শালগম এক পরিচিত পুষ্টিকর সবজি | এই সব্জি সাধারণত মাটির নিচে জন্মায় | এটা এক প্রকার রূপান্তরিত মূল এবং সহজলভ্য এই সবজিটি খুব সহজে অনায়াসে চাষ করা যায় | এই নিবন্ধে শালগম চাষের (Turnip farming) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
মাটি ও জলবায়ু(Soil and Climate):
এটি নতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর উপযোগী ফসল | ১৫-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় এটি সবচেয়ে ভাল জন্মায় | গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আলোর প্রাচুর্য প্রয়োজন | উচ্চতাপ মাত্রায় স্বাদ কমে যায় এবং মুল দ্রুত আঁশময় হয়ে উঠে | অধিক বৃষ্টিপাত শালগমের জন্য ক্ষতিকর | হালকা দো-আঁশ মাটি শালগমের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী |
চাষের সময়:
রবি মৌসুমে শালগমের চাষ সম্ভব৷ বৃষ্টির মৌসুম শেষ হবার পর ফসল লাগানো উচিত৷ চারা কচি থাকা অবস্থায় বৃষ্টি হলে ফসল সহজেই নষ্ট হয়৷আর্শ্বিন-কার্তিক (নভেম্বরের প্রথম ভাগ থেকে ডিসেম্বরের শেষ ভাগ) বীজ বোনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় |
বীজ বপন(Seed):
সরাসরি বীজ বপন করে শালগমের চাষ হয় | কিন্তু কৃষকরা অনেক সময় চারা রোপণ করে শালগম চাষ করে থাকেন ৷ রোপণের সময় প্রধান শিকড় ভেঙে গেলে স্ফীত মূলের নিম্নাংশ শাখায়িত হবার সম্ভাবনা থেকে যায় | তাছাড়া, আধুনিক কিছু কিছু জাত বীজ বোনার ৪০-৫০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়৷ সারিতে বীজ বুনলে বা চারা রোপণ করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট৷ প্রায় ১ মাসের চারারোপণ করা যায়৷ চারা রোপণের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ২০সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চিদূরত্বে রোপণ করতে হবে৷
আরও পড়ুন -Black Radish Cultivation: জেনে নিন কৃষ্ণ মুলো চাষ পদ্ধতি ও তার পরিচর্যা
বীজের হার:
সরাসরি বীজ বুনলে একর প্রতি ১ কেজি বীজ প্রয়োজন এবং চারা রোপন করলে একর প্রতি ২৪৫ গ্রান প্রয়োজন |
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
শালগমের জন্য হেক্টর প্রতি ১০ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া ১২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৭৫কেজি মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করা হয় ৷ আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক উপরি প্রয়োগ করা ভাল |
আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক বাদে বাকি সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং ইউরিয়া ও পটাশের বাকি অর্ধেক চারা গজানোর ১৫দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে৷
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
কাটুই পোকা:
কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়৷ এই পোকা দমনের জন্য ৫ সের জলে চা-চামচের দেড় চা চামচ পরিমাণ ডায়াজিনন মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে৷
জাব পোকা ও শুয়োপোকা:
জাব পোকা ও শুয়োপোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে৷ এই পোকা দমনের জন্য ৫ শতক জমিতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি কীটনাশকের ৫ চা-চামচ (২৫ মিঃ লিঃ) ১০ সের জলের সঙ্গে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে৷ ক্ষেতে রাসয়নিক ঔষধ দেবার অন্তত ৭ দিন পর্যন্ত ঐ ক্ষেতের ফসল বিক্রি বা খাওয়া যাবে না৷
ফসল সংগ্রহ ও লাভ:
বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে শালগম খাওয়ার উপযুক্ত হয়৷ এরপর মূল শক্ত ও আঁশময় হয়ে যায়৷ স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়৷ শালগমের ফলন এক শতকে-১০০-১২০ কেজি, একর-প্রতি-১০-১২ টন, হেক্টর প্রতি-২৫-৩০ টন হয়ে থাকে | এগুলি বাজারজাত করলে মোটা টাকার লাভ হয়ে থাকে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Mandarin Farming: কিভাবে কমলালেবু চাষ করবেন? শিখে নিন সম্পূর্ণ পদ্ধতি