সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সারাবছর সবজি চাষে ভালোই লাভ করা যায় | তেমনি, এই খরিফ মৌসুমে (বর্ষায়) কিছু সবজি চাষে (Rainy season vegetables farming) কৃষকবন্ধুরা লাভ করতে পারেন |
এই নিবন্ধে সেইসব লাভজনক সবজি কোনগুলি ও তাদের চাষ বিস্তারিত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;
জুলাই মাস থেকেই কৃষকরা চাষের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন | সবজি চাষির জন্য এ সময়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার মধ্যে ফলন নেয়ার জন্য এমন সবজি নির্ধারণ করতে হবে যা স্যাঁতসেতে আবহাওয়াতেও মানিয়ে নেয়, গাছ মারা যায় না। ধুন্দল এমন একটি গাছ যা বৃষ্টিতেও সহজে মরে না। লাউ গাছ স্যাঁতসেতে মাটি পছন্দ করে। করলা, ঝিঙ্গা গাছও বৃষ্টিতে সহজে মরে না। তবে বর্ষায় সবজি চাষের জন্য গাছের গোড়া অবশ্যই উচু করে রাখতে হবে অথবা উচু বেড করে গাছ লাগাতে হবে। মালচিং দিয়ে চাষ করলে আরো উত্তম হয়। ধুন্দল ও লাউ গাছ বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে লাগিয়ে দিলে বর্ষায় অল্প কিছু এবং বর্ষার পরেও বেশ কিছু ফলন দিবে। এ দুটি গাছ দির্ঘদিন ফলন দিতে পারে |
বর্ষাকালীন সবজি চাষ (Rainy season vegetables):
পেঁয়াজ (Onion):
বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে ব্যাপক আর্থিক লাভ পাওয়া যায় | প্রায় ১৪০-১৪৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ চাষে সময় লাগলেও এটি মূলত শীতের সময়ে চাষ করা হয়৷ তবে খারিফ মরসুমেও এর চাষ হয়৷ উন্নত মানের জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত বেলে-দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ এসময় ভালো হয়৷ এ পিএইচ মান ৬-৭.৫ -এর মাঝে হলে তা পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম বলে ধরা হয়৷ খারিফ মরসুমে এক হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রায় ১০-১৫ কিলো বীজের নার্সারি করতে হবে৷ এগ্রিফাউন্ড লাইট রেড, এন-৫৩, এগ্রিফাউন্ড ডার্করেড, ভীমা সুদর, রেড (এল-৬৫২), অর্কা কল্যাণ, অর্কা প্রগতি ইত্যাদি জাতের পেঁয়াজ চাষ করা যেতে পারে |
করলা (Bitter Gourd):
করলা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে৷ এর জন্য বাজারে এর চাহিদাও অনেক৷ এই করলা চাষ করেই কৃষকেরা প্রচুর উপার্জন করতে পারেন৷ সমগ্র ভারতে যে কোনও মাটিতে এর চাষ সম্ভব৷ এর ভালো বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং দোআঁশ মাটি হলে ভালো হয় | বর্ষায় করলা চাষ কম পুঁজিতে করে ফেলা সম্ভব | পুসা হাইব্রিড ১,২, পুসা বিশেষ, কল্যাণপুর, প্রিয়া কো-১, এস ডি ইউ- ১, কোয়েম্বাটুর লং, কল্যাণপুর সোনা, বারোমাসি করলা, পঞ্জাব করোলা-১, পঞ্জাব-১৪, সোলন, বারোমাসি প্রভৃতি জাতের করলা চাষ করা যেতে পারে |
মিষ্টি কুমড়ো, চাল কুমড়ো (Pumpkin):
লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর 'এক্স' আকৃতিতে বা 'ভি' আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়। এই ধরণের সবজি চাষ স্বল্প পুঁজিতে সহজেই করা যায় |
আরও পড়ুন - কালোজিরা চাষ থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, জানুন চাষের পদ্ধতি
ঢ্যাঁড়শ (Ladies finger):
যে কোনও মাটিতেই ঢ্যাঁড়শ বা ভেন্ডির চাষ করা যেতে পারে৷ মূলত শুষ্ক-আর্দ্র আবহাওয়ায় ঢ্যাঁড়শ চাষ ভালো হয়৷ তবে এখন সারা বছরই মোটামুটি এটি চাষ করা যায়৷ তবে মাথায় রাখতে হবে ঢ্যাঁড়শ গাছে মোজাইক রোগের প্রকোপ সবথেকে বেশি দেখা যায়৷ এই রোগে গাছের পাতা হলুদ হয়ে কুঁকড়ে যায়৷ এই অবস্থায় আক্রান্ত গাছকে দ্রুত সেখানে থেকে তুলে এনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে তা না হলে অন্যান্য গাছেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ পুসা এ-৪, পরভনী ক্রান্তি, পঞ্জাব ৭, অর্কা অনামিকা, বর্ষা উপহার, অর্কা অভয়, হিসার নবীন, এইচ বি এইচ ইত্যাদি জাতের ঢ্যাঁড়শ চাষ করা যায় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Banana Farming: জেনে নিন আধুনিক উপায়ে কলা চাষের সঠিক পদ্ধতি