পেঁপে এক অতি উপকারী সবজি তথা ফল | সারাবছরই এর বাজারে চাহিদা থাকে | তাই, ব্যাবসায়িক লক্ষ্যে এর চাষ সারাবছর করা যেতে পারে | পেঁপের অধিক গুনাগুন, এই ফলকে অন্য অনেক ফলের থেকে এগিয়ে রেখেছে | তাই, পেঁপের চাষাবাদে কৃষকরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হয়ে থাকে |
মাটি(Soil):
উঁচু জায়গা, নিকাশির ভাল বন্দোবস্ত আছে, সেখানে পেঁপে চাষ করতে হবে। কারণ জল দাঁড়ানো অবস্থা পেঁপে গাছ সহ্য করতে পারে না। বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি এই চাষের জন্য ভাল। অধিক অম্ল ও অধিক ক্ষার মাটিতে পেঁপে চাষ ভাল হয় না।
চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা হয়। রোগমুক্ত উন্নত গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর বীজগুলোকে শুকনো ছাই মাখিয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে শোকাতে হবে। বীজ শোধন করা অত্যন্ত জরুরি। পচা ঝুরঝুরে গোবর সার এবং পাতা পচা সার মিশিয়ে বীজতলা বানাতে হবে। বীজতলা ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে। ৫ সেমি দূরত্বে ২-৩ সেমি গভীরে বীজ পুঁতে হালকা করে উপরে পাতাপচা সার বা মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন মতো ঝারি দিয়ে জল দেবেন। বীজতলায় চারা ১০ সেমি মতো বড় হলে মূল জমিতে স্থানান্তর করতে হবে। মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বীজ বুনে ফেলতে পারলে ভাল। তবে জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে অক্টোবর মাসেও পেঁপের চারা লাগানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Hydroponics Farming: হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান
চারা রোপণ পদ্ধতি(Plantation):
দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ৪৫ সেমি করে গর্ত খুঁড়ে তাতে সার দিতে হবে। এর জন্য ১০ কেজি গোবর সার, ১ কেজি নিম খোল, ১০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি, ২৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট ভাল করে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন ঢেকে রাখতে হবে। এরপর গর্তে সারমাটি মিশিয়ে দিতে হবে। সাবধানে বীজতলা থেকে মাটি সমেত চারা তুলে লাগাবেন। শিকড়ের যেন কোনোভাবে ক্ষতি না হয়। প্রতি গর্তে ৩টি করে চারা লাগাতে হবে। ৫-৬ মাসের মধ্যে যখন গাছে ফুল আসবে তখন প্রতিটি গর্তে স্ত্রী বা উভলিঙ্গের গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে দিতে হবে। তবে, প্রতি ১০টি গাছের জন্য ১ টি পুরুষ গাছ না রাখলে আবার পরাগসংযোগ ভাল ভাবে হবে না। এতে ফলনও কমে যাবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
ফল আসার লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে জৈব ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, ফসফেট ২৫০ গ্রাম, পটাশ ৭৫ গ্রাম ২০ কেজি গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের চারপাশে দিতে হবে। অণুখাদ্যের প্রয়োজন হলে স্প্রে করতে হবে পাতায়।
পরিচর্যা:
নিয়মিত জল দিতে হবে গাছে। আবার জল যাতে না দাঁড়ায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আগাছা যেন না হয়, আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। গোড়ার মাটি হালকা করে খুঁড়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। স্ত্রী ফুল বাড়াতে পেঁপে গাছের ৪-৫ মাস বয়সে ইথারেল ১ মিলি প্রতি ৪ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এনএএ ৪০ এমজি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে স্ত্রী ফুল বাড়ে।
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
কান্ড পচা রোগ:
বীজে রোগ আক্রমণ করলে চারা গজানোর আগেই পচে যায়। চারা আক্রান্ত হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের জল ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। তখন গাছ ঢলে পড়ে মরে যায় |
মোজাইক রোগ:
এ রোগে গাছের পাতায় সবুজ ও হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির হয়। অনেক সময় পাতা সম্পূর্ণ কুঁকড়ে যায়।
পাতা কোঁকড়ানো রোগ:
এ রোগের আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতার শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হয়। গাছ আকারে ছোট এবং ফলন কম হয়। এ রোগের ভাইরাস সাদা মাছি দ্বারা গাছ থেকে গাছে ছড়ায়।
"রিডোমিল এম জেড-৭২" পচন রোধক কীটনাশক প্রতি লিটারে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ পরপর গাছের গোড়ার চার দিকে ছিটিয়ে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায়।
আরও পড়ুন -Snake Gourd Farming: জেনে নিন চিচিঙ্গা চাষের সহজ পদ্ধতি