অনেকেই বিদেশি ফল চাষের প্রতি আগ্রহ দেখায় | তার মধ্যে রাম্বুটান ফল অন্যতম | এই রাম্বুটান বেশ আকর্ষণীয় ও অনেক সুস্বাদু একটি ফল। এর জন্মস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে। এছাড়াও দক্ষিণ চীন, ইন্দোচীন, ফিলিপাইনের সর্বত্র এটিকে পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে এর সফলভাবে চাষ হচ্ছে।
ফলটি দেখতে লিচুর মতো, আমাদের লিচুর গায়ে কন্টক বিশিষ্ট হলেও রাম্বুটানের গায়ে দাড়িসদৃশ অংশ বিদ্যমান। ফল সাদা, স্বচ্ছ, অম্লীয় মিষ্টি গন্ধযুক্ত শাঁস এই ফলের ভক্ষনযোগ্য অংশ। রাম্বুটান শর্করা ও ভিটামিনে ভরপুর একটি ফল। ১০০ গ্রাম ফলে জলীয় অংশ ৮২.১ ভাগ, প্রোটিন ০.৯ ভাগ, ফ্যাট ০.১ ভাগ এবং আশঁ ০.০৩ ভাগ। এছাড়া ২.৮ গ্রাম গ্লুকোজ, ৩ গ্রাম ফ্রুক্টোজ, ৯.৯ গ্রাম সুক্রোজ, ২.৮ গ্রাম ফাইবার থাকে | তাই, এই ফল চাষে (Rambutan fruit farming) বেশ লাভও পাওয়া যায় |
মাটি(Soil):
উঁচু, বেলে দো-আঁশ মাটি রাম্বুটান চাষের জন্য ভালো। তবে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতেও চাষ হয়ে থাকে |সাধারণত, মাটিতে বেশি জৈবপদার্থ থাকলে বা দিলে রাম্বুটানের গাছ ভালো বাড়ে ও ফল বেশি ধরে |মাটির অম্লমান বা পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে হওয়া ভালো।
জলবায়ু(Climate):
এশীয় দেশগুলোতে ২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে রাম্বুটান জন্মে। কিছুটা ঠাণ্ডা অঞ্চলে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ভালো হয়। যেসব এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে রাম্বুটান ভালো হয়। তা না হলে বেশি সেচ দিতে হবে।
জাত:
বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ফিলিপাইনের সিবাবাত, সিঙ্গাপুরের লি, মালয়েশিয়ার পি১, পি৪, পি৫, পি৬, পি৮, পি২২, পি২৮, পি৫৪, পি৬৩ এবং ইন্দোনেশিয়ার মেরাহ ও কোয়েনেং জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন -Muskmelon cultivation guide: জেনে নিন সহজ উপায়ে বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের পদ্ধতি
জমি তৈরী:
রাম্বুটানের জন্যে এটেল দোঁ-আশ এবং সুনিষ্কাশিত উঁচু ধরণের জমি নির্বাচন করতে হয়। এই ফলের জন্যে মাদা তৈরি করতে হয়।
মাদা তৈরী:
প্রতিটি গাছের জন্যে কমপক্ষে ৮ মিটার দূরত্ব রেখে কলম করতে হবে। গর্তের সাইজ হবে ১ মিx ১ মি x ১ মি। কলম বা চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে উপযুক্ত পরিমাণে জৈব সার দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫-৩০ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম জিং সালফেট ভালভাবে মিশিয়ে গর্তে ভরাট করতে হবে। মাটি শুষ্ক হয়ে গেলে জল সেচ দিতে হবে।
চারা তৈরী:
জোড়কলম করে রাম্বুটানের চারা তৈরি করা হয়। বীজ থেকে গজানো এক বছর বয়সী চারার মাথা কেটে, সেখানে ফাটল করে ফল ধরা কোনো রাম্বুটান গাছের ডগা তেরছা করে কেটে গোজের মতো ঢুকিয়ে ফিতে দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এ পদ্ধতিকে বলে ক্লেফট গ্রাফটিং।চোখকলম করেও সুঠাম আকৃতির ভালো গাছ পাওয়া যায়। বসন্তকাল আসার ঠিক আগে চোখকলম করার উপযুক্ত সময়।
রোপণের সময়:
মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
সার প্রয়োগ:
১- ২ বছর গাছের জন্য গোবর সার ১০-১৫ কেজি , ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ১৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
২-৪ বছর গাছের জন্য গোবর সার ১৫-২০ কেজি , ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ৪৫০ গ্রাম, এমওপি ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
৩-৭ বছর গাছের জন্য গোবর সার ২০-২৫ কেজি, ইউরিয়া ৪৫০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৪৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
৮-১০ বছর গাছের জন্য গোবর সার ২৫-৩০ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ১২০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
১০-১৫ বছর গাছের জন্য গোবর সার ৩০-৪০ কেজি, ইউরিয়া ১২০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫৫০ গ্রাম, এমওপি ৭৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
১৫ বছরের উর্ধ্বে গাছের জন্য গোবর সার ৪০-৫০ কেজি, ইউরিয়া ১৫০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০০ গ্রাম, এমওপি ১০০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয় |
সেচ:
রাম্বুটান খরা সংবেদনশীল উদ্ভিদ। নিয়মিত জল প্রদান না করলে গাছ মরে যেতে পারে। আবার গাছের গোড়ায় জল জমে থাকা যাবে না। শুকনো মৌসুম বিশেষত শীতকালে ১০-১৫ দিন পরপর জল সেচ দিতে হবে। গাছে কুঁড়ি দেখা দিলে একবার, ফল মটরদানার মতো বাড়লে একবার ও ১৫ দিন আরও একবার জল দিতে হবে। নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত মাটি ব্যবহার করতে হবে যেন বর্ষায় গাছের গোড়ায় জল না জমে।
ফল সংগ্রহ:
শ্রাবণ মাসে এই ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়ে যায়। সাধারণত ফলের রঙ লালচে বর্ণ ধারণ করলেই ফল সংগ্রহ করা শুরু করতে হবে। উপযুক্ত বাজারমূল্য পেতে ফল লালচে-খয়েরি বর্ণ ধারণ করার ১০-১২ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন -Worm control in agricultural field: জেনে নিন কৃমির উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার উপায়