নিমের সংস্কৃত নাম ‘অরিষ্ট’ যার অর্থ “সর্বরোগনাশিনী”। বহুবিধ ভেষজ গুণসম্পন্ন নিম। পেটের কৃমি, গায়ে চর্মরোগ, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ছে, হাম হয়েছে বইয়ের পাতা পোকায় কেটেছে সব দূর করবে নিমপাতা। নিমের যৌগ ‘নিমবিন , ‘নিমবিডিন’ ও ‘নিমবিনিন’ ডায়াবেটিস, টি.বি. ও রক্তজমাটবাধা রোগ সারায়। চামড়ার বিভিন্ন রোগে নিমের ব্যবহার অব্যর্থ। নিমপাতা গরমজলে সেদ্ধ করে সেই জল দিয়ে গ্রামে মা-মাসীরা চিরকাল ব্যবহার করে আসছেন।
পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে নিমগাছের ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। গ্রামের মানুষের অটুট বিশ্বাস যে বাড়িতে নিমগাছ থাকলে তার হাওয়ায় পরিবেশ ঠান্ডা ও জীবানুমুক্ত থাকে। পরীক্ষা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে একটি বড় নিমগাছ পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে দশটি এ.সি মেশিনের সমান কাজ করে। হজ-যাত্রীরা হজ শেষে ফিরে জানিয়েছেন হজ-যাত্রার দীর্ঘ পথে সাহারা মরুভূমির তীব্র দাবদাহ সহ্য করার শক্তি যোগায় রাস্তার ধারে সযত্নে লাগানো সারি সারি নিমগাছের স্নিগ্ধ ছায়া। নিমগাছ শক্তিশালী পরিবেশবান্ধব। ‘এয়ার পলিউশন টলারেন্স’ অনুযায়ী নিমগাছের স্থান সর্বোচ্চ।
জৈব চাষে (Organic Farming) নিম কীটনাশক ও নিমখোল জৈব সার হিসেবে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এহেন বহুবিধ গুণসম্পন্ন নিমগাছের ব্যপক চাষ বা Neem Farming এর আশু প্রয়োজন। এলাকা ভিত্তিক চাষ ছাড়াও সারা দেশ জুড়ে পরে থাকা সড়কগুলির ধারে ধারে নিমগাছ লাগানোর সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সম্প্রতি জানা গেছে, চীন –এ সরকারি উদ্যোগে গত দশ বছরে সারা দেশ জুড়ে দু’হাজার কোটি নিমচারা লাগানো হয়েছে। আগামী পরিকল্পনায় চীন দেশে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে নিমচারা লাগানো হবে। তথ্যানুসার, ভারত –এ মাত্র ২ কোটি নিমগাছ আছে। এদেশে আশু প্রয়োজন ব্যপক নিমচাষ (Neem Farming)। চীন দেশে ব্যাপক হারে নিমচাষের ফলে ক্যানসার সহ নানাবিধ মারণ ব্যাধির ওষুধ তৈরির যেমন সুরাহা ওনারা পাবেন তেমনই আবহাওয়া তত্ত্বানুসারে (Meteorological point of view) বৃষ্টির মেঘ ভারত থেকে চীনে দিকে ধাবিত হবে ফলে এদেশের আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।
USA, 1992, Neem : A Tree for solving Global Problems) ফলশ্রুতিতে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসঙ্গিক তথ্যগুলি উঠে এসেছে:
- আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে মরিতানিয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি দেশকেই সাহারা মরুভূমির আগ্রাসন থেকে রক্ষায় নিমগাছ উপকারী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে।
- বাইরে শস্যক্ষেত্র, ভেতরে ঘরবাড়ির পোকামাকড় ও মানুষের শরীরের জ্বর, ব্যথা-বেদনা, চর্মরোগ প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিম রক্ষাকর্তার ভূমিকায়। স্বাভাবিক ভাবেই নিমকে বলা হয় ‘গ্রামীণ ঔষধালয়’ (Village Pharmacy)
- সুদানে মাইলের পর মাইল শস্যক্ষেত্র ও গাছপালায় পঙ্গপাল (locust) – এর ব্যাপক ধ্বংসলীলায় দেখা গেছে নিমগাছগুলি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিমপাতা পঙ্গপাল খেতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে বিখ্যাত জার্মান পতঙ্গবিজ্ঞানী (entomologist) হেইনরিখ স্কুমুটার (Heinrich Schmutterar) দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করেন। গবেষণালব্ধ তথ্য আফ্রিকার দেশগুলিতে পঙ্গপালের ধ্বংসলীলা ও ব্যাপক শস্য ও ফসলহানি রুখতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম কীটপতঙ্গ (insects) তৎক্ষণাৎ মেরে না ফেলে (not outright killers) তাদের জীবন প্রণালী (Life process) –তে পরিবর্তন (metamorphose) এনে দেয়। ফলে কীট পতঙ্গ প্রজননে ও ক্ষতিসাধনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। নিমের দুটি ক্ষমতাধর যৌগ (outstanding components) – সালানিন (Salanin) ও অ্যাজাডিরাকটিন (azadirachtin) এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আমেরিকায় কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত নতুন তিনটি ওষুধ অ্যাজাটিন (Azatin), টারপ্লেক্স (Turplex) ও অ্যালাইন (Align) খাদ্য সামগ্রী রক্ষায় ই পি এ –এর (EPA, US Environmental Protection Agency) অনুমোদন ও প্রশংসা পেয়েছে।
- নিমগাছের বিষয়ে কিছু সাবধানতাও অবলম্বন করা উচিত। পুকুর ও জলাশয়ের ধারে নিমগাছ থাকলে তার পড়া পাতার বিষাক্ত (toxic) প্রভাবে বিশেষ বিশেষ মাছ মারা যায়। হাইতিতিতে দেখা গেছে, নিম গাছের পাতা পুকুরে পড়ায় তেলাপিয়া (tilapia) মাছ মারা গেছে।
তথ্য সংগ্রিহীত
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)