পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্পের প্রচলন করেছিলেন বিগত বছরেই – ‘কৃষকবন্ধু প্রকল্প’। এই প্রকল্পের সহায়তায় সকল কৃষকের জন্য কৃষি সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিক বীমা প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষক বন্ধু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে আবেদনকারীরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, যা তাদের আরও ভাল জীবনযাপন করতে সহায়তা করেছে। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে সংযুক্ত হয়েছেন ৪৭,১৯,৪৩৯ জন কৃষক।
কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন - এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পিছনে রাজ্য সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দরিদ্র কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সহায়তা করা। ত্রুটিযুক্ত কৃষিকাজের কারণে তাঁরা প্রায়শই পর্যাপ্ত ফসল উত্পাদনে ব্যর্থ হন। ফসলে আর্থিক সহায়তায় ফলে কৃষকদের এখন আর এই নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে হবে না।
কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা - রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, যোগ্য আবেদনকারী বার্ষিক ভিত্তিতে ৫,০০০ / - টাকার আর্থিক সহায়তা পাবেন।
শস্য সহায়তা - নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একবার খরিফ ফসলের বপনের সময় এবং দ্বিতীয়বার রবি ফসলের মরসুমে দেওয়া হবে।
কিস্তিতে অর্থ প্রদান - প্রতি একর আবাদযোগ্য জমির জন্য ৫০০০ টাকা সুবিধাভোগীকে দেওয়া হবে। এই অর্থ প্রতিবছর দু'বার অর্থাৎ দুটি সমান কিস্তিতে বিতরণ করা হবে।
পারিবারিক বীমা সহায়তা - এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশাপাশি কৃষিশ্রমিকদেরও ফসল সহায়তার পরিমাণ ছাড়াও ফ্যামিলি ইন্সিওরেন্স পলিসি - সরবরাহ করবে। বীমাকৃত কৃষকের মৃত্যু হলে ২ লাখ পর্যন্ত টাকা পাবেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
সুবিধাভোগীর মোট সংখ্যা - অনুমান অনুযায়ী রাজ্য সরকার রাজ্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রায় ৭২ লক্ষ কৃষককে এই সুবিধা প্রদান করতে সক্ষম।
ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর - সমস্ত আর্থিক স্থানান্তর সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে করা হবে। এতে যোগ্য ব্যক্তি এর সুবিধা লাভ করবেন এবং অসাধু মধ্যস্থ ব্যক্তি (Middle Man) কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি -
- আগ্রহী আবেদনকারীদের তাদের আবাসিক (বাসস্থানের) নথি জমা দিতে হবে।
- যেহেতু এই প্রকল্পটি কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকদের উন্নতির লক্ষ্যে করা হয়েছে, তাই নিবন্ধকরণের জন্য তাঁদের কর্ম সংক্রান্ত নথি দাখিল করতে হবে।
- রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে ১৮-৬০ বছর বয়সের মধ্যে সকল আবেদনকারী এই বীমার সুবিধা পেতে পারেন, তাই তাঁদের বয়সের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- প্রার্থীদের পরিচয়পত্রের প্রমাণ স্বরূপ তাদের ভোটার বা আধার কার্ডের অনুলিপি জমা দিতে হবে।
- সমস্ত আর্থিক স্থানান্তর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হবে। সুতরাং, আবেদনকারীদের অবশ্যই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত বিশদ জমা দিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ কৃষক বন্ধু প্রকল্প অনলাইন নিবন্ধন ফর্ম এবং লগ ইন প্রক্রিয়া –
‘পশ্চিমবঙ্গ কৃষক বন্ধু প্রকল্প’ সম্পর্কিত অনলাইন নিবন্ধকরণ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আবেদনের জন্য কৃষকদের আবেদনপত্রটি অনলাইনে পূরণ করতে হবে। অনলাইন নিবন্ধকরণের পদক্ষেপগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১) আপনাকে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট matirkatha.net. বা https://krishakbandhu.net/–এ লগ ইন করতে হবে।
২) হোম পেজ আসার পর আপনাকে ‘কৃষক বান্ধু’ ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।
৩) এর পরে আপনাকে ‘কৃষক বান্ধু সাইন ইন’ সাইনটিতে ক্লিক করতে হবে।
৪) আপনি যথাযথ লিঙ্কটিতে ক্লিক করার পরে, স্কিমটিতে লগইন উইন্ডোগুলি প্রদর্শিত হবে।
৫) তারপরে ‘সাইন আপ’ বিকল্পটি ক্লিক করুন, এরপর নিবন্ধকরণ ফর্মটি প্রদর্শিত হবে।
৬) আপনাকে প্রয়োজনীয় বিশদটি পূরণ করতে হবে এবং তার পরে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
আবেদন ফর্মটি পূরণ করার পরে, প্রার্থীরা ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড পাবেন, যার সাহায্যে তারা এই প্রকল্পের জন্য লগ ইন করতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সর্বদাই বলেন যে, তাঁর সরকার এই অঞ্চলে সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের সামগ্রিক উন্নতির জন্য কাজ করবে। তাই রাজ্য ইতিমধ্যে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও কৃষক ও কৃষক শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা যেহেতু সবচেয়ে খারাপ, তাদের আর্থিক উন্নতির সহায়তার লক্ষ্যে তিনি এই প্রকল্পগুলি শুরু করেছেন।
অতিরিক্ত তথ্যের/সহায়তার জন্য আগ্রহী প্রার্থীরা হেল্পলাইন নম্বর ৮৩৩৬৯৫৭৩৭০ –এ ফোন করতে পারেন।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)