বকফুল শিম বা মটরগোত্রীয় গাছ। কিন্তু গাছ দেখতে মোটেই শিম বা মটরের মত নয়। ফুলের গড়নে কিছুটা মিল থাকলেও পাতা ও গাছের সাথে মিল নেই। মাঝারি আকারের ঝাড়জাতীয় বৃক্ষ। ফুলের আকার-আকৃতি গাছের ডালে বকের ঠোঁটের মতো বোঁটায় ঝুলে থাকতে দেখায় বলে এ ফুলের নামকরণ করা হয়েছে। এ গাছের অনেকগুলো বাংলা নাম- বক, বকে, বগ, বকফুল, বগফুল, অগস্তা, অগাতি ইত্যাদি। এ দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বকফুল জন্মায়। ফুল গুচ্ছভাবে প্রতি বোঁটার অগ্রভাগে ধরে।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি(Soil & climate):
এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের গাছ। ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক ২০০০-৪০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এই গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সমুদ্র তল থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত স্থানে খুব সহজেই এটি জন্মায়। পাহাড়ি অঞ্চলে এটিকে ছায়াপ্রদানকারী গাছ হিসেবে লাগানো হয়। যেসব অঞ্চল প্রায় নয় মাস শুষ্ক এবং খরা প্রবণ থাকে সেখানে এই গাছ লাগিয়ে খুব দ্রুত জমিকে সবুজ আচ্ছাদনে ঢেকে ফেলা যায়। এই গাছ শৈত্যতা কমবেশী সহ্য করতে পারলেও তুষারপাত একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
বকফুল গাছ বেলে, দোআঁশ, অনুর্বর, লবণাক্ত, ক্ষারীয়, আম্লিক যেকোনো মাটিতে খুব সহজেই জন্মায়, কিন্ত মাটির ধরনের ওপর গাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে। তবে এটিকে রাস্তার ধারে, ধান জমির আল বরাবর, খোলা জায়গায় লাগানো যেতে পারে।
কিভাবে চারা তৈরি করবেন?
বকফুলের চাষের জন্য বীজ থেকে সহজে চারা তৈরি করা যায়। শরৎ কাল থেকে হেমন্ত কালে ফোঁটা ফুলের বীজ হয় বসন্তে। তখন বীজতলায় বীজ বুনে চারা রোপন করতে হবে। গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল চারা লাগানোর ভাল সময়।
আরও পড়ুন -Bell Fruit Farming: জেনে নিন জামরুল চাষের দূর্দান্ত পদ্ধতি
গাছ থেকে বীজ সংগ্রহের পর খুব দ্রুত বীজ মাটিতে বুনে দেয়া ভাল। আষাঢ় মাসে লাগানো গাছে ঠিকমত যত্ন নিলে কার্তিক মাস থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। বীজ ছাড়া বয়স্ক ডাল কেটে লাগালে তা বেঁচে যায়। বীজতলায় তৈরি করা চারা মাস খানেক বয়স হলেই বীজ থেকে গজানো চারা জমিতে লাগানো যায়। পলিব্যবাগেও চারা তৈরি করা যায়।
চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন:
সারি করে ২ মিটার দূরে দূরে চারা লাগানো যায়। লাগানোর আগে সবদিকে ৩০ সেন্টিমিটার মাপের গর্ত করে গর্তের মাটিতে শুধু জৈব সার মিশিয়ে চারা লাগাতে হয়। ছোট চারা গাছ দেখতে ধৈঞ্চা গাছের চারার মতো। চারা রোপণের সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে গাছে ফুল ধরে। চারা না তুলে বীজ বুনে সেখানে রেখেও গাছ তৈরি করা যায়। বীজ ছাড়া বয়স্ক ডাল কেটে লাগালে তা বেঁচে যায়। কম উর্বর মাটিতেও গাছ হয়। সেজন্য রাসায়নিক সার না দিলেও চলে।
সেচ ও জল নিষ্কাশন:
বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। সেচ দিলে গাছ বাড়ে।
আগাছা ও নিড়ানি:
গাছ যদিও প্রায় ২০ বছর বাঁচে, তবু ভাল ফলনের জন্য অতদিন রাখা ঠিক নয়। প্রতি ৩ বছর পরপর নতুন গাছ লাগালে ভাল হয়। বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। বকফুল গাছের ভালো ও মজবুত গড়নের জন্য ছাটাই করা দরকার। এতে গাছ বেশি ঝোপালো হয় ও খাটো থাকে।
পোকামাকড় ও রোগদমন(Disease management system):
বকফুল গাছে অনেক সময় রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়। রোগের মধ্যে কৃমিজনিত শিকড়ে গিঁট, ছত্রাকজনিত পাতায় ধূসর দাগ, ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ ইত্যাদি প্রধান। রোগের উপদ্রব কমানোর জন্য গাছের আশেপাশে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাতেও যদি রোগ দমন না হয় তবে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও গাছে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, পাতা জড়ানো পোকা ইত্যাদি। কৃমিজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য গাছের গোড়ার মাটিতে নিমের খৈল বা ফুরাডান নামক দানাদার কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ফল সংগ্রহ:
চারা রোপণের সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে গাছে ফুল ধরে। বকফুল সবজি হিসেবে অতি উত্তম, মুখরোচক, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ফুল।
আরও পড়ুন - Mrigal Fish Farming: বর্ষায় ধান জমিতে মৃগেল মাছ চাষে হন লাভবান