জাফরান একটি অত্যন্ত মূল্যবান এবং ব্যয়বহুল পণ্য। এর সবচেয়ে বেশি উত্পাদন হয় ইরানে এবং উৎপাদন প্রতিযোগিতায় এর পরের স্থানেই রয়েছে ভারত। কাশ্মীরের জাফরান মশলা হিসাবে বিশ্বব্যাপী খ্যাত। এটি স্বাস্থ্য পুনরুজ্জীবক রূপে এবং প্রসাধনী ও ঔষধি ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে এটি যুক্ত এবং এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে তা সমৃদ্ধ করে। কাশ্মীরের জাফরানের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল –এর প্রাকৃতিক শোভা, গভীর-রক্তিম বর্ণ, উচ্চ সুগন্ধ, তিক্ত স্বাদ, রাসায়নিক মুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বৈচিত্র্য। এর স্বতন্ত্রতার উপর ভিত্তি করে এটিকে জিওগ্র্যাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। স্বীকৃতিটি আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। চিন্নারাজ জি. নাইড়ু, (ডেপুটি রেজিস্ট্রার অফ জি আই) বলেছেন, ‘কাশ্মীরের জাফরান অত্যন্ত মূল্যবান একটি পণ্য এবং জিআই ট্যাগের মাধ্যমে এটি রফতানির বাজারে আরও সুনাম অর্জন করবে’।
এটি বিশ্বের একমাত্র জাফরান যা ১,৬০০-১,৮০০ মিটার উচ্চতর এএমএসএল (সমুদ্রের স্তরের উপরে) পর্যন্ত উত্থিত হয়- এই বৈশিষ্ট্যই একে বিশ্বজুড়ে উপলব্ধ অন্যান্য জাফরানের প্রজাতি থেকে পৃথক করে তোলে।
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর প্রায় মধ্য এশিয়ান অভিবাসীরা কাশ্মীরে জাফরান চাষের প্রচলন করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে জাফরানকে ‘বহুকাম’ বলে উল্লেখ করা হয়।
কাশ্মীরের জাফরান রাসায়নিক মুক্ত অর্থাৎ জৈব এবং তিন ধরণের হয়:
১) ‘লাচ্ছা জাফরান’ – পরাগ রেণু ফুল থেকে পৃথক করা হয় এবং প্রক্রিয়াজাত না করে শুকানো হয়;
২) ‘মংরা জাফরান’ - পরাগ রেণু ফুল থেকে পৃথক করে রোদে শুকানো হয় এবং ঐতিহ্যগতভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়; এবং
৩) ‘গুছি জাফরান’ – এটি লাচ্ছা জাফরানের মতই পরাগ রেণু পৃথক করে শুকানো হয়, এয়ার-টাইট পাত্রে আলগাভাবে প্যাক করা হয়, তবে এর বিশেষত্ব হল পরে এই পরাগ রেণুর সাথে জাফরান একত্রে কাপড়ের সুতোর মাধ্যমে বেঁধে রাখা হয়।
জি আই ট্যাগের জন্য আবেদনকারী কৃষি অধিদফতর (কাশ্মীর বিভাগ) জানিয়েছেন যে, কাশ্মীরের জাফরান প্যাম্পোর এবং কিশতওয়ার-এ জন্মায়। কিশতওয়ার ‘দ্য ল্যান্ড অফ সাফায়ার অ্যান্ড স্যাফরন’ নামে পরিচিত। এছাড়া বুদগাম, শ্রীনগর, পুলওয়ামা খ্রেও, চিরার-ই-শরিফ এবং অন্যান্য কয়েকটি জায়গায়ও এই জাফরান জন্মায়।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)