রুফটপ গার্ডেনিং (আরটিজি) হল বাড়ির ছাদের উপরে টবে বা বেড নির্মিত করে, সেখানে বৃক্ষরোপণ করা। এতে একদিকে যেমন গৃহস্থালির সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়, তেমনই এর সাথে সাথে মেলে সতেজ এবং মানসম্পন্ন ফল। এই প্রক্রিয়া পরিবেশকে সতেজ করে তোলে। বাড়ির ছাদে এই অরণ্যায়ন এমন একটি পদ্ধতি, যা পরিবেশ, নগরের ভূদৃশ্য, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে, জনসংখ্যার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে, একঘেয়ে ভাঙা, পরিবেশকে কিছুটা সতেজ রাখতে, এর সুন্দর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে বাড়ির ছাদে উদ্যান নির্মাণ। এটি বাড়ির উপরের তলায় অর্থাৎ ছাদে থাকায় গ্রীষ্মকালে চরম উত্তাপ এবং শীতকালে প্রখর শীতের তাপমাত্রা থেকে বাড়ির লোকদের রক্ষা করে। সুতরাং, এটি খাদ্য সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের অবক্ষয়কে রক্ষা করতেও প্রভূত সহায়তা করে।
নগর অঞ্চলে দূষণের মোকাবেলা করতে আরটিজির ভূমিকা:
আরটিজি শহুরে অঞ্চলে পরিবেশ এবং বায়ু দূষণ, খাদ্য সুরক্ষা সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে খুবই কার্যকর। আরটিজির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে, যেমন –
- খাদ্যের সম্ভাব্য উত্স: জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আবাদকৃত অঞ্চল হ্রাসের সাথে নগর উদ্যানতত্ত্বের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসভবনের ছাদে বিভিন্ন ধরণের অগভীর মূলের ফল, শাকসব্জী, ফুল ইত্যাদি জন্মাতে পারে। এটি খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য এটি জরুরী। এই উৎসটি তাজা এবং পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করবে।
- কীট এবং রোগের উপদ্রব হ্রাস: বেশীরভাগ পোকামাকড় ও অণুজীবের বংশবৃদ্ধির প্রাথমিক জায়গা হল মৃত্তিকা। সুতরাং, ছাদের ক্ষেত্রে প্রজনন স্থান স্বল্প পরিমাণ প্রাপ্যতার কারণে কীটপতঙ্গ ও রোগ বংশবিস্তার করে অনেক কম। ছাদে অরণ্যায়নের গাছগুলির ক্ষেত্রে পোকার উপদ্রব এবং রোগগুলি স্থল অবস্থায় জন্মানো উদ্ভিদের তুলনায় অনেক কম হয়। ছাদে জন্মানো উদ্ভিদগুলির জন্য কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের প্রয়োজন কমে যায়। এইভাবে এটি শহুরে মানুষদের জন্য তাজা শাকসবজীর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ করে।
- সুখানুভূতি: নগর অঞ্চলে সবুজের সান্নিধ্য নান্দনিক মানের কারণে মানুষের মস্তিষ্কের চাপ কমায়, তাকে মানসিকভাবে প্রশান্তি প্রদান করে এবং সামগ্রিক সুখানুভূতি উপলব্ধ হয়। আরটিজি দূষণের মাত্রা রোধ করে এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করে, মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
- বাতাসের গুণমানের উন্নতি : ছাদে নির্মিত উদ্যান কেবল উদ্ভিদের দ্বারা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নয়, এটি ক্রমবর্ধমান স্থানে প্রত্যায়িতভাবে বায়ুতে মিশ্রিত দূষিত কণা এবং দূষিত গ্যাস সংশোধন করে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে। এই সবুজায়ন বাতাসে ধূলিকণা এবং ধোঁয়ার পরিমাণ হ্রাসেও সহায়তা করে, যার ফলে শহরাঞ্চলে গ্রীন হাউস নিঃসরণ হ্রাস পায়।
- বৃষ্টির জলের যথাযথ ব্যবহার : বৃষ্টির জল অবাধ, প্রকৃতির শক্তি এবং বন্ধনহীন এই জল কে যথাযথভাবে ব্যবহার করে ছাদে উদ্যান নির্মাণ করা সর্বাধিক উপযুক্ত একটি বিষয়। এই উদ্যানগুলি গ্রীষ্মে ৮০ শতাংশ এবং শীতকালে ৪0 শতাংশ পর্যন্ত বৃষ্টির জল ধারণে সক্ষম। ব্যবহৃত জল পরিবাহক এবং বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়।
- শক্তির কার্যকারীতা : আরটিজি অসাধারণ তাপ নিরোধক রূপে কার্য করে, শীতকালে উষ্ণতা বজায় রাখে এবং গ্রীষ্মে তাপমাত্রা শীতল রাখে। এটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সাহায্য করে, যা পরবর্তী সময়ে শক্তি ও অর্থ সংরক্ষণে সহায়ক। প্রকৃতপক্ষে, কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ছাদে নির্মিত উদ্যান প্রকৃতপক্ষে তাপমাত্রার তারতম্য সংশোধন করতে পারে, ছাদের মধ্য দিয়ে মাঝারি তাপ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বসন্ত ও গ্রীষ্মের উত্তপ্ত ঋতুতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে শক্তির চাহিদা হ্রাস করে ।
- নগর উষ্ণায়ন (UHI) নিয়ন্ত্রণ : সূর্য উদ্ভিদের তুলনায় কংক্রিট পদার্থকে দ্রুত উষ্ণ করে তোলে এবং নগর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কংক্রিট নির্মিত ইমারত থাকায় সমগ্র বছর ধরেই নগর অঞ্চল প্রচন্ড উষ্ণ হয়ে থাকে। শহরে সবুজায়ন বাষ্পীভবন চক্রের মাধ্যমে এই অধিক উষ্ণতা হ্রাস করে, সমগ্র শহরকে শীতলতা প্রদান করে এবং উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
- আয়ের উত্স: ফসল (ফল, শাকসবজী) অধিক পরিমাণে উৎপাদিত হলে তা পারিবারিক কার্যে ব্যবহারের পাশাপাশি, মালিক সেই ফসল বিক্রি করতে পারেন এবং এই পদ্ধতিতে সারা বছর ধরে এটি থেকে তিনি সহজেই আয়-ও করতে পারবেন।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র - ড. সঞ্জীব কুমার দেবনাথ