খারিফ শস্যের অর্থাৎ বর্ষাকালীন ফসল (Monsoon Crops)৷ যে ফসলগুলি বর্ষাকালের (Monsoon 2020) জলের ওপর নির্ভর করে চাষ করা হয় সেগুলিই হল খারিফ ফসল (Kharif Crops). উদাহরণস্বরূপ ধান, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা, পাট, আখ, কার্পাস প্রভৃতির উল্লেখ করা যেতে পারে৷ এদের মধ্যে ধানের পরই খাদ্যশস্য হিসাবে সব চেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে চাষ করা হয় জোয়ার (Sorghum).
জোয়ার বা Broom corn হল একটি বর্ষজীবি ফসল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Sorghum bicolor. এটি মিলেট জাতীয় শস্য৷ প্রধানত পশুখাদ্য এবং শস্য হিসেবে এর চাষ হয়৷ জোয়ার গাছ দৈর্ঘ্যে প্রায় আড়াই থেকে আট মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ কখনও কখনও তার থেকেও বেশি হয় এর দৈর্ঘ্য৷ খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোয়ারের বাণিজ্যিক ব্যবহারও (Commercial Usage) গুরত্বপূর্ণ৷
জোয়ার প্রধানত, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে বেশি করে চাষ হয়৷ এর পাতাগুলি প্রস্থে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্যে ৭৬ সেন্টিমিটার৷ ফুলগুলি ছোট ছোট৷ এর বীজের রঙ, আকৃতি বিভিন্ন জাতের জোয়ারের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের হয়৷ তবে দেখতে গমের চেয়ে ছোট৷ উত্তর ভারতে খারিফ মরশুমে এর চারা রোপন করা হয়ে থাকে বহুল পরিমাণে৷
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য হিসেবে জোয়ারের স্থান বিশ্বে পঞ্চমে৷ সারা বিশ্বের মোট জোয়ারের ৭০ শতাংশই আসে এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে৷ খারিফ ছাড়াও রবির মরশুমেও জোয়ারের চাষ হয় ভারতে৷ তবে ভারতে জোয়ারের চাষের মাত্রা দেখতে গেলে খুবই কম (880 kg/ha).
কিন্তু জোয়ারের পুষ্টিগুন (Nutritional Value) উত্তরোত্তর এর চাহিদা বৃদ্ধি করে চলেছে৷ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, এটি কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সাহায্য করে৷ এতে রয়েছে ফাইবার উপাদান, উচ্চমাত্রায় খনিজ৷
এই জোয়ার (Sorghum) প্রায় সাধারণত বেলে দোআঁশ এবং কাদামাটিতে ভাল হয়৷ তবে জল বেরিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ এই ফসল উষ্ণমণ্ডলীয় হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর চাষ হয়৷ আর এর পোকামাকড় অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় পরিচর্যাতেও বেশি খরচ বা পরিশ্রম হয় না৷ তবে আগাছা হলেই তা সাবধানে তুলে ফেলতে হবে, তা না হলে ফলনে ব্যাঘাত ঘটবে৷ রবি ও খরিফ উভয় মরশুমেই জোয়ার চাষ করা যায়। খারিফে এর বীজ বপনের সময় হল এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে-জুন৷
উল্লেখ্য, মানুষের খাবার এবং পশুখাদ্য ছাড়াও অন্যান্য বহু কাজে জোয়ার ব্যবহৃত হয়৷ যেমন, বিস্কুট, কুকিস, তৈরিতে যেমন এটি ব্যবহৃত হয় তেমনই, আঠা, কাগজ, জৈব জ্বালানি, ইথানল, স্টার্চ তৈরির ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা হয়৷
বর্ষা চ্যাটার্জি
আরও পড়ুন- #বর্ষা ২০২০, এই মরসুমে পেঁয়াজ চাষ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারেন কৃষক