ঢেঁড়স এক অতি জনপ্রিয় সবজি | এটি সাধারণত বড় পরিসরে চাষ করা হয়ে থাকে | ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই নিবন্ধে ঢেঁড়স চাষের (Vendi farming) বিস্তারিত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো,
মাটি ও জলবায়ু(soil and climate):
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এটেঁল মাটিতেও এর চাষ করা যায়। এ দেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়স চাষ করা সম্ভব। তবে উঞ্চ জলবায়ু তথা শুষ্ক এবং আর্দ্র অবস্থায় ভাল জন্মায় |
জমি তৈরি:
জমি ৫-৬ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। ঢেলা ভেঙ্গে এবং আগাছ পরিষ্কার করে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
জাত(Okra variety):
আর্কা অনামিকা, আর্কা অভয়, কাশি বিভূতি, কাশি মোহিনী, পুসা এ-৪। হাইব্রিড জাতগুলি হলো, সম্রাট, রোহিনি ১০০১, তানিয়া, জীবন, গুঞ্জন ইত্যাদি।
আরও পড়ুন -Betel Vine Cultivation: পান চাষের এই বিশেষ পদ্ধতিতে আপনিও হবেন লাভবান
বীজ বপনের সময়:
খরিপ-১: মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ
খরিপ-২: মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে।
রবি: মধ্য আগষ্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় |
বীজের পরিমান:
শতক প্রতি ২০ গ্রাম এবং হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
বীজ বপন পদ্ধতি:
বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।
শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
প্রতি শতকে গোবর ৭৫ কেজি, সর্ষের খোল ১.৭৫ কেজি, ইউরিয়া ২৩০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২৩০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে | জমি তৈরির সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকি সব সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়শ বীজ বপণ করতে হয়। ইউরিয়া সার সমান ২ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
পাতার দাগ রোগ:
অল্টারনারিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রমনের ফলে পাতার উপরে বিভিন্ন আকৃতির গোলাকার বাদামি রং পড়ে। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝরে পরে। ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম/ রোভরাল ২ গ্রাম/ডাইথেন এম-৪৫ ২ গ্রাম/লিটার জলে পাতায় ২/১ টি দাগ দেখা দিলে স্প্রে করতে হবে।
মোজাইক ভাইরাস রোগ:
এ রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে জল নিষ্কাশন করতে হবে।এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বুনার প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মধ্যে ঢেঁড়সগুলো শুকিয়ে লম্বালম্বিভাবে ফাটতে শুরু করে। বীজ হিসাবে চাষাবাদে ফলন হয় ১০০-১৫০ কেজি/ হেক্টর।
আরও পড়ুন -Cashew Farming: অধিক লাভে জুলাইয়ে রোপণ করুন কাজুর চারা