এ এক ভালবাসার উৎসব ! এ এক ঐতিহ্য়। রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতন যেমন বসন্তের রঙে মেতে ওঠে, ঠিক তেমনই সতীমায়ের দোল মেলা উপলক্ষে আনন্দে মেতে ওঠে গোটা কল্য়াণীবাসী। এ উৎসব সমস্ত রাজনৈতিক রঙের ঘনঘটাকে বিলিন করে দিয়ে, ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেয় গোটা শহরকে। আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন আনুমানিক দু’শো বছর আগে।
এ মেলা জমে ওঠে বাউল, কীর্তন, লোকগীতি,পল্লিগীতির সুরে। আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে বসে গানের আসর। শ্রোতাদের অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের। কে কোথা থেকে এসেছে তাঁর খোঁজ নেই, কিন্তু একে অন্য়ের সাথে ব্যাবহার আর আতিথেয়তা দেখে মনে হয় কত দিনের না চেনা। সমস্ত রাজ্য় যেন গাইতে থাকে এক মেলবন্ধনের গান। মেলা তো হয় মাঠে কিন্তু মেলে মানুষের মন।
আরও পড়ুনঃ মহিলা কৃষকদের এক অসম্পূর্ণ অধিকার,এবং এক সম্পূর্ণ কাহীনি
একটা সময় ছিল যখন সারি সারি লিচু গাছ,আম গাছে ভরে থাকত সতীমায়ের আশ্রম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে সবকিছুই পাল্টে গেছে। সবুজ আরণ্য়ে ভরে থাকা ঘোষপাড়ার বাগান গুলি আজ মরুভুমি সম। যেকটি বৃদ্ধ গাছ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে তারাও আজ পরিচর্যার আভাবে মৃতপ্রায়।
এমতাবস্থায়,পরিবেশ সচেতক স্থানীয় ক্লাব ‘নবারুণ সংঘ’ এগিয়ে আসে ঘোষপাড়ার সবুজারণ্য়কে ফিরিয়ে আনতে। ক্লাবের সদস্য়রা মিলে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন প্রকারের গাছ লাগিয়ে তাদের নিয়মিত পরিচর্যা শুরু করে। দেখতে দেখতে গাছগুলি অনেক বড় হয়ে ওঠে।
কিন্তু আজ সকালে ক্লাবের সদস্য়রা হঠাৎ দেখতে পায় সতীমায়ের মেলা উপলক্ষে আখড়া করতে আসা ভবো নামে এক ব্য়াক্তি তাদের লাগানো গাছের মধ্য়ে একটি বট বৃক্ষকে কাঠতে উদ্দত হয়ছে। ক্লাবের সদস্য়রা ততক্ষনাৎ গাছ কাটতে বাঁধা দেয় এবং গাছ কাঁটার কারন জানতে চায়। উত্তরে তিনি বলেন বট গাছটি তার আখড়ার ভিতরে এসে পড়েছে,তাই তিনি গাছটি কেটে ফেলতে চান।
ক্লাবের সদস্য়রা গাছ কাঁটার বিরোধিতা করায় তুমুল বচসা শুরু হয় তাদের মধ্য়ে। সদস্য়দের হুমকি দিতে শুরু করেন ঐ ব্য়াক্তি। কিন্তু হুমকির মুখে পড়েও অন্য়ায়ের কাছে মাথা নত করতে রাজি হয়নি ক্লাবের সদস্য়রা । ক্লাবের একজন সদস্য় বলেন,’’ভবো, বছরে একবার এখানে আখড়া করতে আসেন,মেলা শেষ হলে আর তার দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু আমারা সারা বছর ধরে গাছের পরিচর্যা করি। দরকার হলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব’’।
আরও পড়ুনঃ international women's day 2022:দাদা একটা স্য়ানিটারি ন্য়াপকিন দিন তো!
সতী মা নিজে এক নব জীবনের প্রতীক। সতীমায়ের জন্মতীথি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। শোনা যায়, পূর্ণচন্দ্র প্রথমে ধর্মশাস্ত্র ও পরে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন, জন্ম হয় আঁউলচাঁদের। বেড়িয়ে পরেন ঘর থেকে। তার পরের ইতিহাস প্রায় সবাই জানি। ঘুরতে ঘুরতে উনি আসেন নদীয়ার ঘোষপাড়াতে। ডালিম তলায় বসেন। এই দিকে রামশরণ পাল নামে গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্য়াক্তির স্ত্রী সরস্বতী দেবীর মরণাপন্ন অবস্থা। তাঁকে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে কাছের এক পুকুর থেকে মাটি তুলে সেই মাটি সারা গায়ে লেপে দেন আঁউলচাঁদ। কিছুক্ষনের মধ্যে সরস্বতী দেবী সুস্থ হতে থাকেন এবং প্রাণ ফিরে পান। এই সরস্বতী দেবীই হলেন ‘সতী মা।
যে মিলন উৎসবের শুরু হয়েছিল নতুন জীবন দানের মধ্য় দিয়ে । সেখানে একজন ভক্ত হয়ে ভবো বাবু সতীমায়ের নামে একটি নতুন প্রানকে শেষ করতে চাইছেন। উল্টোদিকে একদল তরুন তুর্কি জীবনের পরোয়া না করে সতীমায়ের ঐতিহ্য়কে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।