অনেকসময় কৃষকরা ধানের (Paddy farming) কীটশত্রুর জন্য ভালো ফলন পাননা | তাই, ধানের রোগপোকামাকড়কে দমন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় | সঠিক ব্যাবস্থার মাধ্যমে ও সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ করে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় | প্রথমে জেনে নিতে হবে কি কি রোগ দেখা দায় এবং তাদের প্রতিকার কি কি |
রোগবালাই(Paddy Disease):
১)মাজরা পোকা
এ রাজ্যে হলুদ মাজরা পোকার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। পূর্ণাঙ্গ হলুদ মথ পাতার নীচের বা উপরের দিকে সাদা পুথির মত গুচ্ছাকারে দিম পাড়ে।
ডিম্ ফুটে সবুজ কীড়া বেরিয়ে এসে কাণ্ডের ভিতর প্রবেশ করে। কীড়া কাণ্ডের ভিতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খায়। পাশকাঠি ছাড়ার সময় এদের আক্রমন হলে মরা পাশকাঠি হয়। শিষ বের হওয়ার সময় আক্রমন হলে মরা শিষ হয়। সাধারনত পাশকাঠি ছাড়া থেকে ফুল আসা পর্যন্ত এদের আক্রমন দেখা যায়।
২)পাতামোরা পোকা
এই পোকার সবুজ কীড়া মুখের লালা দিয়ে পাতার দুই কিনারা জুড়ে নল সৃষ্টি করে। এই নলের মধ্যে কীড়া থেকে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত পাতার ডগা সাদাটে হয়। আক্রমন বেশি হলে পাতার উপর অংশ খড়ের মত দেখায়। এটিও পাশকাঠি ছাড়া থেকে ফুল আসা পর্যন্ত ক্ষতি করে।
৩)সবুজ শ্যামাপোকা
সবুজ রঙের পোকা গাছের গোড়া থেকে রস চুষে খায় এবং গাছ হলদে হয়ে ঝলসে যায়। রস চোষার সময় এরা টুংরো ভাইরাস গাছের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। পাশকাঠি বের হওয়ার সময় অল্প সংখ্যায় দেখা গেলেও ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয় কচি থোর থেকে ধান পাকা পর্যন্ত কারন এই সময় এদের সংখ্যা বেড়ে যায়।
৪)গন্ধি পোকা
পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ কীট ধানের বৃদ্ধির শিষ আসার সময় বেশি ক্ষতি করে। এরা ধানের শিষ চুষে খায়। ধান আংশিক বা সম্পূর্ণ চিটে হয়ে যায়। ধানের যে অংশ চুষে খায় সেই অংশ বাদামী রঙের ক্ষত বা দাগ দেখা যায়।
আরও পড়ুন - Lotus cultivation guide: কিভাবে ঘরে চাষ করবেন পদ্মফুল, জেনে নিন পদ্ধতি
নিয়ন্ত্রণ(Disease management remedies):
সহনশীল জাত:
সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হল সহনশীল অ কীট প্রতিরোধী জাত নির্বাচন। দীর্ঘমেয়াদী জাতের তুলনায় স্বল্পমেয়াদি জাত নির্বাচন। স্বর্ণ ও আইআর-৩৫ পোকা সহনশীল জাত। বর্তমানে আরও কীট সহনশীল ও প্রতিরোধী জাত ব্যবহার হচ্ছে।
জমি তৈরি:
ধানের জমি তিন থেকে চার বার গভীর চাষ দিয়ে কর্ষণ করতে হবে এবং রোদ খাওয়াতে হবে |জমিটিকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের গোড়া ও নারা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
বীজ তলায় শস্য রক্ষা:
গাছের চারাকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য বীজতলায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এরফলে কীটনাশকের উপর খরচ কম হয় এবং মূলজমিতে কীটশত্রুর বিস্তার কম হয়। মাজরা পোকা দমনে এই ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।
চারা শোধন:
বীজ তোলা থেকে চারা তোলার পর পাতার উপরের দিকে খানিকটা ছিঁড়ে ফেলতে হবে। এরফলে মাজরা পোকা ও পাতামোরা পোকার ডিম্ নষ্ট হবে। চারা লাগানোর আগে বীজ শোধন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ৩ মিলি ইমিডাক্লোপিড প্রতি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে চারা শোধন করতে হবে।
মূল জমি তৈরি:
পচানো জৈব সার জমিতে ভাল ভাবে মেশাতে হবে। আলের ধারের আগাছা নষ্ট করতে হবে। সুপারিশ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোয়া:
সঠিক দূরত্বে চারা বসাতে হবে। বাদামী শোষক পোকার আক্রমণ যেখানে বেশী সেখানে ঘন করে বসানো যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রতি সাত থেকে আট সারির পর একসারি রোয়া যাবে না। এছাড়া নিয়মিত আগাছা নিয়ন্ত্রন ও প্রয়োজন মত জলসেচ দেওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় টিপস(Paddy protection tips):
১) পাটের দরি কেরসিনে ভিজিয়ে ধানের জমির উপর টানলে পামরি ও চুঙ্গি পোকাকে দমন করা যায়।
২) ধানের কীটশত্রু দমনের ক্ষেত্রে আমাদের জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত যেমন নিমজাত কৃষি বিষ। তামাক পাতার নির্যাস। জৈব কীটনাশক কীটশত্রু ধ্বংস করলেও বন্ধু পোকার কোন ক্ষতি করে না। রাসায়নিক কীটনাশক আমরা সবসময় সর্বশেষ কৌশল হিসাবে গ্রহণ করব।
৩) নিয়মিত জমি পরিদর্শন ও আক্রান্ত পাতা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে |
৪) ইঁদুর ও শীষকাটা লেদা পোকা নিয়ন্ত্রনে জমিতে পাখি বসার জন্য গাছের ডালপালা পোঁতার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) রোগ ও পোকার আক্রমণ বেশি হলে নাইট্রোজেন সার চাপান হিসাবে ব্যভার না করে মিউরিয়েট অব পটাশ সার বিঘা প্রতি ৫ কেজি হারে ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হলে তখন চাপান হিসাবে নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Corn cultivation method: জেনে নিন ভুট্টা চাষের সহজ পদ্ধতি ও পরিচর্যা