ধনিয়া সাধারনত শীতকালীন বা রবি ফসল হলেও, সারাবছর ধনিয়া পাতার চাহিদা পূরণ করার জন্য এখন সারাবছর চাষ করা হয়ে থাকে। তাপসহনশীল বলে বছরের যেকোনও সময় চাষ করা সম্ভব।
সময়ে-অসময়ে সারাবছর ধনিয়াপাতার বাজারে চাহিদা আছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বেডের উপর বাঁশের কঞ্চির খাঁচা বানিয়ে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বা কম খরচে তৈরী পলি বা শেডনেট (Polyhouse) হাউসের নিচে চাষ করা হয়। অসময়ের ফসল হিসাবে চাষ করলে এর ভালো বাজারদর পাওয়া যায়।
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে একরকম বিলিতি ধনিয়া পাতা চাষ করতে দেখা যায়। এটি স্বাদে-গন্ধে একেবারে সাধারণ ধনিয়া পাতার মতো। এটি সাধারনত বর্ষার সময় চাষ করতে দেখা যায়।
জলবায়ু ও মাটি (Climate & Soil Preparation) -
ধনিয়া পাতা যেমন সারাবছর চাষ করা যায়, কিন্তু বীজের ক্ষেত্রে শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার প্রয়োজন। এইজন্য বীজের ক্ষেত্রে শীতকাল বা রবি মরশুমে চাষ করা হয়। বীজের ক্ষেত্রে গাছে ফুল আসার সময় মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিপাত বা কুয়াশা হলে রোগপোকার আক্রমণ হয় এবং বীজধারনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।
ভালো জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যুক্ত সবধরনের মাটিতেই ধনিয়া চাষ সম্ভব। তবে বেলে- দোআঁশ বা এঁটেল-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এছাড়াও বস্তায়, টবে বা ছাদেও এর চাষ করা যায়।
জাতঃ
পাতার জন্য সাধারনত মাল্টিকাট হাইব্রিড চাষ করা হয়। যেমনঃ ক্যারিবি, সৌরভী, খুশবু, হরিতিমা, হরিনিমা ইত্যাদি। এছাড়া বীজের জন্য সাথী, সাধনা, রাজস্থান ধনিয়া এবং উচ্চফলনশীল দেশি ধনিয়া জাতের চাষ করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন - উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে কাঁঠালের চাষ (Jackfruit Cultivation)
রোপণের সময়ঃ
পশ্চিমবঙ্গে ধনিয়া পাতার জন্য সেপ্টেম্বর-মার্চ মাসে এবং বীজের জন্য অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বপন করা হয়।
বীজের পরিমাণ ও শোধনঃ
এক বিঘা জমিতে রোপণ করতে প্রায় ২.৫-৩ কেজি বীজ প্রয়োজন।ধনিয়া বীজ ১২-১৫ ঘন্টা ভালো কোনও ছত্রাকনাশকে ভিজিয়ে রাখার পর সেই বীজ দুই হাতের চাপে দু'ভাগে ভেঙে নেওয়া হয়। তারপর ছায়ায় শুকিয়ে জমিতে রোপণ করা হয়।
বপনঃ
জমি তৈরির পর লাইন করে অথবা ছিটিয়ে বীজ বুনতে হবে এবং হালকা করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর হাল্কা জলসেচ দিতে হবে। ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারনত চারা বের হয়।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ
ধনিয়া চাষের মাটি ঝুরঝুরে হলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। উপযুক্ত জল নিকাশী ব্যবস্থা রেখে জমি তৈরি করতে হবে। এরপর জমিতে বিঘা প্রতি ১-১.৫ কুইন্টাল জৈবসার বা গোবরসার এবং সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও সিউডমোনাস ফ্লুরসেন্স মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এর তিন থেকে চার দিন পর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
পাতার জন্যঃ
বিঘা প্রতি সুপার ফসফেট ২০-২২ কেজি মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা বেরোনোর পর ১০-১২ কেজি ইউরিয়া ও ৫-৬ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ গোবর সার-এর সাথে মিশিয়ে দুবারে প্রয়োগ করতে হবে- প্রথমটি চারা বেরোনোর ১০-১৫ দিন পর ও দ্বিতীয়টি ২৫-৩০ দিন পর। সার প্রয়োগের সময় পাতায় যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বীজের জন্যঃ
বিঘা প্রতি ১০-১২ কেজি ইউরিয়া, ৩৫-৪০ কেজি সুপার ফসফেট এবং ১-২ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা বেরোনোর ২৫-৩০ দিন পর ৫-৬ কেজি ইউরিয়া, ২-৩ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়ে চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের সময় পাতায় যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনমতো অনুখাদ্যের মিশ্রণ ২ গ্রাম প্রতি লিটার জমে ভাল করে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিনা চাষে ধনিয়া চাষঃ
অনেক সময় রবি মরশুমে ধান কেটে নেওয়ার পর চাষ না করেই সেই জমিতে যে রস থাকে তাতেই বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এতে কম খরচে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল অ্যাভোকাডো চাষ করুন নিজের ছাদবাগানে (Avocado Farming In Rooftop)