বিগত কয়েক বছর ধরেই হাইড্রোপনিক চাষের চাহিদা বাড়ছে, কার্যতই বৃদ্ধি পেয়েছে এর পরিধিও। বহু পূর্বেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, প্রফেসর গেরিকে সবজি, যেমন, বিট, মুলো, গাজর, আলু, দানা জাতীয় শস্য, বিভিন্ন ফল এবং ফুলের গাছ সাফল্যের সাথে চাষ করে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সৈনিকরা জাপানের চোফুতে প্রাইভেট সেক্টর জমিতে ২২ হেক্টর জমিতে হাইড্রোপনিক প্রয়োগ করেন নিজেদের সৈনিকদের খাদ্যের যোগান দিতেন। এরপর ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি ১৯৫০ দশক নাগাদ বিশ্বের ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে হাইড্রোপনিক চাষের প্রধান দেশ গুলি হল যথাক্রমে, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইজরায়েল, কানাডা এবং আমেরিকা।
কি ধরণের ফসল হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব?
অনেক ধরণের ফসল বিশেষত সবজি হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। দেখা গিয়েছে, গুণগত দিক থেকে এরা চিরাচরিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলের তুলনায় বেশ উন্নত। বিভিন্ন গবেষণার ফলে দেখা গিয়েছে, শাক যেমন লেটুস, সেলেরি, পালক এদেরকে খুব ভালোভাবে এই পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব। হাইড্রোপনিক লেটুস মাত্র ৩০-৪০ দিনের ভেতর বাজারে পাঠানোর উপযুক্ত হয়ে যায়। সেই হিসেবে এক বছরে আপনি প্রায় ৮ বার লেটুসের ফসল তুলতে পারবেন। টমেটো এবং স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে হাইড্রোপনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। নিচের তালিকায় কয়েকটি ফসলের উদাহরণ দেয়া হলো যেগুলি হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব।
ফসলের ধরন |
ফসলের নাম |
দানা- শস্য |
ধান, ভুট্টা |
ফল |
স্ট্রবেরি |
সব্জি |
টমেটো, লঙ্কা, বেগুন, বরবটি, বিট, ক্যাপসিকাম, শসা, তরমুজ, পেয়াজের পাতা |
শাক |
লেটুস, পালক, সেলেরি, বেসিল |
মসলা |
ধনেপাতা, মেথি শাক, পার্সলে, পুদিনা পাতা, মিষ্টি বেসিল এবং অরেগ্যান |
ফুল |
গাঁদা, গোলাপ, কারনেশন, চন্দ্রমল্লিকা |
হাইড্রোপনিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ -
যদি বিচার করা হয়, দেখা যাবে খুব কম সময়ে, অর্থাৎ প্রায় বিগত ৬৫ বছরের মধ্যেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতি নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় মানিয়ে নিয়েছে। যেমন ধরুন খোলা মাঠে চাষ থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের গ্রিনহাউজ অথবা পলিহাউসে এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিত মহাকাশ বিজ্ঞানের গবেষণার মধ্যে এটি একটি অন্যতম গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে শুরু করে ভিনগ্রহে কিভাবে ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব, তা হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে নিরসন করা যায়। উল্লেখ্য যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে খুব অল্প পরিসরের মধ্যে অনেক বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। যেখানে পরিষ্কার স্বাদু জলের অভাব, সেখানে সমুদ্রের নোনা জল কে বিপরীত অভিস্রবণ (reverse osmosis) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লবণ মুক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুবাই, আরব এবং মেক্সিকোর বিভিন্ন মরুভূমি অঞ্চলে সমুদ্রের জলকে লবণ মুক্ত করে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। বিপুল জমি যেখানে চাষ করা সম্ভব নয়, যেমন মরুভূমি অঞ্চল, সেখানে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে উন্নতির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সমুদ্রের জল কে লবণমুক্ত করে তা চাষের কাজে, হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মধ্যে কাজে লাগানো যেতে পারে। ছোটখাটো দেশ কিন্তু অনেক বেশি জনসংখ্যা তেমন জায়গাতে এই পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে হাইড্রোপনিক একটি আশাপ্রদ পদ্ধতি হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। খুব অল্প জায়গায়, অল্প শ্রম ব্যয়, বছরভর সবজি উৎপাদন -গরিব এবং ভূমিহীন মানুষদের জন্য একটি নতুন ধরণের সুযোগ হতে পারে। ভারতবর্ষে অদূর ভবিষ্যতে হাইড্রোপনিক চাষ আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্যিক হাইড্রোপনিক ফার্মের জন্য উৎসাহ দেবার জন্য কম খরচে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি, সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। এর ফলে শ্রমিক নির্ভরতা এবং প্রাথমিক প্রয়োগ সংক্রান্ত খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
প্রবন্ধ লেখক - আরজু আলী খাঁন (ফলবিজ্ঞান বিভাগ, উদ্যানবিদ্যা অনুষদ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)