লাউ চাষ (Bottle Gourd) আমাদের রাজ্যে অনেক জায়গাতেই হয়ে থাকে। আগে শুধু শীতকালে বেশী ফলন হলেও এখন সারা বছরই এটি বাজারে পাওয়া যায়।
যে কোন ফসল চাষে কৃষকের লক্ষ্য থাকে তাদের জন্য সঠিক পরিমাণ অর্থ উপার্জিত হয়। কিন্তু ফসলের ক্ষেত্রে রোগ পোকার আক্রমণ এমন একটি সমস্যা, যা ফসলের ফলনে প্রভাব ফেলে। তাই লাউ চাষ করে কৃষকরা যাতে বেশী অর্থ উপার্জন করতে পারেন, পর্যাপ্ত ফলন পেতে পারেন, তার জন্য আজ আমরা এই নিবন্ধে লাউ চাষের রোগ এবং কীট প্রতিরোধ সম্পর্কে বলতে চলেছি।
চলুন জেনে নেওয়া লাউ ফসলে রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি
(Disease Management) -
কাটুই পোকা দমনের পদ্ধতি:
১) কাটুই পোকা চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। এটি দমন করার জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি বজ্র ২.৫ ইসি মিশিয়ে বিকাল বেলা গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
২) রেড পাম্পকিন বিটল দমনের পদ্ধতি:
রেড পাম্পকিন বিটল লাউয়ের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে থাকে। এটি দমনের জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সাইরাক্স বা ১ মিলি বজ্র মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ছত্রাক জনিত সাদা দাগ প্রতিরোধ (Powdery Mildew) :
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় । এটি ছত্রাকজনিত কারনে হয়ে থাকে।ইহার জন্যে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা মনোভিট ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
পাতা সুড়ঙ্গকারী ছোট পোকামাকড় এর আক্রমণ রোধ:
ছোট কীড়া পাতার সবুজ অংশ সুড়ঙ্গ করে খেয়ে সুতার মতো আঁকা বাঁকা রেখা দাগ করে ফেলে। বেশি হলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এটির জন্যে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা উচিত। আঠালো হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমনঃ কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
অন্যান্য সমস্যাঃ
১.এক ধরনের বিশেষ পোকা আছে যা পাতা, ফুল ও কচি ফলের রস চুষে খায়, পাতা কুঁকড়ে যায় ।তাছাড়া এই পোকা হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
এটির জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিলি ইমিক্সস্ট্রীম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
২.গ্যামোসিস ছত্রাকজনিত রোগে লাউ গাছের কান্ড থেকে গাম বা আঠা বাহির হয়।। এটির জন্যে আক্রান্ত স্থান চাকু দিয়ে চেচে কুপ্রোফিক্স এর পেষ্ট লাগিয়ে দিতে হবে এবং সেই সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম কুপ্রোফিক্স এবং ১ গ্রাম ইউনিজুম মিশিয়ে ৭ -১০ দিন পরপর নিয়মিত ভাবে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Guava Farming: এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষে আপনিও লাভ করতে পারেন দ্বিগুন
সতর্কতা-
সকল কীটনাশকই বিষ। তাই কীটনাশক ব্যবহারের পূর্বে এবং সংরক্ষণের সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন। কীটনাশক ছিটানোর সময় ধূমপান বা পানাহার থেকে বিরত থাকুন। কখনোই বাতাসের বিপরীতে স্প্রে করবেন না।কীটনাশক শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
আরও পড়ুন - Areca Nut Farming: জেনে নিন বাংলাদেশে কোন জাতের সুপারি গাছ চাষ লাভজনক