বহু সবজি শীতকাল বা গ্রীষ্মকালের চাষ করা হলেও, বছরের অন্যান্য সময়েও তার চাষ সম্ভব, আর অফ সিজনে এইসব সবজি চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারলে তা আপনার পক্ষে লাভজনকও (Profitable Farming) হবে ভালোই৷ চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন সবজিগুলি আপনি চাষ করার কথা ভাবতে পারেন৷
ফুলকপি- সাধারণত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফুলকপির চাষ (cauliflower farming) করা হয়ে থাকে৷ এসময় ভালো মানের ফুলকপি চাষ করে কৃষকেরা সারাবছরের মুনাফা অর্জন করার চেষ্টা নিযুক্ত থাকেন৷ তবে খামখেয়ালি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে সময় থাকতে ফুলকপির চাষ করতে পারেন কৃষকেরা৷ চলতি মরসুমেও তাই চাইলে এর চাষ করা যেতে পারে৷ প্রসঙ্গত, এর জন্য জমির পিএইচ মান ৫-৭ এর মধ্যে হতে হবে, তাহলেই ফলন ভালো হবে, এবং সেই সঙ্গে জমি যেন জলনিকাশি হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷
উনন্তমানের বীজ- পুসা আগেতি, পুসা স্নোবল ২৫, পুসা কার্তিক, পুসা আর্লি সেন্থেটিক, পাটনা আগেতি প্রভৃতি৷
মূলো (Radish)- সমগ্র দেশে মূলো প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, পঞ্জাব, অসং, হরিয়ানা, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ এইসব রাজ্যে চাষ করা হয়ে থাকে৷ দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়৷ এর জন্য মাটির পিএইচ মান ৬.৫-এর কাছাাছি হলে ভালো৷
উন্নতমানের বীজ- পুসা দেশি, পুসা চেতকি, আর্কা নিশান্ত, জোনপুরি, বম্বে রেড, পুসা রেশমি, পঞ্জাব আগেতি, আই এইচ আর ১-১ প্রভৃতি৷
করলা (Bitter Gourd)- করলা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে৷ এর জন্য বাজারে এর চাহিদাও অনেক৷ এই করলা চাষ করেই কৃষকেরা প্রচুর উপার্জন করতে পারেন৷ সমগ্র ভারতে যে কোনও মাটিতে এর চাষ সম্ভব৷ এর ভালো বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং দোআঁশ মাটি হলে ভালো হয়৷
উন্নতমানের করলা বীজ- পুসা হাইব্রিড ১,২, পুসা বিশেষ, কল্যাণপুর, প্রিয়া কো-১, এস ডি ইউ- ১, কোয়েম্বাটুর লং, কল্যাণপুর সোনা, বারোমাসি করলা, পঞ্জাব করোলা-১, পঞ্জাব-১৪, সোলন, বারোমাসি প্রভৃতি৷
বেগুন (Brinjal)- চলতি মরসুমে বেগুনের চাষ করতে পারেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত দোআঁশ মাটি এই বেগুন চাষের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়৷ চাষের জমিতে এক হেক্টরে প্রায় ৪-৫ ট্রলি গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে বেগুন চাষের আগে৷ গোল বা লম্বা যে কোনও ধরনের বেগুনই আপনি চাষ করতে পারেন৷
লম্বা বেগুন- পুসা পার্পল ক্লাস্টার, পুসা ক্রান্তি, পুসা পার্পল লং প্রভৃতি৷
গোল বেগুন- এইচ ৪, পি ৮, পুসা আনমোল, পুসা পার্পল রাউন্ড, পি বি ৯১-২, টি-৩, এইচ-৮, ডি বি এস আর ৩১, ডি বি আর-৮ প্রভৃতি৷
শঙ্কর প্রজাতি- অর্কা নবনীত, পুসা হাইব্রিড-৬৷
পেঁয়াজ (Onion)- প্রায় ১৪০-১৪৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ চাষে সময় লাগলেও এটি মূলত শীতের সময়ে চাষ করা হয়৷ তবে খারিফ মরসুমেও এর চাষ হয়৷ উন্নত মানের জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত বেলে-দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ এসময় ভালো হয়৷ এ পিএইচ মান ৬-৭.৫ -এর মাঝে হলে তা পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম বলে ধরা হয়৷ খারিফ মরসুমে এক হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রায় ১০-১৫ কিলো বীজের নার্সারি করতে হবে৷
উন্নতমানের পেঁয়াজ- এগ্রিফাউন্ড লাইট রেড, এন-৫৩, এগ্রিফাউন্ড ডার্করেড, ভীমা সুদর, রেড (এল-৬৫২), অর্কা কল্যাণ, অর্কা প্রগতি৷
ভারতীয় স্কোয়াস বা টিন্ডা- ভারতীয় স্কোয়াসের প্রচলিত নাম টিন্ডা, ইংরেজিতে যাকে বলে Apple Squash. এটি সুস্বাদু এবং এর তরকারি স্বাস্থ্যকরও৷ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান যা পেটের নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে৷ তাই এর চাহিদাও প্রচুর৷ চলতি মরসুমে এর চাষ আপনাকে লাভের মুখ দেখাতে পারে৷ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে এর চাষ করা হয়, তবে আপনি জুলাই মাসেও এর চাষ করতে পারেন৷ জলধারণক্ষমতাযুক্ত দোআঁশ মাটি এই চাষের জন্য উপযুক্ত৷ গরম-আর্দ্র জলবায়ুতে এর ফলন ভালো হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় কিলোগ্রাম বীজ বপন করা যেতে পারে৷
উন্নতমানের বীজ- টিন্ডা এস ৪৮, হিসাপ সলেক্সন ১, বিকানেরি গ্রীন, অর্কা টিন্ডা প্রভৃতি৷
আরও পড়ুন- জুলাইয়ে এই কয়েকটি সবজি চাষেই (Profitable Farming) হতে পারে প্রচুর উপার্জন