এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 25 January, 2019 7:05 PM IST

FPO বা ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন প্রসঙ্গের উদ্ভাবন হয়েছে যাতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক একত্রিত ও মিলিত হয়ে বিভিন্ন কৃষি সমস্যার সমাধান, বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও একত্রিত হয়ে বিপণনের সুবিধা নিতে পারে। আর ফার্মার প্রোডিউসার (FPC) হল কোঅপারেটিভ সোসাইটি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী নিয়ে গঠিত একটি সংস্থা ।

কোন অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে FPO বা FPC গঠনের মূল উদ্যেশ্য হল -

  1. কৃষকদের একত্রিত ও শক্তিশালী করা
  2. FPO তে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কৃষককে কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডার করা ও এদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এক বা একাধিক ম্যানেজার নিযুক্ত করা
  3. এই সমস্ত কোম্পানী কৃষক সমবায় গোষ্ঠির নীতি অনুসরণ করে এবং দক্ষ কোম্পানীর মত সফলভাবে ব্যবসা করতে সক্ষম।

একটি ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী গঠন করতে হলে কমপক্ষে ১০ জন কৃষক (উৎপাদক) বা ২ বা তার বেশী উৎপাদন সংস্থা বা উভয়কেই নিয়ে প্রথমে ফার্মার্স ইন্টারেস্ট গ্রুপ (FIG) গঠন করা হয়, এই রকম অনেকগুলি FIG নিয়ে তৈরী হয় ফার্মার্স প্রডুসার কোম্পানী বা FPC। এদের প্রতিটি সদস্যকে অবশ্যই ফসল উৎপাদন বিষয়ক বা কৃষি কাজ সংক্রান্ত কাজগুলি যেমন – ফসল উৎপাদন, ফসল তোলা, কৃষি পণ্য মজুত করা, ঝাড়াই-বাছাই ও বাজারজাত করা ইত্যাদি কাজগুলি করতে হবে। যারা কৃষি কাজ করেন না বা কোনভাবেই কৃষি কাজের সাথে যুক্ত নয় তারা কোনভাবেই এই কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডার হতে পারবেন না। এই FPO গুলির পরিচালন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয় এবং প্রতিটি সদস্যের বা শেয়ার হোল্ডারের সমান মত প্রকাশের ও মত প্রদানের অধিকার থাকে। প্রতিটি সদস্যের মধ্যে তাদের সংগ্রহ করা শেয়ার অনুযায়ী কোম্পানীর লভ্যাংশ বন্টিত হয়। লাভের অংশটিও প্রতিটি FPC তে সমান ভাবে সদস্যদের মধ্য ভাগ করে নেওয়া হয়। প্রতিটি ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী ৫-১০ জন পেশাদার আধিকারিক ও রাখা যায় যারা ব্যবসায় তাদের পথনির্দেশনা দিতে পারবেন।

FPC গঠন করার উপযোগীতা –

ভারতের বেশীরভাগ কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত দাম পান না। এর মুখ্য কারণ হল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ ভাগ হয়ে যাওয়া তাদের চাষ জমি। আমাদের দেশের বেশীরভাগ কৃষক (১২.৫ কোটি কৃষকের মধ্যে ৮৫%) ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, যাদের বেশীরভাগের ২ হেক্টরের বেশী জমি নেই। এত ছোট জমির জন্য তারা আধুনিক প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই ছোট ছোট কৃষকদের একত্রিত করে FPO/ FPC গড়লে এই কৃষকেরা একত্রিত হয়ে কৃষি কাজ করতে পারবেন ও  পাইকারি হারে কৃষি উপকরণ কিনতে পারবেন যাতে তাদের উৎপাদন খরচ কম পড়বে এবং তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। সর্বোপরি আধুনিক ফসল তোলার সুযোগ সুবিধা ও তা বাজারজাত করে ভালো লাভ করতে পারবেন

আরও পড়ুন শীতের শেষে টমাটো ও কপির রোগ ও তার প্রতিকার

যে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা FPO/ FPC দের সহায়তা দেয় –

  1. DAC বা ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার কোঅপারেশন – কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী গঠনে সহায়তা প্রদান করে।
  2. SFAC বা স্মল ফার্মার্স এগ্রি বিজনেশ কনসোর্টিয়াম – এটি DAC অন্তর্গত একটি সংস্থা যা কারিগরী সহায়তা প্রদান করে ফার্মার্স প্রডুসার কোম্পানী গঠনের জন্য প্রশিক্ষণ, সহায়তা প্রদান, গবেষণা, ব্যবসায়ীক যোগাযোগ, সরকারী, রাজ্য সরকারী ও বেসরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদানে সবরকম সহায়তা প্রদান করে।
  3. NCDC (ন্যশনাল কোঅপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন) – ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী গুলিকে কোঅপারেশনে নথিভুক্ত করে তাদের কোঅপারেটিভ পরিকল্পনাগুলিতে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা দেয়
  4. DAC, FCI (ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) এর এবং রাজ্য সরকারের সাথে FPO গুলিকে সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
  5. DAC, NABARD এর মত বিনিয়োগকারী সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে FPO গুলিকে পরিকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে ও তাদের সদস্যদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সাথে যুক্ত করে।

