অর্থকরী ফসল আলুর চাষে নাবিধ্বসা রোগের কারণে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় প্রতি বছরই আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন অনেক চাষি। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর্থিক ক্ষেত্রে অনেকটাই লাভ করবেন চাষিভাইরা।
ঘন কুয়াশা বা হাল্কা বৃষ্টির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এবং আবহাওয়া স্যাতস্যাতে হলে আলুর জমিতে নাবি ধ্বসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। এই রোগ কিভাবে প্রতিকার করবেন, সেই সম্পর্কে আজ আমরা আপনাকে তথ্য দেব।
নাবিধ্বসা রোগের লক্ষণ (Phytophthora Infestans disease) -
এই রোগের লক্ষণ প্রথমে পাতার কিনারায় ও পরে পাতার বৃন্ত ও কান্ডতে বাদামী কালো রঙের দাগ দেখা যায়। সকালের দিকে লক্ষ্য করলে কালো বাদামী দাগের নীচে সাদা পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায়। ফাইটোপথোরা ইনফেসটেন্স নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০ শতাংশের বেশি, গড় ন্যূনতম তাপমাত্রা ৭-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গড় সর্বাধিক তাপমাত্রা ২২-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্যাতস্যাতে আবহাওয়া এবং মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ও জমিতে অত্যধিক নাইট্রোজেনের ব্যবহার এই রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এই আবহাওয়ায় ছত্রাকের জুস্পওর পাতায় পাতায় স্পর্শ, বাতাস, পোকামাকড় ও জলের মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিজে ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় কয়েক দিন চলতে থাকলে ২-৪ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পাতা পচে যায় ও ঝরে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ গাছটি নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকার (Disease managent of potato) -
প্রথম কানি মাটি তুলবার আগে, আলু গাছে নিম্নলিখিত যে কোন একটি ছত্রাকনাশক ঔষধ স্প্রে করতে হবে। কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০ ডব্লু পি ৪ গ্রাম বা কপার হাইড্রক্সাইড ২.৫ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লু পি ২.৫ গ্রাম বা ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। যে সমস্ত অঞ্চলে আলুর নাবিধ্বসা দেখা গিয়েছে সে সমস্ত অঞ্চলে নিম্নলিখিত ছত্রাকনাশক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সাইমক্সানিল ৮ শতাংশ এবং ম্যানকোজেব ৬৪ শতাংশ ডব্লু পি ২.৫ গ্রাম বা ফেনামিডেন + ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম বা ডাইমিথমর্ফ ৫০ ডব্লু পি ১ গ্রাম + ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লু পি ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। যে সব অঞ্চলে ধ্বসার আক্রমণ বেশি, সেই
সমস্ত অঞ্চলে সেচ ও চাপান সার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এবং কুয়াশা কম বা না থাকলে সেচ দিতে হবে। ভেলির মাঝের নালা এক তৃতীয়াংশের বেশি ডুবিয়ে সেচ দেওয়া যাবে না। দুপুর ১২-১ টার মধ্যে সেচ দিতে হবে। গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী বিঘা প্রতি স্প্রের জন্য জলের মাত্রা ৯০-১০০ লিটার হবে এবং স্প্রে নজেলের মুখ এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে পাতার দুদিক ভালোভাবে ভেজে।
পূর্বে উল্লিখিত ছত্রাকনাশক সঠিকমাত্রায় আঠা জাতীয় মিশ্রণ সহ পর্যায়ত্রমে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - শীতকালীন অর্থকরী ফসল আলুতে পোকার আক্রমণ ও তার প্রতিকার (Cash Crop Potato)