বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত এলাকার জল কমতে শুরু করেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে বানভাসী মানুষের মাঝে। সিলেট সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষ ঈদের আগেই বাড়ি ফিরে যেতে পারবে এমন আশা জেগেছে মনে। তবে আবহাওয়া অফিস থেকে এমন কোন সুখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপরে এখনো সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে আগামী দু’তিনদিন পরে দেশে আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এসব রাজ্যেও প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশ সহসা বন্যামুক্ত হবে এমনটা এখনই আশা করা যাচ্ছে না।
জল কমলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কিছুতেই কমছে না। হাওর পাড়ের মানুষ বন্যাকবলিত গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। বরং অনেক স্থানে বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। সিলেটে অনেক স্থানে জল কমে গেলেও জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘর থেকে বের হলে এসব ময়লা জল মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
এ ছাড়া ডায়রিয়াসহ নানারকম জলবাহিত রোগও ছড়াচ্ছে।বাংলাদেশে প্রকাশিতত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৬হাজার ৯৬৩জন। সারাদেশে বন্যায় আরও তিন জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৫ জন।
এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই ৫৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩ জন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে গতকাল বন্যাবিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বন্যার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে দেখা যায় সুনামগঞ্জে ৪৫ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যায় ১৬ হাজার ৩৩৯ ঘরে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে বন্যায় ৪ হাজার ৬৮০ হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ফল চাষে রেকর্ড বাংলাদেশের ,ছাড়িয়ে গেল ভারতকে
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিপযন্ত সিলেটের বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিনের টানা বৃষ্টিপাত আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে পরিস্থিতির উন্নতিতে স্বস্তি দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে। গতকাল সকালের শুরুতেই সিলেটের আকাশে রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় এত দিনের ভুগতে থাকা মানুষের মনে প্রশান্তি উঁকি দেয়।
সিলেট নগরীর বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী শাহজাহান আজীজ দৈনিক ইনকিলাব কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, গত দুই সপ্তাহে সিলেটের আকাশে এ রকম সূর্যের দেখা মেলেনি। আজকের এই নীল আকাশ ও রোদের প্রখরতা ভালো লাগছে। সকাল থেকেই বাসার ছাদে কাপড়চোপড়সহ অনেক জিনিসপত্র শুকাতে দিয়েছি।
আরও পড়ুনঃ ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে পদ্মার মাঝে নিজস্বীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সিলেট পাউবো’র তথ্য মতে, বেশীর ভাগ নদীর জল এখনো বিপদসীমার ওপরে থাকলেও তা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কোনো কোনো পয়েন্টে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দশমিক ২০ সেন্টিমিটার থেকে শূন্য দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার কমেছে। এর মধ্যে ধলাই নদে শূন্য দশমিক ২০ ও ফেঞ্চুঞ্জের কুশিয়ারা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার কমেছে।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, বৃষ্টি না থাকায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে না। তবে পানি খুবই ধীরগতিতে কমছে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৃষ্টিপাত যদি না হয় এবং পাহাড়ি ঢল না নামে, তবে পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতির দিকে যাবে। এদিকে, আপাতত সিলেটে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা নেই।
সুত্রঃ লাইমলাইট নিউজ