ভারতে গোমূত্রকে যেখানে এর ভেষজগুণের জন্য গবেষণা করা হচ্ছে সেখানে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের গবেষকগণ বলছেন গোমূত্র বিশ্বউষ্ণায়ণের জন্য দায়ী হতে পারে। জাবর কাটা পশুর এই মূত্র থেকে নাইট্রাস অক্সাইড(N2O) গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে অনেক বেশী ক্ষমতাশালী।
কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ইত্যাদি দেশগুলিতে সমীক্ষা করে দেখা গেছে গোমূত্রকে বস্তুর পচনের কাজে লাগানো হয়। ভারতেও গোমূত্রকে চাষের কাজে লাগানোর জন্য বিস্তর গবেষণা করা হচ্ছে, এখানে অনেক জমিতে গোমূত্রকে চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই অবস্থায় নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন নথিপত্রতে এই রিপোর্ট ছাপাও হয়েছে।
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী বর্তমানে মিথেন গ্যাসের উৎপাদনের একটি উৎস। মিথেন গ্রীণহাউস গ্যাসের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান। যাইহোক গোমূত্রের ক্ষেত্রে মানুষ এইসব বিষয়গুলি বুঝতেও চায়না। কলম্বিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচার (CIAT), গবেষণার জন্য 500ml এর মতো গোমূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। তাঁরা গোচারণভূমির মাটি পরীক্ষা করে দেখেছেন যে আদৌ এটি স্বাস্থ্যকর নাকি অস্বাস্থ্যকর। ৬ থেকে ৭টা অঞ্চল থেকে গবেষণার ফল দেখা গেছে এই সমস্ত অঞ্চলে N2O প্রচুর পরিমাণে উৎপাদনও নির্গমন হচ্ছে। বিশেষ করে পচনশীল পদার্থ থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় তিনগুন বেশী N2O উৎপাদিত ও নির্গমন ঘটেছে।
গরুর গোবর ও গোমূত্র পরস্পর মিশিয়ে ভারতীয়রা কৃষিক্ষেত্রে সেটিকে সার হিসেবে ব্যবহার করে, ভারতে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালনের সংখ্যাও অনেক বেশী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিতে গবাদি পশুর মলমূত্র পড়ে থাকে তাই ভারতীয় জমির থেকে অনেক বেশী N2O নির্গত হয়।
২০১২ সালে ইসরোর উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে ভারতীয় প্রায় ৩০% অঞ্চলকে N2O নির্গমন ক্ষেত্র হিসাবে ধরা হচ্ছে, অর্থাৎ হিসাবে দেখা যাচ্ছে ভারতের প্রায় ১.৮৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি প্রতি বৎসরই প্রদূষিত হচ্ছে।
ভারতের দিল্লী, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলির প্রদূষনের মাত্রা ৪.৩৪% থেকে বেড়ে ১১.০৩% হয়েছে, ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে পরিমাণ জমিতে এই প্রদূষনের প্রভাব পড়ছে তার মূল্যায়ন করলে দাঁড়ায় ৪৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ভারতের ২.৫% GDP.
সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে পচনশীল গোবর গোমূত্রের পরিমাণ যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আমাদের খাদ্য সুরক্ষায় এবং কৃষকদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। এমনকি এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ কৃষি ও কৃষকদেরও বড়সড় ক্ষতি হতে পারে কারণ এইসব পদার্থের জন্য বিশ্বউষ্ণায়নের মাত্রা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।
পচা ঘাসের জমি সবথেকে বেশী N2O নির্গত করে যতটা না ভালো আবর্জনাগুলি নির্গত করে। ভালো পদার্থসমূহ কিছুটা নাইট্রোজেন যৌগ শোষণ করে নেয় একমাত্র পচা অংশগুলি থেকেই নাইট্রোজেন যৌগের নির্গমন ঘটে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ভারতের কাছে এবং প্রতিটি গরু, বাছুর, বলদ ইতাদি থেকে কত পরিমাণ গোবর ও গোমূত্র উৎপাদিত হয়েছে তার হিসাব ২০১২ সাল থেকে করা হয়েছে এবং সমষ্টিগত ভাবে করা হয়েছে, কিন্তু ঠিক কত পরিমাণ গোমূত্র থেকে কত পরিমাণ N2O নির্গত হয় সেই মূল্যায়ন ভারতে এতটা গুরুত্ব দিয়ে করা হয়নি।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)