লকডাউনের জেরে দেশ যেন তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে কৃষিক্ষেত্র, আর তারই সাম্প্রতিক দুঃখজনক উদাহরণ হল মহারাষ্ট্রের ঘটনা৷ জানা গিয়েছে সঠিক দাম না পাওয়ায় ক্ষোভে এক কৃষক তার এক একর জমিতে ফলানো ফসল নষ্ট করে দেন৷
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ওসমানাবাদ জেলার এক কৃষককে তার ফসলের জন্য, এক ব্যবসায়ী বাজার দরের এক ষষ্ঠাংশ মূল্য দেওয়ার কথা বললে ওই কৃষক ক্ষোভে নিজের এক একর জমিতে ফলানো বাঁধাকপি নষ্ট করে দেন৷ এক সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, যে মূল্য দেওয়ার কথা ওই কৃষককে বলা হয়েছিল তা এতটাই কম ছিল যে ফসল নষ্ট করে দেওয়ার মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই বেছে নিতে বাধ্য হন ওই কৃষক৷
জানা যায়, ওই কৃষকের গ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি করার চেষ্টা করে সে৷ কিন্তু প্রতি ৫০ কেজির জন্য ২০ টাকা মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়৷ যে মূল্য ওই কৃষক ধার্য করেছিল তার এক ষষ্ঠাংশ দাম বলা হয়৷ জানা যায়, এই ফসলের পিছনে তার প্রায় এক লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে৷ যার বিনিময়ে তার ধার্য করা দামের ধারেকাছে নেই ধার্য করা বিক্রয় মূল্য৷
জগদলওয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দা এই উমাজি চৌহান সংবাদ সংস্থাকে আরও জানান, তিনি শুক্রবার ট্রাক্টর দিয়ে বাঁধাকপির এই ফলন নষ্ট করে দেন৷ উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের লকডাউনে কৃষকদের সবজির বিক্রয় এবং সমস্ত পণ্যের চাহিদা কমেছে৷ যার জেরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷
উমাজির মতে, সোলাপুর এবং হায়দ্রাবাদের বাজারে হয়তো ন্যায্য দামে সবজি বিক্রয় সম্ভবপর হত, কিন্তু সোলাপুরের বাজার তার গ্রাম থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এবং হায়দ্রাবাদের বাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে৷ আর এই লকডাউন অবস্থায় অত দূরে সবজি নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়৷ আর যে টাকা তাকে স্থানীয় বাজারে বলা হয়েছে, তাতে তার ব্যয়ের ন্যূনতম টাকাও উঠে আসতো না, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, একদিকে লকডাউনের পরিস্থিতি, অন্যদিকে দেশে অপরিমিত বৃষ্টিপাত, এই দুইয়ের ফলে ক্রমশ কোনঠাসা হচ্ছে কৃষকেরা৷ দেশব্যাপী এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কৃষিমন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন প্রকাশ করা হয়েছে৷ যে অ্যাপের সাহায্যে ভারতীয় কৃষকদের পণ্য পরিবহণের কাজ অব্যাহত থাকবে৷
এই ‘কিষাণ রথ’ মোবাইল অ্যাপের এর সাহায্যে পরিবহণের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ ট্রাক এবং ২০,০০০ ট্রাক্টরের পরিবহণ সংক্রান্ত সুযোগ পাওয়া যাবে অনলাইনে৷ কৃষিজ দ্রব্য এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন এটি৷
এই নতুন মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের পরিবহণ সংক্রান্ত সুবিধা পাওয়া যাবে৷ প্রাথমিক ক্ষেত্রে কৃষক বা ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য স্থানীয় এলাকা থেকে আড়ত, মজুতঘরে পৌঁছে দিতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে৷ দ্বিতীয়ত, এই কিষাণ অ্যাপের সাহায্যেই ফের এই সব স্থান থেকে কৃষিজ পণ্য ছড়িয়ে পড়বে অন্যত্র৷ রেফ্রিজেটরের সুবিধাও রয়েছে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে৷
কৃষি মন্ত্রকের মতে, পাঁচটি অনলাইন ট্রাক বুকিং সংস্থা ৫.৭ লক্ষেরও বেশি ট্রাকের সুবিধা এই অ্যাপে যুক্ত করেছে৷ এই নয়া পদ্ধতি কৃষক, পরিবহণ ব্যবসায়ী থেকে সরকার, সকলের পক্ষেই সুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ দেশের সব রাজ্যের কৃষকদের কাজে সুবিধার্থে এই অ্যাপ লঞ্চ করা হয়েছে বলে জানানো হয়৷