে পানি সেচ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন অতিরিক্ত পানি না জমে এবং জমলে তা বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁকরোলের গাছ ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে এর গোড়ায় একটি করে বাশেঁর কুঞ্চি বা কাটি পুঁতে দিতে হবে এবং গাছ ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে কাঁকরোল গাছের জন্য মজবুত করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
পোকা ও রোগবালাই দমন:
কাঁকরোলের বিভিন্ন অনিষ্টকারী পোকার মধ্যে জাবপোকা, মাছিপোকা ও বিছাপোকা উল্লেখযোগ্য। এসকল পোকা গাছের পাতা, ফুল ও ফল নষ্ট করে।এবং কচি কাণ্ডের রস শুষে নেয়। গাছে এসকল পোকার আক্রমণ বেশি হলে এগুলো দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঁকরোর গাছে বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা যায়। যেমন- চারার ঢলে পড়া, পাউডারি মিলডিউ ও মোজাইক। প্রথম দুটি ছত্রাকজনিত এবং শেষেরটি ভাইরাসজনিত রোগ। এসব রোগের আক্রমণে কচি গাছের গোড়া পচে যায় এবং চারা ঢলে পড়ে মারা যায়। আক্রান্ত গাছগুলো তুলে পুতে বা পুড়িয়ে দিতে হবে।
কাঁকরোল সংগ্রহ:
কাঁকরোল হলুদ সবুজ হলেই সংগ্রহ করা যায়। গাছ রোপণের দেড়-দুই মাসের মধ্যে কাঁকরোল ফুল দিতে শুরু করে। পরাগায়নের দুই সপ্তাহের মধ্যে কাঁকরোল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন - আগাছা কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত সারের ব্যবহার বাড়ছে কৃষি ক্ষেত্রে (Made Fertilizer From Weed Hyacinth)