নতুন সরবরাহ পদ্ধতি শুরু হওয়াতে অন্ধ্রপ্রদেশের কয়েক ডজন দুগ্ধচাষী FPO এবং HORECA এর সাথে হাত মিলিয়েছে এই শর্তে যে, যে সব প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ও বহু সরবরাহকারী সংস্থা অধিক পরিমাণে দুগ্ধ সরবরাহ করে, তাদের থেকে লিটার প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে যাতে সরাসরি মানুষের কাছে দুগ্ধ বিক্রয় করা যায় এই উদ্দেশ্যে। কখনো কখনো দুগ্ধের অতিরিক্ত সরবরাহের জন্য সংগঠিত কারবারিরা চাষিদের কাছ থেকে লিটার প্রতি ২১ থেকে ২২ টাকায় দুগ্ধ কিনে নিচ্ছে, এই স্বল্প দামে দুগ্ধচাষীদের দুগ্ধের উৎপাদন খরচ মেটানোর ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করছে। HORECA চেইন প্রকল্পের মাধ্যমে চাষীরা ওই সমমানের দুগ্ধ বিক্রয় করে লিটার প্রতি ২৪ থেকে ২৫ টাকা দাম পাচ্ছে, কারণ এক্ষেত্রে চাষিরাই তাদের উৎপাদিত দুগ্ধ সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র বা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে।
প্রায় ৬০০০ বিলিয়ন মূল্যের দুগ্ধ সরবরাহ বর্তমানে অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে দুগ্ধ উৎপাদনকারী চাষিদের হাতে চলে এসেছে। চাষিরা সরাসরি দুগ্ধের খুচরা বিক্রয় এর বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছেন, তাদের ধারণা এইভাবে সরবরাহ করলে তারা পাইকারি দামের তুলনায় বেশি মূল্য পাবে ও তাদের সাথে বিশাল সংখ্যার মানুষের সাথে তারা নিজেদের মেলবন্ধন ঘটাতে পারবে, যেটা সংগঠিত সংস্থার সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী হবে।
HORECA chain-বিষয়টি কি?
HORECA হলো হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ও ক্যাটারিং এর সরাসরি সম্পর্কযুক্ত একটি সরবরাহ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে একটি গোটা প্রদেশের সমস্ত হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ক্যাটারিং ব্যবস্থাকে একসাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে, এবং এই বিষয়টিই বড় সংগঠিত সংস্থার কাছে বেশ সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এরপর থেকে সংগঠিত ও নামী দুগ্ধপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে স্বল্পকালীন ও চলমান দুগ্ধ সরবরাহে বেশ ঘাটতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ICICI Securities এর অনিরুদ্ধ যোশি এর মতে দুগ্ধ চাষিরা যে অতিরিক্ত দুগ্ধ HORECA segment এর নামে শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ তে সরাসরি বেচে দিচ্ছে যার প্রভাবে ভবিষ্যতে বড় বড় সংস্থার ক্ষেত্রে বেশ চিন্তার বিষয় হবে। সেক্ষেত্রে সারা দেশে নামী ব্র্যান্ডের দুগ্ধ কোম্পানীগুলি কম দামে কতখানি দুগ্ধ পরিষেবা করতে পারবে সেই বিষয়টি এখনো বেশ ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। তাই বিভিন্ন দুগ্ধপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নিযুক্ত কোম্পানিগুলো এই সমস্যার সমাধানের জন্য দুইটি বিষয় নির্ধারণ করেছেন। এক, তারা দুধের দাম কমিয়ে দিয়ে সরবরাহকারীদের ও HORECA খরিদ্দারদের বিশেষ সুবিধা করতে পারে, নয়তো স্বল্পবিক্রয়-এর মাধ্যমে তাদের লাভের অঙ্ক বাড়াতে পারে।
বর্তমান Rabobank এর প্রতিবেদন অনুসারে আগামি ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে দুগ্ধ উৎপাদনের পরিমাণ হবে প্রায় ১৮০ মিনিয়ন টন, যে উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ২০১৭ সালে ১৬৫.৪ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ CARG এর রিপোর্ট অনুসারে ভারতে দুগ্ধ উৎপাদন বেড়েছে গত দশকের তুলনায় প্রায় ৪.৯ শতাংশ মাত্রায়। এর কারণ বিগত দশকে গবাদি পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি, পশুখাদ্যের খরচ কম ও দুধের গতানুগতিক চাহিদা বৃদ্ধি।
India Rating and Research-এর দেবীকা মালিক জানিয়েছেন বিগত বেশ কয়েক বৎসরের তুলনায় ভারতের দুগ্ধ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৬.২৯ শতাংশ হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা দুগ্ধশিল্পকে আগামি ২০১৯ সালে ৭.৪৫ ট্রিলিয়ন টাকার বিশাল মুনাফা প্রদান করতে চলেছে কারণ চলতি বাজারদর হিসেবে স্বল্প খাদ্য ও পশুপালন খরচের জন্য
নিধি অগ্রওয়াল (Angel Broking) এর মতে যে সমস্ত কোম্পানিগুলি যেমন পরাগ মিল্ক ফুড্স, যাদের খুব বড় ব্যবসায়িক টপ লাইন ও বটম্ লাইন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আগামি তিন মাসে দুগ্ধ প্রোডাক্টের মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রচার চালাবে, অথবা নতুন দুগ্ধজাত পদার্থ বাজারে বের করার চেষ্টা করবে অথবা নাটকীয়ভাবে বাজার দখলের মরিয়া চেষ্টা করবে, এবং এই সব ব্যবসার মাধ্যমে তারা তাদের মুনাফাকে আগামি ২০২০ সালের মধ্যে ২২ থেকে সরাসরি ২৬ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধি ঘটাবে। অগ্রয়াল এর মতে পরাগ গো এবং গোবর্ধন ব্রান্ড এর দুগ্ধজাত পণ্যের নির্মাতা, যারা এই ধরনের বিষয়কে সাধুবাদ দিয়েছেন, তাদের মতে এতে তাদের উপকারই হবে।
- প্রদীপ পাল