দিনে দিনে খাদ্যদ্রব্যের যোগান ক্রমাগত কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষের জমি এবং জলাধারের পরিমাণও কমে আসছে। এই অবস্থার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংহত চাষ সবথেকে সুবিধাকর উপায়। লাভজনক সংহত চাষের অর্থ হল বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের চাষের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো। ধরা যাক একই জমির একাধারে পুকুর পাড়ে মাছ চাষ হচ্ছে অন্যদিকে হচ্ছে হাঁস ও দেশি মুরগি পালন। হাঁস এবং মুরগির বর্জ্য মাছের খাদ্যের ব্যবস্থা যেমন করছে তেমনই অন্যদিকে গবাদি পশু পালন হলে তাদের মূল ব্যবহার হচ্ছে পুকুর ধারে সব্জি চাষের সার হিসাবে। এভাবে একই জায়গাতে একইসঙ্গে চাষ করে খরচ কমানো অনেকাংশে সম্ভব। এই সময়ে দাঁড়িয়ে কৃষিকে বিজ্ঞানসম্মত করে তুলতে সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সংহত চাষ গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন এনেছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং করার কারণ (Cause of integrated farming):
এই ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-র প্রধান উদ্দেশ্যই হলো একের বর্জ্য অন্যের প্রয়োজনে ব্যবহার হবে। কোনোকিছুই এখানে বাদ পরে না। সংহত চাষকে ব্যবহার করে উদ্ভিদ ও গবাদি ও পোলট্রি চাষের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায়, এক প্রাণীর বর্জ্য অন্যজনের সার বা খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে জমি কম লাগে সঙ্গে লাভের পরিমাণও এই চাষের থেকে বেশ ভালো পরিমাণে হয়।
সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-এর প্রকারভেদ ( Different types of integrated farming):
বিভিন্ন ধরণের সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রচলিত আছে। গবাদি পশু পালনের সঙ্গে যেমন মাছ-সব্জির চাষ করা যেতে পারে, তেমনই আবার হাঁস-মুরগি পালনের সঙ্গে মাছ ও সব্জির চাষ করাতেও কোনও অসুবিধা নেই।
মাছ চাষ সাথে শুয়োর ও ছাগল পালন:
একসাথে ছাগল, শুয়োর এবং মাছ চাষ করা সম্মিলিত চাষের এক অন্যতম অধ্যায়। ছাগল ও শুয়োরের মল দিয়ে যে সার তৈরী হয় তা মাছের খাবার হিসাবে যেমন ব্যবহার করা হয় তেমনই পুকুরে ফেললে উর্বর পাঁকে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে যা শাক-সব্জির সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
হাঁস পালন ও মাছ চাষ:
হাঁস ও মাছ চাষ একসাথে করা ভীষণই সুবিধাকর। এতে খরচও কম হয়। হাঁসের জন্য পুকুরের মাছ জীবাণুমুক্ত জল দেয়। আবার হাঁসও পুকুরের অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গ ও গুগলি খেয়ে মাছেদের বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখে। হাঁসের যাতায়াতে জলে অক্সিজেন পরিমাণ বেড়ে যায়। হাঁসের মল পুকুরের খাদ্যের উৎপাদন বাড়ায়। হাঁসের মলে নাইট্রোজেন থাকে ২.১৫ শতাংশ, ফসফরাস ১.১৩ শতাংশ এবং পটাশিয়াম ১.১৫ শতাংশ। হাঁসপালন অত্যন্ত লাভজনক এক পদ্ধতি। দেশি হাঁস বছরে ১২০-১৩০টি ডিম পাড়ে। হাঁস পুকুর থেকে নিজের খাদ্য নিজেই জোগাড় করে নিতে পারে। রোগব্যাধি কম হওয়ায় হাঁস চাষ কৃষকদের কাছে লক্ষ্মী স্বরূপ।
মাছ,সব্জি চাষ ও গরু পালনের পদ্ধতি:
গরু, মাছ ও শাক-সব্জি একসাথে চাষ অত্যন্ত সহজে করা যায়। গোবর ও গোমূত্রে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ ও জৈব পদার্থ থাকায় মাছ চাষ এবং শাক-সব্জি চাষে জৈব সার হিসাবে তা ব্যবহার করে চাষের খরচ কমানো যায়। এর জন্যে গোয়ালঘর পুকুরপাড়ে করলে ভালো। এরফলে গোবর পুকুরে ফেলা যায়। পুকুর পাড়ে সবুজ ঘাস ও অন্য শাকসব্জি গরুর খাবারের কাজে লাগে।
মুরগি ও মাছ চাষ একসাথে করার পদ্ধতি:
মুরগির মল জৈব সার হিসাবে সারের জগতে অত্যন্ত সমাদর পায়। যা পুকুরে দিলে পুকুরের জৈব উৎপাদন বাড়ে। একটি মুরগি বছরে ১৫ কেজি কম্পোস্ট সারের যোগান দিতে পারে। একটি পুকুরের জন্য ৫০০-৬০০ টি মুরগিই অনেক বলে ধরা হয়।