তেঁতুল যেমন সুস্বাদু ফল তেমনি পুষ্টি-গুনে ভরপুর একটি ফল। এতে রয়েছে অসধারণ ভেষজ গুনাগুন। এ ফল ইউনানি, হার্বাল, আয়ুর্বেদ, হোমিও ঔষধ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এ ফল অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। যেমন, পাকা তেঁতুল হৃদরোগ, কলেস্টোরাল, ফ্যাট কমায়, এছাড়াও হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আর তেঁতুলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও খাদ্য শক্তি। তেঁতুল কাঁচা এবং পাকা দূভাবেই খাওয়া যায় আর ভিটামিনও পাওয়া যায়।
বীজ উৎপন্নঃ
তেঁতুল বীজ থেকে আবার গুটি কলমের মাধ্যমেও জন্মে। তবে চাষের জন্য গুটি কলমই ভাল, এতে করে ভালোমানের উন্নত ফল পাওয়া যায়, আবার গাছে ফলও তাড়াতাড়ি আসে। বীজ থেকে ফল আসতে ৭-৮ বছর লাগে, আর কলম করা চারা থেকে ২ বছরের মধ্যেই ফল আসে। আমাদের দেশীয় জাতের তেঁতুল থেকে গুটিকলম করা থাই বা আমাদের তামিলনাড়ুতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত টকি জাতের তেঁতুলেও ফলন তাড়াতাড়ি আসে।
মাটি ও আবহাওয়াঃ
উর্বর দোঁ-আশ বা বেলে দো-ঁআশ মাটি এ চাষের জন্য উপযুক্ত। চারা রোপণ করার আগে গর্তে গোবর সার ৫-১০ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাস ১০০ গ্রাম, শরিষার খৈল ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পঁচিয়ে তারপর চারা রোপণ করতে হয়।
রোপন:
চারা ২০-২৫ ফিট পর পর রোপণ করতে হবে যেন গাছ ভালো আলো বাতাস পায়। কলম করা চারা গুলো যদি টবে লাগানো হয় তবে ১৮ বাই ১৮ টব নিতে হবে, টবে রোপণ করা চারা ৭-৮ ফিটের মতো উঁচু হয় আর মাটিতে রোপণ করা চারা ১৫-২০ ফিটের মতো উঁচু হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন -Banana varieties: জেনে নিন সাগর কলা চাষ পদ্ধতির সহজ উপায়
কাটিং পদ্ধতিতে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব | গাছে ভালো ফলন পাওয়াার জন্য গাছ কাটিং করে দিতে হবে। কাটিং করা গাছে ডালপালা বেশি হয় তাই ফলও বেশি। চারা কাটিং ধীরে ধীরে করতে হয়, একবারে করা যায় না। যদি গাছের পাতা ঝড়ে যায় তারপর কাটিং করলে বেশ কয়েকটি নতুন ডাল গজায়। আর ফলনও ভালো হয় । তবে গাছ কাটিং করতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় যেমনঃ গাছের ডাল গোল করে না কেটে সুচাঁলো ভাবে কাটতে। এ কথা মাথায় রেখে ডাল কাটিং করতে হবে। কাটিং করা ডালের ডগায় কপাল অক্সিক্লোরাই দিতে হবে, এতে করে গাছে কোন প্রকার রোগ বা পোঁকার আক্রমন হয় না ।
বারোমাসি ফসলঃ
আজকের উদ্ভাবিত তেঁতুল গাছ থেকে সারাবছরই ফসল পাওয়া সম্ভব। গুটি কলম করা থাই জাত বা আমদের দেশে উদ্ভাবিত টকি জাতের তেঁতুল সারাবছরই ফুলে- ফলে ভর্তি থাকে। এ গাছে ফল পেকে গেলে আবার ফুল আসা আরম্ভ করে। আর এ জাতীয় তেঁতুলে দেশী জাতের চাইতে আকারে বড় , স্বাদে মিষ্টি আর খাদ্যাংশ বেশি থাকে। তাই এর বাজারমূল্য ও চাহিদা অনেক। এ চাহিদা আর বাজার মূল্যের কথা বিবেচনা করে আমরা বারোমাসি তেঁতুল চাষ করতে পারি। আর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হতে পারি।
সার প্রয়োগ ও কীটনাশকঃ
চারা রোপণ করার ৬ মাস অব্দি আর তেমন কোন সার দিতে হয় না। গাছ বড় হলে যখন ফল আসার সময় হবে তখন বর্ষার আগে ও পরে একবার একবার করে টিএসপ ১০০ গ্রাম, ১৫০ গ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট, ৭০ গ্রাম পটাস দিতে হবে। এ সার প্রয়োগের পরিমান বছরে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে , আগামী ১০ বছর অব্দি। ১০ বছর পর আর সার না দিলেও চলে। তেঁতুল গাছ বহুবর্ষি গাছ, একটি গাছ ২০০-৩০০ বছর অব্দি ফলন দিয়ে যায়। তেঁতুল চাষে তেমন কোন সার প্রয়োগ বা কীটনাশক স্প্রে করতে হয় না। তবে যদি ছত্রকের আক্রমন হয় তবে পরিমান মত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়