মহাজনের কাছ থেকে মৌখিক চুক্তিতে তিন বিঘা জমি নিয়ে বর্গা চাষ করেছিলেন সবুজ দাস । চুক্তিতে বলা হয়, জমিতে ফসল ফলুক বা না ফলুক বিঘাপ্রতি পাঁচ মণ ধান অথবা ৩ হাজার টাকা দিতে হবে। সবুজের কপাল খারাপ। শিলাবৃষ্টি আর উজানের ঢলের পর এবারের বন্যায় সব ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তাই গোলায় ধান ওঠেনি। কিন্তু মহাজনের ঋণ শোধ করতে হচ্ছে তাকে।
আরও পড়ুনঃ ক্যাপসিকামের শীর্ষ জাত, যা 78-80 দিনের মধ্যে বাম্পার ফলন দেবে
শুধু সবুজ দাসই নয়, নাসিরনগর উপজেলায় তার মতো ফুরেন্দ্র দাস, রবীন্দ্র দাস, কৃঞ্চ দাস, ফনিন্দ্র দাস, চন্দন দাস, শিশুকান্ত দাসসহ এমন হাজারো বর্গাচাষির ধান বন্যার জলে তলিয়ে গেছে। তলিয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বিত্তবান কৃষকদের ধানও। এ উপজেলায় কার্ডধারী ৫৪ হাজারসহ প্রায় ৬০ হাজার কৃষক রয়েছেন। এর মধ্যে মাঝারি, ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যাই বেশি।
সুত্রের খবর , নাসিরনগর উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গাচাষি আছেন। তারা জমির চাষাবাদ থেকে শুরু করে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের প্রায় অর্ধক দিয়ে দিতে হয় জমির মালিককে।
বাংলাদেশে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, এর আগে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল শিলাবৃষ্টি কারণে বোরো ধান ও বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে উপজেলার প্রায় দশ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনার জন্য সাড়ে ছয় হাজার কৃষকের তালিকা করে কৃষি অফিস। তার মধ্যে দুই হাজার দুইশ কৃষক প্রণোদনা পায়, বাকি চার হাজার ৪০০ কৃষক এখনও বঞ্চিত। ফলে মহাজনের ঋণ শোধ করতে অনেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন। আবার সেই ঋণ শোধ করতেও কেউ কেউ ঋণ নিয়েছেন ব্যাংক থেকে। এর মধ্যেই নতুন করে এবার বোনা আমন ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ শপথগ্রহণ শেষ, এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমানের পালা শিন্ডের
কৃষি অফিস সূত্রের খবর বলছে, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় নাসিরনগরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিখাতে। ধান, বীজতলা ও মৌসুমী সবজিসহ সব ধরনের ফসল হারিয়েছেন কৃষকরা। বন্যার পানি না কমায় দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে তাদের। কারণ আগামী ভাদ্র মাসে আউশ ধানের বীজতলা তৈরির প্রকৃত সময়। আর শ্রাবণ মাসে তা জমিতে রোপণ করতে হবে। কিন্তু বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বীজতলা তৈরি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি করতে না পারলে বছরজুড়ে খালি থাকবে আউশের মাঠ। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি প্রণোদনা চান কৃষকরা।