মাশরুম এক অতন্ত্য জনপ্রিয় খাবার | বর্তমানে, এই রাজ্যেরও অন্যতম জনপ্রিয় চলতি খাবার | আজকাল বাড়িতে চারা বিভিন্ন নামি-দামি রেস্তোরাঁতেও মাশরুমের সুস্বাদ খাবার বিক্রি হয় | তাই, এর বাজার চাহিদাও ব্যাপক | আসলে, মাশরুম এক ধরণের ছত্রাক কিন্তু সম্পূর্ণ বিষমুক্ত | পৃথিবীতে প্রায় ৪৫ হাজার ধরনের ছত্রাক আছে। এর মধ্যে দুহাজার রকমের ছত্রাক খাবার হিসাবে যোগ্য। এর মধ্যে ভারতে তিন ধরনের মাশরুম বিভিন্ন জলবায়ু এলাকায় চাষ হয়। সেগুলি হল পোয়াল, ধিংড়ি ও বোতাম মাশরুম।
প্রধানত, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী। বাজারে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন এবং অনেকের মধ্যেই এই চাষের আগ্রহ বাড়ছে ব্যাপকভাবে |
মাশরুম চাষের পদ্ধতি(Mushroom farming):
প্রথম স্তরের কাজ:
প্রথমে, পুরোনো আমন ধানের খড় প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম নিয়ে তাকে ৩২ টি আঁটিতে ভাগ করে নিতে হবে | এরপর, ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ধরে ওই খড় পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর বাড়তি জল ঝড়িয়ে নিতে হবে। মাশরুম চাষে ফোটানো জল ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে রোগ লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। এবার পাটাতন বা মাচার ওপর খড়ের আঁটি একদিকে মাথা বা আগা রেখে পাশাপাশি বিছিয়ে দিতে হবে। আবার বিপরীত দিকে মাথা রেখে আগে বিছানো চার আঁটির উপর আরও চার আঁটি খড় বিছোতে হবে। পাটাতনের ধার বরাবর খড়ের বাড়তি অংশ কাস্তে দিয়ে কেটে দিতে হবে। এইভাবে বিছানো আট আঁটি খড়ের একটি স্তর তৈরি হল। ওই স্তরের উপর ধার বরাবর তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ভিতরে সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো ও মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্রথম স্তরের কাজ এইভাবে শেষ হয়।
আরও পড়ুন -Sudan grass farming method: জেনে নিন সুদান ঘাসের বীজ থেকে ঘাস চাষের পদ্ধতি
দ্বিতীয় স্তরের কাজ:
এরপরে ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের ৮ আঁটি খড় প্রথম স্তরের আড়াআড়ি বিছিয়ে আগের মতো একইভাবে মাশরুমের বীজ ও ডালের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় স্তরের ৮ আঁটি খড় প্রথম স্তরের সমান্তরালভাবে একইভাবে বিছিয়ে বীজ ও ডালের গুঁড়ো আগের মতো ছিটিয়ে দিতে হবে । দ্বিতীয় স্তরের সমান্তরাল চতুর্থ স্তরে ৮ আঁটি খড় একইভাবে বিছাতে হবে । এই স্তরে বীজ বা ডালের গুঁড়ো ছিটাতে হবেনা, তা খেয়াল রাখতে হবে । তিনটি স্তরের মোট ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম বীজ ও সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো প্রয়োগ করতে হবে । প্রতিটি স্তরের খড়ের আঁটিগুলি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য এক বা একাধিক জায়গায় দড়ি বা খড় দিয়ে আলতো বাঁধন দিতে পারলে ভাল হয়। স্তরগুলি সাজানোর সময় পুরো স্তর জোরে চাপ দিয়ে ঘনসন্নিবিষ্ট করতে হবে । পলিথিনের চাদর দিয়ে পুরো স্তরগুলি ঢেকে দিতে হবে।
তৃতীয় স্তরের কাজ:
প্রথম চারদিন ঢাকা খোলা বা জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপর প্রতিদিন পলিথিনের চাদর খুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাওয়া খাওয়ানোর পর প্রয়োজন মতো জল হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ফের পলিথিন চাদর ঢেকে দিতে হবে। ৮ থেকে ১০দিনের মধ্যে স্তূপে ছত্রাকের কুঁড়ি জন্মায়। কুঁড়ি জন্মানোর পর আর পলিথিন ঢাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সকালে বিকেলে প্রয়োজন মতো জল প্রতিটি স্তূপে ছিটিয়ে দিতে হবে। ১৫ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। ৫ থেকে ৭ দিনের বিরতি দিয়ে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত অল্প করে মাশরুম উৎপন্ন হয়। এইরকম এক একটা স্তূপে তিন থেকে চার কিলোগ্রাম পর্যন্ত মাশরুম জন্মায়।
পরিচর্যা:
মাশরুম চাষে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন তা হল পাটাতন সরাসরি সূর্যের আলো বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে । ঠিক সময়ে পরিমিত মাত্রায় স্তূপে জল প্রয়োগ করতে হবে, বাড়তি জল যাতে না হয় খেয়াল রাখতে হবে। স্তূপের তলায় কোনও মতেই জল জমতে দেওয়া যাবেনা। যথাসময়ে পলিথিন চাদর ঢাকা দিয়ে তুলে নিতে হবে । একটি স্তূপে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। বিরতির পর আবার অল্প হারে ফলন পাওয়া গেলেও কোনও অবস্থাতেই একমাসের বেশি কোনও স্তূপে রাখা উচিত নয়। পুরনো স্তূপের খড় কম্পোষ্ট পিটের গর্তে ফেলে দিয়ে আবার নতুন স্তূপ তৈরি করা হয়। তাই একসঙ্গে মাশরুম ও কম্পোষ্ট দুইই উৎপন্ন হয়।
আরও পড়ুন -Duare Ration Pilot Project: চলতি মাসে পাইলট প্রকল্পের কাজ হবে আট দিন, জানিয়ে দিল খাদ্য দপ্তর