জলপাই একটি অতি পরিচিত ফল। জলপাই কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বিভিন্ন আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি তৈরিতে জলপাই প্রচুর পরিমানে ব্যবহৃত হয়। জলপাই সাধারনত ভূমধ্য সাগরীয় আবহাওয়াতে ভাল জন্মে। কিন্তু উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়ায়ও ভাল ফলে।
বংশ বিস্তার:
জলপাই সাধারনত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এর বীজের আবরণ খুব শক্ত তাই বীজকে ২৪-৩০ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন কলম পদ্ধতিতেও বংশ বিস্তার করা যায়। যেমন চোখ কলম, গুটি কলম, শাখা কলম ইত্যাদি।
জমি নির্বাচন:
জলপাই চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। বন্যার জল জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে। জমি আগাছা দমন করে ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে।
রোপণের সময়:
মে থেকে অক্টোবর মাস চারা রোপন করার জন্য উপযুক্ত সময়। তবে জমিতে জল সেচের সুবিধা থাকলে সারা বছরেই এর চারা রোপণ করা যাবে।
গর্ত তৈরি:
জলপাই এর চারা রোপণ করার আগে এর জন্য গর্ত তৈরি করে নিতে হবে। কলম রোপণ করার ক্ষেত্রে অন্তত ১৫-২০ দিন আগে সোয়া ২৩ ফুট × সোয়া ২৩ ফুট দূরত্বে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের আকার হবে সোয়া ৩ ফুট × সোয়া ৩ ফুট। এই গর্ত খোলা অবস্থায় রাখতে হবে। কলম রোপণ করার ১০-১৫ দিন আগে গর্তে সার ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন - Capsicum Farming: বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ, দেখে নিন দুর্দান্ত কৌশল
গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি পচা গোবর , টিএসপি ৩০০-৪০০ গ্রাম, পটাশ ২৫০-৩০০ গ্রাম, জিপসাম দিতে হবে ২০০ গ্রাম এবং দস্তা ৫০ গ্রাম দিয়ে গর্তের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে। মাটিতে যদি রসের ঘাটতি থাকে তাহলে জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা:
গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর বাছাই করা চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে বসাতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন ঠিক ভাবে খাড়া থাকে এবং কোনো আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। চারা রোপন করার পর পরপর কয়েকদিন জল দিতে হবে। চারার চারদিকে খুটি ও বেড়া দিয়ে দিতে হবে। তারপর ১-২ দিন পর পর জল দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ:
এক থেকে তিন বছর এর চারার ক্ষেত্রে গোবর সার দিতে হবে কেজি প্রতি ১০-১৫ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ৩০০-৪০০ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ৩০০-৪০০ গ্রাম এবং এমওপি প্রয়োগ করতে হবে ৩০০-৪০০ গ্রাম। চারা থেকে ছয় বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে ১৫-২০ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ৪০০-৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০-৬০০ গ্রাম এবং এমওপি দিতে হবে ৪০০-৬০০ গ্রাম। সার প্রয়োগ তিন কিস্তিতে করতে হবে। প্রথম কিস্তি সার প্রয়োগ করতে হবে বর্ষার শুরুতে। তারপর দ্বিতীয় কিস্তি সার দিতে হবে বর্ষার শেষে এবং সব শেষে তৃতীয় কিস্তি সার প্রয়োগ করতে হবে শীতের শেষে। মাটির সাথে ভালোভাবে সার মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর জমিতে সেচ দিতে হবে।
সেচ:
জলপাই গাছ শুকনো আবহাওয়া ও খরা সহ্য করতে পারে। তাই বৃষ্টিপাতের পরিমান, জমির মাটি ও গাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে জমিতে জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারনত শীতকালে চার থেকে পাচ সপ্তাহ পর ও গ্রীষ্মকালে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরপর জল সেচ দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। গাছে ফল ধরার পর কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হবে। বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় জল যেন জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
রোগবালাই ও পোকা মাকড় দমন:
জমিতে রোগ ও পোকা মাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। রোগ আক্রমণ করলে আক্রান্ত ডাল পাতা ফেলে দিতে হবে। ছত্রাক নাশক যেমন ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম করে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
জলপাই গাছে সাধারনত বর্ষার শুরুতে ফুল আসে আর শীতের আগে ফল পাকে। ফল পাকার পর তা সবুজ থাকে। তাই ফল সংগ্রহ করার সময় ফলের আকারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তুলনামূলক বড় আকারের ফল সংগ্রহ করতে হবে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছরি প্রায় ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Mrigal Fish Farming: বর্ষায় ধান জমিতে মৃগেল মাছ চাষে হন লাভবান