সজনে ডাঁটা তুলে ফেলার পর গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়। সজনে ছাঁটা ডালগুলিকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে পুঁতে দিলেই নতুন চারা পাওয়া যায়। তাছাড়া এ সময়ে অল্পকিছু বৃষ্টি হয়ে থাকে, যার ফলে লাগানো ডালগুলি সহজেই বেঁচে যায়। সাধারণত শক্ত, সতেজ ও নীরোগ (রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত) ৭০-৮০ সেমি লম্বা ও কিছুটা মোটা (১০-১৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট) ডাল নির্বাচন করা হয়। কাটিং সরাসরি মূল জমিতে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যায়। মূল জমিতে সারি বা লাইন করে বীচন (কাটিং) বা চারা লাগানো হয়।
দুটি সারির মধ্যে দূরত্ব রাখা হয় দেড় থেকে তিন মিটার (১৫০-৩০০ সেমি)। আর গাছ থেকে গাছের দূরত্ব রাখা হয় ১-১.২ মিটার (১০০-১২০ সেমি)। নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করে বীচন (কাটিং) বা চারা গাছ লাগানো হয়। জৈব সারের সাথে মাটি মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে তারপর বীচন (কাটিং) বা চারা গাছ লাগানো হয়।
পরবর্তী পরিচর্যা:
সজনে গাছের তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। শুধু গরু ছাগলের উপদ্রব ঠেকানো সম্ভব হলেই গাছগুলো বড় হয়ে ওঠে। ফাঁক ভরাট করার প্রয়োজন হলে তা ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে করাই ভাল। প্রায় ৫০-৬০ দিনের মাথায় ডালে কচি পাতা বের হয় এবং ৯০-১০০ দিনের মাথায় শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে গাছের বৃদ্ধি শুরু হয়। চারা গাছ একটু বড় হলে (প্রায় ৭০-৭৫ সেন্টিমিটার) গাছের ডগাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এতে বেশি করে ডালপালা বের হয়। সজনে চাষে খুব বেশি সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। অল্প যত্নে ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখা দরকার। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অপ্রয়োজনীয় বা শুকিয়ে যাওয়া ডালপালা ছেঁটে দিতে হয়।
আরও পড়ুন -Soil borne diseases of crops: জেনে নিন ফসলের মাটিবাহিত রোগের ক্ষয়-ক্ষতির সমাধান
কখনও কখনও গাছ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। প্রায় তিনমাস পরে গাছ প্রতি ৪৫ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১৫ গ্রাম ফসফেট এবং ৩০ গ্রাম পটাশ দেওয়া হয়। প্রায় ৬ মাস পর প্রতিটি গাছে আবার ৪৫ গ্রাম নাইট্রোজেন দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে অতি অল্প পরিমাণে জিঙ্ক (দস্তা) এবং বোরন দেওয়া হয়। গাছের গোড়ায় তরল জৈব সার দিলে ফলন বেশি হয়। এছাড়া যে কোনও খোল পচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বীজ বোনার বা চারা গাছ লাগানো পর একটু ঘন ঘন হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ একবার লেগে গেলে তেমন জলের প্রয়োজন হয় না। তবে মাটির অবস্থা বুঝে, দীর্ঘদিন খরা চললে সেচ দিতে হবে। বেশি জল হলে গাছ মরে যেতে পারে। উপরের মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই অল্প অল্প জল দিতে হবে। এই গাছের রোগবালাই খুব একটা হয় না। শুঁয়োপোকা এই ফসলের এক মারাত্মক শত্রু। গাছের গোড়ার কাছাকাছি আগুন জ্বালিয়ে এই শত্রুকে দমন করা হয়।
ফলন:
প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ২০০-২২৫ টি ডাঁটা (ফল) পাওয়া যায় (৫০ টন প্রতি হেক্টরে)।
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়