FPO গুলির সহায়তায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা –

FPO গুলিকে আরো বেশী শক্তিশালী করার জন্য রাজ্য সরকার গুলির বিশেষ ভূমিকা থাকে। DAC অনুযায়ী FPO গুলিকে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলার জন্য রাজ্য সরকার কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারে যেমন –

  • সমবায় গোষ্ঠিগুলি যে সমস্ত সহায়তা পায় সেই সমস্ত সহায়তা FPO গুলিকে প্রদান করা।
  • কৃষি উপকরণের (বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি, কীট নাশক) ব্যবসায় অনুমতি প্রদান করা।
  • সমবায় সংস্থাগুলির ন্যয় কৃষি উপকরণের ব্যবসায় প্রসারলাভ ও ভর্তুকি লাভে সহায়তা দেওয়া ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ ডিসেম্বর মাস অবধি প্রায় ৮০ টি  ফার্মার্স প্রডুসার কোম্পানী নথিভুক্ত হয়েছে। কিছু পরিচিত FPO যেমন – ২০১৮ তে রেজিসট্রেশন প্রাপ্ত গাইঘাটা কৃষকদল এগ্রো প্রডুসার, বারাসত প্রগ্রেসিভ ভেজিটেবল প্রডুসার, মুর্শিদাবাদ প্রডুসার কোম্পানী, হুগলী ভেজিটেবল প্রোডিউসার কোম্পানী, হাওড়া এগ্রো প্রোডিউসার কোম্পানী, কোজাগরী ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী ইত্যাদি। সম্প্রতি কৃষি জাগরণের পক্ষ থেকে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি প্রোডিউসার কোম্পানীর সাথে দেখা করে আমরা তাদের কাছ থেকে জেনে নিলাম তাদের ফার্মার্স ক্লাব গঠনের নানা কথা।

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার  বারাসত-১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত গ্রামটির নাম বাবপুর। ২০০৩ সালে প্রথম পথ চলা শুরু এই কৃষক সংঘটির। ২০০৩ সালেই প্রথম বাবপুর গ্রামের কৃষকরা সরকারী কৃষি দপ্তরের মিটিং-এ গিয়ে কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ তৈরীর ধারনা পায় ও তারা Farmer Producer Club সম্পর্কে জানতে পারে। এই মিটিং-এর পর তারা তাদের গ্রামে কয়েকজন কৃষককে নিয়ে একটি ফার্মার্স ক্লাব তৈরী করে যার নাম দেয় ‘বাবপুর কৃষক সংঘ’। এই কৃষক সংঘ কৃষি সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরগুলির সাথে যোগাযোগ করে এবং কৃষকদের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে বাবপুর গ্রামে – আই পি এম, আই এন এম জৈব গ্রাম তৈরী করে, পলি হাউস, সেড নেট হাউস, স্বল্প মূল্যে পিঁয়াজের স্টোর, ভার্মি কম্পোস্ট পিট, অ্যাজোলা পিট, জুট রেটিং ট্যাঙ্ক, অরনামেন্টাল ফিস ইডনিট ইত্যাদি তৈরি করে। নানান প্রযুক্তি ও উপাদান কাজে লাগিয়ে বাবপুর গ্রাম FPO এর হাত ধরে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মডেল গ্রামে রূপান্তরিত হয়।

২০১৬ সালে বাবপুর গ্রামের সমস্ত কৃষক ও তাদের পরিবাররের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকা বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে “কোজাগরী ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী নামে একটি প্রোডিউসার কোম্পানী তৈরী করে। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের সহায়তায় ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানীটি একটি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার, একটি তেল মিল, একটি ডাল মিল তৈরী করে ধীরে ধীরে এই সব কাজে অংশ গ্রহণ করে এলাকার কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধি করে চলেছে। FPO টি কৃষকদের বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা, ভর্তুকী ইত্যাদি পেতে সহায়তা করছে।

২০১৮ সালে উত্তর ২৪ পরগণা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ও কোলকাতার বায়োটেক হাবের সহযোগীতায় প্রথম ভুবনেশ্বরে উন্নত প্রথায় ধান চাষের প্রশিক্ষণে, পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে কোজাগরী ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানীর ৪ জন সদস্য প্রশিক্ষণ নেয়, যাদের মধ্যে থেকে প্রিয়াঙ্কা মাইতি আন্তর্জাতিক ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, ফিলিপিন্সে ধান চাষের প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। এই ভাবে ধীর অথচ সুনিশ্চিত গতিতে কোজাগরী ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী এগিয়ে চলেছে উন্নতি সাধনের পথে। বাংলার পৌষপার্বনের দিনে কৃষিজাগরণের পক্ষ থেকে কোজাগরী ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানী ও পশ্চিমবঙ্গের সকল ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানীর জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)

English Summary: FPO west bengal
Published on: 22 January 2019, 01:51 IST