বর্তমান পরিস্থিতির জেরে দেশের প্রায় প্রতিটি সংস্থা, শিল্পেই কম বেশি প্রভাব পড়েছে৷ লকডাউনের কড়া নিয়মে খামার চাষীরাও বিপাকে৷ বেশিরভাগ মিষ্টির দোকান, বেকারি, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়ছে দুগ্ধ ব্যবসায়৷ দুগ্ধ উৎপাদন আগের মতো থাকলেও কমে গিয়েছে চাহিদা, সেই সঙ্গে টাকাও মিলছে আগের থেকে অনেক কম পরিমাণে, ফলত উত্তরোত্তর সমস্যা বাড়ছে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলের৷
মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, এসকল স্থানে প্রায় ৪০ শতাংশ দুগ্ধের সরবরাহ হত৷ কিন্তু লকডাউনে দুগ্ধের চাহিদা হঠাৎ হ্রাস পাওয়ায় সমস্যায় কৃষকেরা৷ ডেয়ারি কোম্পানিগুলি কৃষকদের কম মূল্য দিতে শুরু করেছে৷ যেখানে কৃষকেরা প্রতি লিটার দুগ্ধ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করতেন, সেখানে এখন মিলছে ৩০-৩৫ টাকা, অর্থাৎ ১০-১৫ টাকার পার্থক্য৷ কিন্তু ডেয়ারি কোম্পানিগুলি বিক্রির ক্ষেত্রে দুগ্ধের মূল্য না কমানোয় তাদের মুনাফা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২৪ শে মার্চ দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এরপর তা পুনরায় ৩ রা মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে জারি কড়া নিয়ম৷ কিছু কিছু মিষ্টি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, করোনা আতঙ্কে দুগ্ধের মূল্য একেবারে কমে গিয়েছে, ফলে ক্রেতারা খুব প্রয়োজন না হলে মিষ্টি কিনতে আসছেন না। তাই আগের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে মিষ্টি তৈরি করা হচ্ছে৷ আর তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে কম মূল্যে দুগ্ধ কিনতে হচ্ছে তাদের৷
উদাহরণস্বরূপ, নাসিকের কৃষকদের কথা বলা যেতে পারে৷ এক সংবাদ সংস্থাকে দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষক জানান, হোটেল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান প্রায় সবই বন্ধ৷ ফলত কমেছে দুগ্ধ চাহিদা৷ আর যা বিক্রি হচ্ছে তাতে তাদের ধার্য মূল্য থেকে দামের পার্থক্য থাকছে প্রায় ২০ টাকা৷ তাই খরচ সামলানো তাদের পক্ষে সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অন্যদিকে অসমের ছবিটাও কিছুটা এরকমই৷
তারা এও জানাচ্ছেন, লকডাউনে দুগ্ধ কিনতে সাধারণ মানুষেরাও আসছেন না, অথচ অত দুগ্ধ সংরক্ষণও সম্ভব নয়৷ তাই অনেক ক্ষেত্রে গরীব, দুঃস্থদের তা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি গৃহপালিত পশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, তাদের চিকিৎসার দিকটিও যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ৷ ফলত, সমগ্র বিষয়টি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের৷ ইতিমধ্যেই তারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর৷
অনেক স্থানে আবার কৃষকেরা রাস্তায় দুগ্ধ ফেলে দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। তাদের মতে, যখন বিক্রিই করা যাবে না, তখন এতো দুগ্ধ তারা রেখে কি করবেন, আর কোথায়ই বা রাখবেন! উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কর্ণাটক ভারতের সবথেকে বড় দুগ্ধ উৎপাদনকারী রাজ্য৷ কিন্তু লকডাউনের জেরে দুগ্ধ বিক্রি এবং দুগ্ধজাত শিল্প চরম সঙ্কটে৷
অন্যদিকে হ্যান্ডলুম থেকে বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা এপ্রিল এবং মে মাসের বেতনের দাবিতে সরব হতে শুরু করেছেন৷ কারণ বহু ক্ষেত্রে অর্ডার বাতিল হচ্ছে, কমছে বিভিন্ন জিনিসপত্রের চাহিদা, যার কারণে প্রায় ১কোটি ৩০লক্ষ কর্মচারীর বেতন সঙ্কটের মুখে৷ জানা যাচ্ছে, বস্ত্রমন্ত্রক এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন, যাতে এইসব কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো যায়৷ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও কতটা কঠিন হবে ভবিষ্যতে সেই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষকেরা।