যে কোনো কৃষক তার কৃষি থেকে আয় বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকে। যেকোনো জায়গায় কৃষক নতুন কিছু প্রয়োগ করলে যদি তার উপকারে লাগে তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। ঠিক এমন ধরণেরই কিছু প্রয়োগ ছত্তিশগড়ের কাংকের নামক স্থানে কৃষক মহলের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে করা হচ্ছে, কাংকের-এর দখনি মুড়পার নামক স্থানের কৃষকেরা একটি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কীটনাশক তৈরির কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। এই ব্যাপারে সবাই নিজেদের সংগঠিত করেছেন এবং নিজেদের মধ্যে এই ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা করেছেন, এই অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের গ্রামীণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহযোগিতায় গোমূত্র জৈবিক কীটনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কীটনাশক বানিয়ে নিজেদের জমিতে ব্যবহার করেছেন। কৃষকদের মতে এতে কৃষকদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে এবং সুস্থ পরম্পরাগতভাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক কৃষি পরিবেশ উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
কীটনাশক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কৃষকেরা
পূর্বে এই স্থানে আঠারোটি মহিলা সমবায় ছিলো কিন্তু পুরুষদের কোনো সমবায় সমিতি ছিলো না। এখন এখানে ২০ টি কৃষক সমবায় সমিতি গঠিত হয়েছে, এই কৃষি সম্বায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘উজ্জ্বল কৃষক সংগঠন’। এই ক্লাবের নামে সরোনা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে একটি সমবায় তহবিল গঠন করা হয়েছে। আগে এই গ্রামে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান, গম, ও সবজিকে নির্দিষ্ট রোগপোকার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য রাসায়নিক কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করতো যাতে ফসলের সাথে সাথে কৃষকদের স্বাস্থ্যেরও অনেকটাই ক্ষতি হতো। এখন শুধু তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যই নয়, বরং ফসলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেই জন্য কৃষকরা গোমূত্র ও জঙ্গলে প্রাপ্ত ঔষধি যুক্ত পাতা থেকে কীটনাশক তৈরির একটি প্রশিক্ষণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন।
কৃষি খরচ কমানো সম্ভব
কৃষকরা তাদের গ্রামের আশেপাশের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে গোমূত্র ও ঔষধি দ্বারা কীটনাশক বানানোর পদ্ধতি শিখেছেন। কৃষকদের মতে এতে তাদের কৃষিতে খরচ অনেক কমে যাবে, এবং এক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণও কম হচ্ছে।
৬০০ লিটার জৈবিক গোবর কীটনাশক তৈরী
কৃষকরা সমবায়ভিত্তিক ভাবে গোমূত্র সংগ্রহ করার কাজ করছেন। অকুবা, সীতাফল, বেশরম ইত্যাদি পাতাগুলিকে কুচিকুচি করে কেটে জৈবিক কীটনাশক বানানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এরপর ৮ থেকে ১০ দিন পর গোমূত্র জৈবিক কীটনাশক তৈরি হয়ে যায়। কৃষকরা এখনো পর্যন্ত ৬০০ লিটার কীটনাশক তৈরি করেছেন এবং তারা ২০১৯ সালে ২০০০ লিটার পর্যন্ত গোমূত্র কীটনাশক বানানোর একটি পরিকল্পনা করেছেন। কৃষকরা দখনি মুড়পারের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধ একর জমিতে আমলকী ও কুলের মধ্যে কীটনাশক ছড়িয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং এই পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত ইতিবাচক প্রমাণিত হয়েছে। এই সাফল্যের ফলে কৃষকরা অন্য কৃষকদের থেকে গোমূত্র ও গোবর সার তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, কারণ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গোমূত্র কীটনাশক বিক্রির একটা পরিকল্পনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)