ছত্তিসগড়ের চাষিরা শেষ পর্যন্ত তাদের ১০ বৎসর আগে সরকার কর্তৃক অধিগৃহীত জমি ফেরত পেতে চলেছে। ১০ বৎসর পূর্বে এই জমিগুলি তৎকালীন সরকার দ্বারা অধিগৃহীত হয়েছিলো কারণ এই জমিগুলি বন্ধ্যা ছিলো। এই বিষয়টা ভারতের মতো দেশের কাছে একটি ব্যতিক্রমী বিষয় বটে, কারণ এখানে যে জমিতে সরকারি অধিগ্রহণ হয় সেই জমি কখোনই চাষিদের কাছে সাধারণত ফেরৎ যায় না।
ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস পার্টির বরিষ্ঠ নেতা শ্রী ভূপেশ ভাগেল কিছুদিন পূর্বে সাধারণ নির্বাচন জিতে এসছেন, তিনি বলেছেন যে তিনি তাঁর কিছু আধিকারিককে অনুরোধ জানিয়েছেন যে বস্তার জেলার ২০০০ হেক্টর বা ৭.৭ স্কোয়ার মাইল অধিগৃহীত জমি কৃষকদের ফেরৎ দেবার জন্য আইনি কার্যক্রম চালু আছে।
অধিগৃহীত জমি ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাধীনতার পূর্বে অথবা পরে কখোনই ফেরৎ দেওয়া হয় নি বা হোতো না।যেখানে ভারতের মতো দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশের কাছে জমি ফেরতের প্রশ্নই ওঠে না কারণ শিল্প ও সড়কের নির্মানের জন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে জমির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ল্যান্ড কনফ্লিক্ট ওয়াচ নামক একটি গবেষণা সংস্থার মতে ভারতে প্রায় ৬৬০ টি বৃহদায়তন জমির কেস নিষ্পত্তিবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সারা দেশে একসময় অনেক প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য সরকারি তরফে প্রচুর জমি অধিগৃহীত হয়েছিলো বলা ভালো প্রচুর মানুষের কাছ থেকে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো।
ছত্তিসগড় আগে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছিলো, ২০০৫ সালে এই সমস্ত জমিগুলি তৎকালীন বিজেপি সরকার টাটাকে ষ্টীল কারখানা তৈরী করার জন্য বিতরণ করেছিলো। কিন্তু সেই সময় কৃষকরা এই জমি অধিগ্রহণের ঘোর বিরোধী ছিলো। টাটা ষ্টীল তাদের এই প্রকল্পকে ২০১৬ সালে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়, কারণ এই জমিতে শিল্প গড়ার মতো কোনো পরিকাথামো পাওয়া যায় নি।
এই সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিলো যে এই জমি সরকারি ল্যান্ডব্যাংকের অঙ্গীভূত হবে যা ভবিষ্যৎ কোনো প্রকল্পের জন্য কাজে লাগানো হবে, যার ফলে ভারতের সবথেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্যেও বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
ছত্তিসগড়ের হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক এডভোকেশির একজন আইনজ্ঞ কিশোর নারায়ণ বলেছেন “যে সমস্ত কৃষকরা এই জমি অধিগ্রহণের কারণে তাদের জমি হারিয়েছেন তাঁরা বছরের পর বছর বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট কষ্ট করেছেন।“ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে তিনি আরও বলেছেন” আমরা আশা করছি ছত্তিসগড়ে যে সমস্ত কৃষিজমি অধিগৃহীত হয়েছিলো তাদের কেসফাইল সমূহকে পুনরায় বিবেচনা করা হোক এবং যে সমস্ত জমিগুলি বেকার পড়ে আছে বা ভবিষ্যতে আর কোনো প্রকল্পের গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই সেগুলিকে চাষিদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক”।
ভারতে জমি অধিগ্রহণের জন্য বহু সরকারি আইন পাশ হয়েছে যাতে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেস সরকার একটি ফেডারেল ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন আইন পাশ করিয়েছিলও যাতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে, যে সমস্ত কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিতে হবে যাতে জমি অধিগ্রহণের কোনোরূপ কুপ্রভাব তাদের মধ্যে না পড়ে এবং এও বলা ছিলো যে যদি অধিগৃহীত জমিতে পাঁচবছরের মধ্যে কোনো প্রকল্প গড়ে না ওঠে তাহলে সেই জমি কৃষকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে অথবা রাজ্য সরকারের ল্যান্ডব্যাংকের সাথে যুক্ত করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ২০১৬ সালে আদেশ দিয়েছিলো সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবার জন্য, যে জমিতে টাটাদের প্রজেক্ট করা হয়েছিলো এবং এখনও তা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে, এই অনিচ্ছুক কৃষকরাই প্রায় দশ বৎসরের বেশি সময়কাল ধরে তাদের জমি ফিরে পাবের জন্য লড়াই করেছিলো।
২০১৭ সালে সাউথ কোরিয়ার একটি সংস্থা POSCO ওড়িশা সরকারকে তাদের জমি ফিরিয়ে নিতে বলেছিলো তাদের প্রকল্পের নির্মানের দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য, সেই সব অধিগৃহীত জমি পুনরায় গ্রামবাসীদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা হয়েছিলো তবে কর্তৃপক্ষ জমি না ফিরিয়ে তা রাজ্য সরকারের ল্যান্ডব্যাংকের সাথে সংযুক্ত করে।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)