লকডাউনে দেশে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সংস্থা, আর্থিক ভাঁড়ারে টান পড়েছে অনেকেরই, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র- চিন্তায় সকলেই নিজেদের রোজগার সম্পর্কে। সরকার থেকে ত্রাণ মিললেও সর্বত্র পৌছয়নি সেই ত্রাণ, কার্যতই অবস্থার অবনতি ঘটেছে। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে দেশের কৃষিক্ষেত্রে। তবে সরকার থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সর্বতোভাবে কৃষকদের পাশে থাকার। তাই কৃষকদের ত্রাণ সরবরাহের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় একটি ভারতীয় কৃষি পরিবহন কল সেন্টার প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু তাতে মেটেনি কৃষকদের সমস্যা, কারণ এই পরিস্থিতিতে অনেকে শ্রমিক পাচ্ছেন না ফসল সংগ্রহের জন্য, প্রস্তুত ফসল অনেকের ক্ষেতেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর যারা ফসল তুলেছেন তারা পড়েছেন অন্য বিপাকে। লকডাউনের কারণে মিলছে না ক্রেতা, ফসলের দামও ঠিকমতো পাচ্ছেন না তারা। দেশে অনেক সবজি ও ফল চাষী লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও চিত্র একই। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কয়েকটি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে আনারসের চাষ হয়। এই অঞ্চলগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত কম বেশি সকলেই। কিন্তু এর মধ্যে শিলিগুড়িতে আনারস চাষীরা তাদের ফসল অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করতে না পারায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সেখানকার চাষীরা জানিয়েছেন,“বর্তমানে আমাদের ফসলের কোন ক্রেতা নেই। অন্য সময়ে আমরা পণ্য দিল্লী, মুম্বই, মহারাষ্ট্র, আহমেদাবাদ, নেপাল, বিভিন্ন রাজ্যে রফতানি করি। তবে পরিবহণ মাধ্যম বন্ধ থাকায় এখন আমরা আমাদের পণ্য রফতানি করতে পারছি না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি”। তিনি আরও বলেন যে, “চাষ শুরু করার সময় আমাকে প্রায় ২-৩ লক্ষ টাকা লোণ নিতে হয়েছিল। তবে এখন আমি জানি না কীভাবে লোণ শোধ করব।" অন্য আর এক চাষী জানিয়েছেন যে, “আনারস প্রতি আগে ২০-২৫ টাকা পাওয়া যেত, তা এখন স্থানীয় বাজারে ৩-৪ টাকা, কোথাও বা ৮ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে”। এতে মাথায় হাত পড়েছে তাদের।
তারা জানিয়েছেন, কেউ ব্যাঙ্ক থেকে লোণ নিয়ে কেউ বা মহাজনের থেকে সুদে টাকা নিয়ে আনারসের চাষ করেছিলেন। চাষে এবারে ফলনও হয়েছিল যথেষ্ট, সমগ্র উত্তরবঙ্গে ফসলের পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার টন, লাভের প্রত্যাশায় ছিলেন তারা সকলেই। কিন্তু মহামারীর প্রকোপ বাড়তে থাকায় তাদের এই দুর্দশা।
শিলিগুড়ির বিধাননগরের খ্যাতি আনারস চাষের জন্যে। এখানে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সারা বছরই আনারসের চাষ হয়। শীতে ফলন কম হলেও গরমে এই সময়ে সবচাইতে বেশী ফলন হয়। তাই কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আনারস চাষীরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২ কোটি টাকা। এর ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে, তা জানা নেই তাদের।
স্বপ্নম সেন